বন্ধন

আপডেট: ডিসেম্বর ২২, ২০২৩, ১২:০৬ পূর্বাহ্ণ

সালাম হাসেমী

সিপন ফেসবুকে সাদিয়ার ছবি পায় আর ছবির নিচে পায় তার মোবাইল নম্বর। সে নম্বরটা সিপন সেভ করে রাখে আর লাইক বাটনে একটা চাপ দিয়ে রাখে। এভাবেই প্রথমে তারা ফেসবুক বন্ধু হিসাবে পরিচিতি হয়। একদিন সাদিয়া তার ফোনের ইমুতে সিপনকে কল দেয়, ‘তুমি কি আগামীকাল বোটানিক্যাল গার্ডেনে একটু আসতে পারবে ? সরাসরি একটু দেখা হতো।’ – আসতে পারবো, তবে আমি তোমাকে চিনতে পারবো কিভাবে? – আমার পরিধানে থাকবে আকাশি রঙের শাড়্ এিবং খোঁপায় গোঁজা থাকবে রজনীগন্ধার মালা। হাতে, গলায় থাকবে শাড়ির সাথে ম্যাচ করা চুড়ি, গলায় গহনা ও পায়ে জুতা।

-আর তোমার গায়ে কেমন পোশাক থাকবে ?
-আমার গায়ে থাকবে তোমার শাড়ির রঙে ম্যাচ করা শার্ট, জিন্সের পান্ট ও মাথায় হ্যাট। পরের দিন যথা সময় বোটানিক্যাল গার্ডেনে এসে তার মোবাইল ফোন বন্ধ করে একটা গাছের আড়ারে লুকিয়ে থাকলো সিফন। কিছুক্ষণ পর সাদিয়া আসলো সেই বোটানিক্যাল গার্ডেনে। এসে চারদিকে তাকালো কোথাও সিপনকে দেখতে পেল না। ফোন করল কিন্তু ফোন বন্ধ। ভীষণ রেগে গিয়ে এদিক ওদিক কিছুক্ষণ খোঁজা খুঁজি করে ন্ াপেয়ে সিপন যে গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে আাছে সে গাছের বিপরীত পাশে ঘাসের বুকে বসে রেগে ফুলতে লাগল। ঠিক সেই মুহূর্তে সিপন গাছের আড়াল হতে এসে সাদিয়ার দু’চোখ তার দুহাত দিয়ে আটকিয়ে ধরে বলল ,‘বলতো আমি কে? ’ -অনুমান যদি ভুল না হয় তুমি সিপন।
-তুমি কিভাবে বুঝলে আমি ‘সিপন’? -এ মুহূর্তে তুমি ছাড়া এমন দুষ্টামি আর কে করবে ?

দুজনে হাত ধরে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে ঘাসের বুকে বসে পড়ল। সিপন দুটো কোমল পানীয়র বোতল কিনে এনে একটা কিনে একটি সাদিয়াকে দিলো আর একাটা নিজে খেতে লাগল। বোটানিক্যাল গার্ডেন ঘুরে দুজনে গেল একটা চাইনিজ রেস্টেুরেন্টে। চাইনিজ খাওয়া শেষ করে প্রত্যেককে তাদের নিজ নিজ আবাস স্থলে চলে গেল। এ ভাবে বিভিন্ন সময় আলাপ পরিচয় করে তাদের মধ্যে ভালোবাসা হলো। এ ভালোবাসা দীর্ঘদিন চলার পরে সাদিয়া একদিন সিফনকে বিয়ের প্রস্তাব দিলো। সিপন তার প্রস্তাবে সাঁয় দিলো। তারা বিয়ে করে স্বামী-স্ত্রী রূপে দশ বছর সংসার করলো। দশ বছর চলে গেলো কিন্তু তাদের ঘরে ফুটফুটে চাঁদের মত কোন সন্তান এলো না। একটা সন্তানের আশায় বিভিন্ন পীর, ফরির, দরবার, ধন্না দেওয়ার কোনো রকম বাদ দিলো না। দেশ- বিদেশ কোথাও গিয়ে তাদের মনের আশা পূর্ণ হল না। এর পর তারা আধুনিক বিজ্ঞান চিকিৎসার দিকে ঝুঁকলো। ডাক্তারের কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। আর সে মতো তারা ডাক্তারের কাছে গেল। ডাক্তার তাদের দুজনকেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা বলল। কিন্তু ফলাফল খুব একটা ভালো আসলো না। দুঃসংবাদের বোঝা গিয়ে পড়লো সাদিয়ার ঘাড়ে। ডাক্তার সাফ জানিয়ে দিলেন, যে, সাদিয়াই বন্ধা। তার ওভারি সন্তান ধারণে অক্ষম। ডাক্তারের রিপোর্ট দেখার পর সিপনের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।

তৎক্ষণাৎ সিফন সিদ্ধান্ত নিল যে সে সাদিয়াকে তালাক দিয়ে সে এবার দ্বিতীয় বিয়ে করবে। এ খবর শোনার পর সাদিয়ার মুখ কালো হয়ে গেল। সে সিপনের দিকে আড় চোখে তাকালো। আত্মসম্মান আর অক্ষমতার লজ্জায় সে কখনো তার সামনে আসে না। সিপনকে খাবার-দাবার পোশাাক পরিচ্ছদ ও সব কিছুই এগিয়ে দেয় কাজের বুয়া রহিমা খালা। গোপনে সে সিপনের চোখের আড়ালে, চোখের জল ফেলে নিঃশব্দে কাঁদে আ্র এভাবেই চলতে থাকে তার জীবন। এভাবে দুদিন পার হওয়ার পর একদিন সিপন রাহিমা খালাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারে যে, সাদিয়া মনের দুঃখে পাশের কক্ষে শুয়ে শুয়ে চোখের জল বিসর্জন দিচ্ছে। তখন সিপন দ্রুত পায়ে হেঁটে সাদিয়ার কক্ষে প্রবেশ করে। তাকে বিছানা হতে তুলে বসিয়ে চোখের অশ্রু মুছিয়ে সান্ত¦না দিয়ে বলে, ‘আমাদের ভাগ্যে সন্তান নাই তাই আমাদের সন্তান হয় নাই, সে জন্য দুঃখ করে কোন লাভ নেই । সবই রবের ইচ্ছা। চোখের জল ফেলার কথা ভুলে পোশাক বদল করে চলো আমরা হাতির ঝিল হতে বেড়িয়ে আসি। তাতে মনের দুঃখ কিছুটা হলেও দূর হবে। ক্ষণিকের জন্য হলেও কিছুটা শান্তি পাওয়া যাবে।

কিছুক্ষণের মধ্যে তৈরি হয়ে ওরা হাতির ঝিলের দিকে রওয়া হলো। দেখতে দেখতে তারা হাতির ঝিলে পৌঁছে গেল। হাতির ঝিলে তারা ঘুরে বেড়াতে লাগল। ফুচকার দোকানে বসে ফুচকা খেলো। ঘুরে ঘুরে খুব মজা করলো। শেষে সন্ধ্যার দিকে তারা চাইনিজ হোটেলে গিয়ে চ্ইানিজ খাবার খায়। খাওয়া শেষে রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে সাদিয়াকে সিপন বলল, -আমাদের একটা বাচ্চা দত্তক আনলে হয় না ? -হয় । তবে কোথায় পাবো ?
-আমি চানখার পুলের বস্তিতে একটি পুত্র সন্তানের সন্ধান পেয়েছি। চলো সে বস্তিতে গিয়ে বাচ্চাটাকে নিয়ে আসি। সে বাচ্চাটাকে আমরা নিজের সন্তানের মত লালন পালন করর। তা হলে আমাদের কোন দুঃখ থাকবে না। এবার ( মিষ্টি হেসে ) সাদিয়া বলল, – চলো গিয়ে নিয়ে আসি।

ওরা দুজনে চানখার পুল বস্তি হতে বাচ্চাটাকে নিয়ে সরাসরি তাদের বাসায় এলো। সাদিয়াা বাচ্চাটাকে তার কোলে তুলে পরপর তিনটি চুমু খেয়ে তার নিজ দুহাতের ওপর কয়েকটি দোল দিয়ে ‘সোনা দুলি, যাদু দুলি, দোলে সোনা মনিরে।’ গানের কলি গেয়ে সিপনকে বলল, ‘আমাদের সোনা মনির নাম রাখব কি বলো তো ?’ সিপন সাদিয়ার চোখের পানে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কিছু একটা চিন্তা ভাবনা করে পুলকিতো মনে হাসতে হাসতে বলল, ‘আমাদের সোনামনি যেহেতু আমাদের ভালোবাসার মধ্যে কোন ছেদ পড়তে বা বিচ্ছেদ ঘটে যাওয়ার আগেই আমাদের ভালোবাসা অটুট রেখেছে। আমাদের ভালোবাসায় নতুন বন্ধন সৃষ্টি করেছে বলে ওর নাম রাখাতে চাই ‘বন্ধন’ তুমি কি বলো’ ? -‘নামটি বড় ভালোই হয়েছে ’ বলল সাদিয়া। অতপর বাচ্চাটাকে তার কোলের মধ্যে কয়েকটি দোল দিয়ে বাচ্চাটাকে ‘বন্ধন ! বন্ধন !! বন্ধন !!! বলে ডাক দিয়ে সিপনকে বলল , ‘দেখো বাচ্চাটাকে বন্ধন বলে ডাক দিলে খুব খুশি হয়। তখন সিপন বাচ্চাটাকে কোলে নেওয়ার জন্য হাত বাড়িয়ে দিলে সাদিয়া তাকে বাচ্চাটা দিতে চায় না। বলে যে, বন্ধন বাবা আমার একার আমি আমার বাবাবে তোমার গেলে দিব্ না। বাচ্চাটা সরিয়ে নেয়। তবু সিপন জোর করে বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে চুমু খেয়ে গান ধরলো, ‘বন্ধন সোনা চাঁদের কণা মায়ের কোলে দেব না, বাবার কোল ছেড়ে বন্ধন আর কোথাও যাবে না।’ গান শেষে সাদিয়া বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে খাওয়াতে গেল। ওদিকে সিপন ক্যাসেট অন করে দিল তাতে বাজতে লাগল ‘ আয় খোকা আয়…