বঞ্চিত করার অভিযোগে আওয়ামীপন্থী শিক্ষক সংগঠন থেকে রাবি অধ্যাপকের পদত্যাগ

আপডেট: জানুয়ারি ১৫, ২০২৫, ৯:২৪ অপরাহ্ণ

রাবি প্রতিবেদক


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তারকে অভিযুক্ত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ থেকে পদত্যাগ করেছেন ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মু. আলী আসগর। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী এবং আওয়ামীপন্থী সংগঠন প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের (হলুদ প্যানেল) স্টিয়ারিং কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন বরাবর তিনি পদত্যাগ পত্র প্রদান করেন।

এ বিষয়ে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, তাঁর পদত্যাগ নিয়ে আমার সাথে সরাসরি কোনো যোগাযোগ হয়নি। তবে আমি তার পদত্যাগপত্রটি ই-মেইলের মাধ্যমে পেয়েছি। পরবর্তী সভায় এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।

পদত্যাগপত্রে ওই অধ্যাপক উল্লেখ করেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার, রাবি প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ (হলুদ প্যানেল) থেকে মনোনিত উপাচার্য হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৭৩ লঙ্ঘনসহ হাইকোর্টের আদেশ অবমাননা করে। ফলে বৈষম্যমূলকভাবে আমাকে রাবি ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগে সভাপতি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তারের এই বিশাল অনিয়মের বিরুদ্ধে রাবি প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ নিষ্ক্রিয় থাকায় এবং সম্প্রতি রাবি প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সদস্য তথা শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর মো. হাবিবুর রহমান ও শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ওমর ফারুক সরকার কর্তৃক রাবি শিক্ষক সমিতির অর্ডিন্যান্স ও প্র্যাকটিস পরিপন্থীভাবে আমাকে বঞ্চিত করতে থাকায় আমি রাবি প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সদস্যপদ ত্যাগ করলাম।

এ বিষয়ে অভিযোগকারী অধ্যাপক ড. মু. আলী আসগরকে বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন।

সেখানে তিনি রাবির সদ্য সাবেক উপাচার্যকে স্বৈরাচারী ও শিক্ষক সমিতিকে দানব আখ্যা দিয়ে লিখেছেন, আমাকে রাবির আইন অনুযায়ী ক্রপ সায়েন্স বিভাগের সভাপতি নিয়োগ না দেওয়ায়, আমি হাইকোর্টে রিট পিটিশন করি এবং জয়লাভ করি। হাইকোর্টে দীর্ঘ মেয়াদি আইনি লড়াইয়ে আর্থিক সংকটে আমি বাড়ি বিক্রি করতে বাধ্য হই, তা সত্ত্বেও, আমাকে রাবি ক্রপ সায়েন্স বিভাগের সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়নি রাবির সদ্য পদত্যাগে বাধ্য হওয়া উপাচার্য প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার। প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার আমাকে ক্রপ সায়েন্স বিভাগের সভাপতি হতে তার শর্তের কাছে, আত্মসমর্পণ করতে বলেছিল। আমি আত্মসমর্পণ করি নাই বরং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণ ও সংস্কার কাজে বিভিন্ন অনিয়মের প্রতিবাদ করেছি।

তিনি আরও লিখেছেন, আমি আমার চিকিৎসার জন্য গত ৫ জানুয়ারি ও ১০ জানুয়ারি রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর কল্যাণ তহবিল থেকে লোন/অনুদান পাওয়ার জন্য আবেদন করি, যা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক অসুখ অবস্থায় অতীতে নিয়েছেন। কিন্তু আমাকে রাবি কল্যাণ তহবিল থেকে অর্থ দেওয়া হচ্ছে না। অনিয়ম/অসঙ্গতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাশুল দিচ্ছি। বেশ কিছু শিক্ষক জানেন, তারা নীরব। বাংলাদেশে প্রভাবশালীদের অনিয়মের প্রতিবাদ করা বিপদজনক, তার পরেও মরে গেলেও বিবেক বিক্রি করে নীরব থাকতে পারবো না।

এ বিষয়ে ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ড. এম আল বাকি বারকাতুল্লাহ বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে রাজি না। তবে তার এই বিষয়টি প্রফেসর আবদুস সোবহান স্যারের সময় থেকেই। সিন্ডিকেট কমিটিতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকায় সোবহান স্যার তাকে না দিয়ে আবুল কালাম আজাদ স্যারকে চেয়ারম্যান দিয়েছিল। আমার জানা মতে তার বিরুদ্ধে পরীক্ষাসংক্রান্ত অনিয়মসহ বেশ কিছু অভিযোগ ছিল।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ওমর ফারুক সরকার বলেন, আমরা এর সাথে কীভাবে অভিযুক্ত হতে পারি? উনি চেয়ারম্যান হবেন কি হবেন না, এটা সম্পূর্ণ প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। এখানে শিক্ষক সমিতির কোনো সম্পর্ক নেই।

অভিযোগের বিষয়ে রাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, আমি যা করেছি, তা লিগ্যাল সেলের পরামর্শ অনুযায়ীই করেছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে কিছু করিনি। আর আমি টেলিফোনে কাউকে ইন্টারভিউ দেয় না। এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ