বন্যা চোখ পাকাচ্ছে ভীষণ || আসুন, বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াই

আপডেট: আগস্ট ১৬, ২০১৭, ১:০৩ পূর্বাহ্ণ

চলতি মৌসুমের দ্বিতীয় দফার বন্যায় এ পর্যন্ত ২০ জেলার পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ৩৯০ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া জানিয়েছেন। তবে গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা ১৫ লাখ ছড়িয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে হাজার খানেক, যেগুলোতে এখন আর মানুষের ধারণক্ষমতাও নেই। বানের জল ধেয়ে যাচ্ছে আরও নতুন এলাকার দিকে। খোদ কর্মকর্তারাই বলছেন, এবারের বন্যার ভয়াবহতা এর আগের বন্যাগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর মতে বন্যা পরিস্থিতির বর্ণনা মতে উজানের দেশ চিন, ভারত, নেপাল ও ভুটানে মারাত্মক বন্যার বিষয়টি মাথায় রেখেই সরকার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে।
সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী মাঝে কয়েকদিন বিরতি দিয়ে অগাস্টের শুরু থেকে দ্বিতীয় দফার এই বন্যা শুরু হয়, যাতে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার মানুষ এরইমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৯০টি পর্যবেক্ষণ পয়েন্টের মধ্যে ৬৯টিতে সোমবার সকালেও পানি বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত ছিল। এর মধ্যে ধরলা, তিস্তা, যমুনেশ্বরী, ঘাঘট, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ধলেশ্বরী, পুনর্ভবা, টাঙ্গন, আত্রাই, সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, খোয়াই, যদুকাটা, সোমেশ্বরী ও কংস বিপদসীমার উপরে বইছে।
দুর্গত জেলাগুলোর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। রেলপথে সারা দেশে থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে গেছে দিনাজপুর জেলা।
মন্ত্রীর দেয়া তথ্য মতে দুর্গত হয়েছে এবং হতে পারে এমন ৩৩টি জেলায় ১০ হাজার ৬৩০ মেট্রিক টন চাল ও তিন কোটি ১০ লাখ টাকা ইতোমধ্যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় রোববার মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) এবং সংশ্লিষ্ট মাঠ পর্যায়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করে তাদের কর্মস্থল ত্যাগ না করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বন্যা পরিস্থিতির যে তথ্য-উপাত্ত সংবাদ মাধ্যমে এসেছে তাতে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে। অবশ্য বিষয়টি নিয়ে সরকার তৎপর আছে। কিন্তু একটি বন্যার ধকল কেটে ওঠার আগেই দ্বিতীয় দফায় বন্যা অনেকটা বেকায়দায় ফেলেছে। পরিস্থিতির আরো অবনতি হলে ক্ষতির পরিমাণ যে বাড়বে তা বলাই বাহুল্য। সরকার বলছে তাদের প্রস্তুতি রয়েছে। এখন পর্যন্ত সরকার একাই পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে। কিন্তু বিষয়টি সরকারের এককভাবে সামলানো কঠিন হতে পারে যদি বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতেই থাকে। বন্যাকবলিত এলাকার লোকজন নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা, তাদের খাদ্য, পানীয় জল, স্বাস্থ্যসেবার মত জরুরি বিষয়গুলো সামলানো কঠিন হয়ে পড়তে পারে। এর জন্য ব্যক্তি ও বেসরকারি উদ্যোগ খুবই প্রয়োজন। রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ ব্যাপারে দ্রুত এগিয়ে আসতে পারে। দুর্যোগকালীন দেশের মানুষের সাহায্য- সহযোগিতায় হাত প্রসারিত করার ঐতিহ্য আমাদের রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। নিশ্চয় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ চলমান দুর্যোগ মোকাবিলায় পূর্বের মতই সফল হওয়া যাবে। আসুন, আমরা বন্যার্তদের পাশি দাঁড়াই।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ