শনিবার, ১ এপ্রিল, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
এমদাদুল হক দুলু, বদলগাছী
বদলগাছীতে কৃষি জনি নষ্ট করে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন ইটভাটা -সোনার দেশ
নওগাঁর বদলগাছীতে অবৈধ ভাবে কৃষি জমির উপর গড়ে উঠেছে নতুন নতুন ইটভাটা। প্রতি বছর নষ্ট হচ্ছে শত শত বিঘা কৃষি জমি। এতে কৃষি জমি হারাচ্ছে উর্বরতা। নতুন ইটভাটা বন্ধে এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও ঝাড়– মিছিল করেছে।
এলাকাবাসী জানায়, উপজেলার মিঠাপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেন ও তার ছোট ভাই ছানোয়ার হোসেন কোল্ড স্টোরেজ তৈরী করার নামে আধাইপুর গ্রামে ৭ বিঘা জমি কেনেন। এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে এলাকাবাসী জমি তাদের কাছে বিক্রি করে। পরবর্তীতে সেখানে কোল্ড স্টোরেজের পরিবর্তে ইটভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে। ইটভাটা নির্মাণ কাজ বন্ধে এলাকাবাসী গত ৩০ মে নওগাঁ জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারক লিপি প্রদান করে বিভিন্ন দফতরে অনুলিপি প্রদান করেন। এ ঘটনায় নওগাঁ জেলার ইটভাটা তদন্ত কমিটির আহবায়ক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) থেকে নতুন ইটভাটা নির্মাণে কোন কাগজপত্র বা অনুমতি পত্র আছে কিনা তা দেখতে চেয়ে ইটভাটা কাজ বন্ধ রাখার আদেশ দেন। আধাইপুর ছাড়া ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে কৃষি জমির উপর নতুন নতুন ইটভাটা গড়ে তোলা হচ্ছে। এ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। ইটভাটায় মাটি বালি বেচা কেনার কারণে রহিমপুর, পশুরামপুর কসবা গ্রামে কমপক্ষে ৫ শ বিঘা জমি খাল-খন্দে পরিনত হয়েছে। প্রায় ২ শতাধিক বিঘা জমির মাটি বালি বিক্রি করে পুকুর সাদৃশ্য খনন করলেও তাতে কোন পানি থাকে না। এক শ্রেণির ভুমি দস্যুরা সাধারণ মানুষকে অর্থের লোভ দেখিয়ে কৃষি জমির মাটি কেনা বেচা করেছে। কৃষি জমির স্টপ সয়েল বিক্রিতে উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে শত শত বিঘা কৃষি জমির উর্বরা শক্তি হারাতে বসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে মিঠাপুর, পাহাড়পুর , আধাইপুর ও বদলগাছী ইউনিয়নে। পশুরামপুর গ্রামের মনির সোনার জানান, তার বাড়ির নিচে মাটি বিক্রি করে বিশাল গর্ত করায় তার বাড়ি এখন হুমকির মুখে পড়েছে। বাধা দিয়ে কোন লাভ হয়নি।
রহিমপুর গ্রামের সাবেক মেম্বার মোশারফ হোসেন বাবলু, খোজাগাড়ী গ্রামের সহিদুল ইসলাম, উত্তর পকুরিয়া গ্রামের নূরনবী জানান, ইটভাটায় মাটি বিক্রি ও মাটি বহনকারী ট্রাক যেভাবে রাস্তাঘাটে চলাচল করে তা দেখে মনে হবে মাটি কেনা বেচার হলি খেলা চলছে। মাটি বহনকারী ট্রাকের বেপরোয়া চলাচলে পথচারীদের চলাচল ব্যহত হয়ে পড়ে। ধুলো বালি উড়ে মেঘের মত ঢেকে যায় রাস্তা ঘাট । এতে জনস্বাস্থ্যে হুমকীর মুখে পড়ে। প্রশাসনের কোনো নজর নেই সেদিকে। অপরদিকে মাঝে মধ্যেই খবর আসে ইট ভাটার ধোয়ায় আক্রান্ত হয়েছে শত শত বিঘা ফসল ও গাছপালা। তার পরেও থেমে নেই অবৈধভাবে ইটভাটা নির্মাণের কাজ। চলতি বছরে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ৬টি নতুন ইটভাটা নির্মাণ কাজ চলছে। এর মধ্যে এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে আধাইপুর নতুন ইটভাটার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে নওগাঁ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)।
মিঠাপুর বাবুর ইটভাটা, খাদাইল আইউব হোসেনের ইটভাটা, ঝাড়ঘরিয়া এনামুলের ইটভাটা, বিষ্ণুপুর হাজির ইটভাটাসহ ৬টি ইটভাটা নির্মাণ কাজ অব্যহত রয়েছে। এ সব ইটভাটার মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে নতুন ইটভাটা নির্মাণে কারো কোনো অনুমতি পত্র নেই। আধাইপুর ইট ভাটার মালিক মিঠাপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেন বলেন আমার নির্মানাধীন ইট ভাটার নির্মান কাজ স্থগিত করা হয়েছে। অথচ এই উপজেলার আরো যে সব নতুন ইট ভাটা রয়েছে সে সব ভাটার নির্মাণ কাজ অব্যাহত রয়েছে এটা আইন পরিপন্থী। এই উপজেলায় ২৩/২৪ টি ইটভাটা রয়েছে এখনও গড়ে উঠছে নতুন নতুন ইটভাটা। কৃষি সম্প্রসারন অধিদফতরের হিসাব মোতাবেক এই উপজেলার মোট আয়তন ৫২ হাজার ৪৯৭ একর, মোট আবাদি কৃষি জমির পরিমান ৪০ হাজার ৯৭০ একর।
পরিসংখ্যান সূত্র মতে, উপজেলার মোট জনসংখ্যা ২ লাখ ১ হাজার ৩৪২ জন। মোট পরিবার সংখ্যা ৫৬ হাজারের বেশি। সে অনুসারে এই উপজেলার মোট আয়তন বা জমির পরিমানের তুলনায় জনসংখ্যার ঘনত্ব অনেক বেশী। তার পরেও কৃষি জমি রক্ষনা বেক্ষনের কোন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেই। এ অবস্থায় কৃষি জমি নষ্ট করে যেভাবে চলছে পুকুর খননসহ গড়ে উঠছে নতুন নতুন ইট ভাটা এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ৩০ বছরের ব্যবধানে মারাত্নক ভাবে কৃষি জমি সংকটের মুখোমুখি হতে হবে উপজেলাবাসীকে। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান আলীর সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান কৃষি জমির উপর যে ইটভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে তা উর্ব্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে নবাগত ইউএনও মাসুম আলী বেগ জানান, আমি নতুন এসেছি। বিষয়টি খেঁাঁজখবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।