বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ৪ দফা মেনে নেয়ার দাবি কামারুজ্জামানের

আপডেট: মার্চ ১১, ২০১৭, ১২:৩১ পূর্বাহ্ণ

১১ মার্চ, ১৯৭১ : বর্ষীয়ান জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীসহ নেতৃস্থানীয় রাজনীতি-বিদগণ বঙ্গবন্ধুর কার্যক্রমকে সমর্থন জানালেন। লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, শিল্পী সকলেই আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করলেন।
এদিন মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে অতিবাহিত হয়। বাংলার সাড়ে ৭ কোটি মানুষকে শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলন শুরু করার জন্য বঙ্গবন্ধু যে আহ্বান জানিয়েছিলেন, সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে জনগণ অত্যন্ত সুশৃংখলভাবে এই আন্দোলন চালিয়ে যায়।
এদিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সহযোগিতা প্রদান করে তা সাফল্যজনকভাবে অব্যাহত রাখার জন্য জনতাকে অভিনন্দন জানিয়ে বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, “অসহযোগ আন্দোলন এক নজিরবিহীন গতি পেয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের নামে জারিকৃত বঙ্গবন্ধুর নির্দেশাবলি পুরোপুরি মানা প্রতিটি ব্যক্তি নিজের পবিত্র দায়িত্ব মনে করেছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। সকল স্তরের মানুষ যে, উচ্চ দায়িত্ববোধের পরিচয় দিচ্ছেন তা সকলেরই অনুপ্রেরণার উৎস।’ জনাব তাজউদ্দিন এদিন আরো ১৪টি অতিরিক্ত নির্দেশের কথা ঘোষণা করেন।
মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এদিন টাঙ্গাইলে এক বিশাল জনসভায় বলেন, ‘স্বাধীনতার জন্য পূর্ব বাংলার জনসাধারণ এখন যেমন ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন-ইতিহাসে তা নজিরবিহীন। বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম এমনই শক্তিশালী হয়েছে যে, কেউই যে যত শক্তিশালী হোক না কেন-তাকে দমন করতে পারবে না।’
একাত্তরের এদিনের সকালে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান রাজশাহীতে এক বিরাট জনসভায় বক্তৃতাকালে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ৪ দফা দাবি মেনে নেয়ার জন্য পাকিস্তানের সামরিক সরকারকে পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘যারা বাংলাদেশকে উপনিবেশ মনে করে বাংলার জনসাধারণ আজ তাদের বিরুদ্ধে নজিরবিহীনভাবে ঐক্যবদ্ধ। বাংলার জনগণ আর সংখ্যালঘুদের নির্দেশের কাছে নতিস্বীকার করবে না।’
স্বাধীন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের চারনেতা নূরে আলম সিদ্দিকী, শাহজাহান সিরাজ, আ.স.ম. আব্দুর রব ও আব্দুল কুদ্দুস মাখন এক বিবৃতিতে হাবিব ব্যাংক, ইউবিএল, মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকের বিরুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানে অর্থ পাচারের অভিযোগ করেন।
সমগ্র বাংলাদেশে অসহযোগ আন্দোলনের চরম অবস্থায় ঢাকার নিযুক্ত জাতিসংঘের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি মি. উলফ আন্দোলনের প্রধান রূপকার বঙ্গবন্ধু মুজিবের সাথে সাক্ষাৎ করেন। বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘ কর্মচারীরা যতদিন সম্ভব বাংলাদেশেই অবস্থান করুন এই ইচ্ছাই ব্যক্ত করেন।
উলফ পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং পূর্বদিনের বিবৃতিতে উথান্ট সম্পর্কে উল্লেখের বিষয়টি তাঁর নিকট ব্যাখ্যা করেছেন।’ উল্লেখ্য, উথান্ট সর্বশেষ বার্তায় উলফকে ঢাকায় অবস্থানরত জাতিসংঘ কর্মচারীদের সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন। উলফ বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি এমন নয় যে, জাতিসংঘ কর্মচারীদের অন্যত্র অপসারণ করতে হবে।’
উলফ ছাড়াও এদিন পাঞ্জাবের ক্যাম্বেলপুরের কাউন্সিল লীগ এম.এন.এ পীর সাইফ উদ্দিন এবং পাঞ্জাবের আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহাম্মদ খুরশীদ বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করেন।
এদিন সিএসপি ও ইপিএস সমিতির পদস্থ বাঙালি অফিসারগণ অসহযোগ আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন এবং একদিনের বেতন প্রদান করেন।
ওদিকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে নির্বাচিত সংখ্যালঘু দলগুলোর প্রতিনিধিরা মওলানা মুফতি মাহমুদের সভাপতিত্বে জমায়েত হয়ে শেখ মুজিবের ৪ দফা দাবির প্রতি সমর্থন জানান। বৈঠকে একমাত্র কাইউম মুসলিম লীগ ছাড়া সবদল যথাক্রমে জমিয়াদুল উলেমা-ই-পাকিস্তান জামায়াতী ইসলাম, কনভেনশন মুসলিম লীগ ন্যাপ (ওয়ালী)-এর প্রতিনিধিরা এবং স্বতন্ত্র সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এসব নেতৃবৃন্দ সরকার গঠন এবং সংবিধান প্রণয়নের দায়িত্ব সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবকে দেয়ার আহ্বান জানান এবং মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠকের প্রস্তাব করেন।
এদিন কুমিল্লার কেন্দ্রীয় কারাগার ভেঙে কয়েদিরা পলায়নের চেষ্টা করলে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ৪ জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়। বরিশাল কারাগারেও এমনি এক ঘটনায় ২ জন কয়েদি নিহত ও ২০ জন আহত হয়।