সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।
আমানুল হক আমান, বাঘা (রাজশাহী)
খরস্রোতা বড়ালের তিনটি শাখা মুশা খা, চন্দনা ও ত্রিমোহীনি নদীর পানি শূন্য হয়ে পড়েছে। এসব নদী বর্তমানে অস্তিত্ব হারিয়ে গেছে। পানির অভাবে মানুষ পেশা হারিয়ে অনেকে পথে বসেছে। তবে সংসারের অভাবে অনেকে গ্রামগঞ্জে ছিটকাপড় ও হাড়ি পাতিল বিক্রি করছে। এলাকাবাসী নদীগুলো পুনঃখননের দাবি করেছেন। এদিকে বড়াল নদীর অস্তিত্ব বিলিন হয়ে যাচ্ছে।
এক সময় নদীগুলো ৬ মাস পানির নিচে থাকত। নদীতে নৌকা চলাচল করত। মাঝিদের কণ্ঠে ভেসে উঠত ভাটিয়ালি গানের সুর। নদীর ওপর নির্ভরশীল মৎস্যজীবীরা স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করত। বড়ালের শাখা মুশা খা, চন্দনা ও ত্রিমোহীনি নদী মরে হওয়ায় পাল্টে গেছে মানচিত্র।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বড়ালের শাখা মুশা খা, চন্দনা ও ত্রিমোহীনি নদী মৃত প্রায়। মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে এসব নদী। পদ্মা নদীর শাখা বড়ালের তিনটি শাখা নদী রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী এলাকা থেকে শাখা বের হয়েছে। এরমধ্যে আড়ানীর হালদার পাড়ার কড়ইতলা থেকে চন্দনা নদী প্রায় ২০ কিলোমিটার পূর্ব দিকে দিঘা বিলে মিশে গেছে। বর্তমানে এ নদীর কোনো অস্তিত্ব নেই। মুশা খা নদী জামনগরের ত্রিমোহীনি এলাকা থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার উত্তর দিকে ঝলমলিয়া এলাকায় মিলিত হয়েছে। এ নদীও প্রায় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে।
পাশে আরেকটি ত্রিমোহীনি নদী প্রায় ১৫ কিলোমিটির পশ্চিম দিকে নিমপাড়া বিলে মিলিত হয়েছে। এই নদীরও অস্তিত্ব নেই। নদী মরে যাওয়ায় আধুনিক সেচ সুবিধা থেকে হাজার হাজার মানুষের জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়েছে। নদীর ওপর নির্ভরশীল এইসব মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম হাহাকার।
আড়ানী মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ শাহাবাজ আলী বলেন, বড়ালের উপর অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ নির্মানের ফলে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বড়ালের শাখা নদীগুলোকে বাঁচিয়ে তুলতে পূণঃখননের মাধ্যমে পর্যাপ্ত পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি নদীগুলো পুনঃরুদ্ধারের জন্য বাঁধ অপসারন, তলদেশ খনন, ড্রেজিং মাধ্যমে উৎস মুখ খোলাশা করতে হবে। দ্রুত সমাধান করতে না পারলে মরুভূমিতে পরিনত হতে পারে বলেও তিনি জানান।
চন্দনা নদীর ধারের বসবাসকারী পরি কুমার হালদার বলেন, এই নদীতে এক সময় মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে সংসার পরিচালনা করত আমার বাবা, দাদারা। নদীগুলো শুকিয়ে যাওয়ার কারনে মাছ ধরা পেশা পরিবর্তন করে হলুদের ব্যবসা করছেন।
আড়ানী মৎস্যজীবি সমবায় সমতির সভাপতি রঞ্জিত কুমার হালদার ও সাধারণ সম্পাদক সুজিত কুমার হালদার বলেন, আমরা পেশাদার মৎস্য শিকারী। এই এলাকায় প্রায় চার শতাধিক পরিবার মৎস্য শিকারী ছিল। তারা মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাত। বর্তমানে অধিকাংশ পরিবার পেশা পরিবর্তন করে কেউ বাদাম বিক্রি, কেউ বা ছিটকাপুড়ের ব্যবসা, আবার কেউ গ্রামে গ্রামে হাড়ি পাতিল বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছে। এই তিন নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করত। নদীগুলো মরে যাওয়ায় বাজারের আড়ৎ থেকে মাছ কিনে বিক্রি করে যে, টাকা আয় হয়, তা দিয়ে কোন রকম দিন পার করছি।
খুর্দ্দোবাউসা গ্রামের মিলন নামের এক চাষী বলেন, এই নদী মরে যাওয়ার কারনে জমিতে সেচ দেওয়া যায় না। ফলে জমিতে গভীর নলকুপ বসিয়ে নিয়েছি। এই নলকুপ থেকে জমিতে সেচ দিয়ে ফসল রোপন করছি। এছাড়া নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারনে এলাকায় দেশীয় জাতের মাছের আকাল দেখা দিয়েছে।
আড়ানী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, এই নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারনে দেশী জাতীয় মাছ প্রায় এলাকা থেকে হারিয়ে গেছে। তবে নদীগুলো পূণঃখননের জন্য স্থানীয় মন্ত্রী মহদোয়কে অবহিত করা হয়েছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাহাবুল ইসলাম বলেন, এই তিনটি নদী বর্তমানে অস্তিত্ব নেই। অনেক আগেই মরে গেছে। তবে চন্দনা নদী গত অর্থ বছরে কিছু অংশ দিঘা এলাকায় পুনঃখনন করা হয়েছে। এতে ওই এলাকায় মানুষ দেশী জাতীয় মাছ কিছুটা ভোগ করতে পারছে। পুনরায় অন্যান্য এলাকায় পর্যায়ক্রমে পুনঃখননের জন্য উদ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।