সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৯ পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় দমনে কার্যকর ব্যবস্থা নিন
ভিনদেশী বিষাক্ত আগাছা পার্থেনিয়াম বিষ ছড়াচ্ছে খাদ্যভান্ডার খ্যাত রাজশাহী অঞ্চলে। প্রতিকূল আবহওয়ায় ঠিকে থাকতে পারা এই আগাছা বরেন্দ্রের রুক্ষ আবহাওয়াকে পুঁজি করে খুব সহজেই এ অঞ্চলে বিস্তার ঘটিয়েছে। যা এ অঞ্চলের প্রাণ-প্রকৃতির জন্য চরম হুমকি। সুতরাং এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, কৃষি দপ্তরসহ কৃষকদের এগিয়ে আসতে হবে।
প্রায় দুই দশক ধরে এ অঞ্চলে বিস্তার ঘটা এই ক্ষতিকর আগাছা পুরোপুরি নির্মূল অসম্ভব বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যা এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য অশনি সংকেত। আগ্রাসী এই আগাছার বীজের ক্ষমতা, মাটির নিচে ১২ বছর ধরে সুপ্ত থাকার ক্ষমতা, কড়া রোদ-খরা তার জন্য উপযোগী পরিবেশ হওয়াসহ ফসলের পুষ্টি কেড়ে খাওয়ার দক্ষতার কাছে মাঠ পর্যায়ের চাষীরা এরইমধ্যে ধরাশয়ী হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। কেননা উত্তরোত্তর এই আগাছা তার বিস্তার ঘটনাতে অকল্পনীয় সফলতা দেখিয়েছে। যা আমাদের জন্য ঝুঁকির।
গবেষক, কৃষিবিদদের মতে, দেশে দুই দশক আগেও বিষাক্ত আগাছা পার্থেনিয়ামের অস্তিত্ব ছিল না। কিন্তু প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে একটু একটু করে দেশের উত্তরাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। যা এখন আগ্রাসী রুপ নিয়েছে। এখন সীমান্ত ঘেঁষা অন্তত ৩৫টি জেলার ২৫ ধরনের ফসলের খেতে বিস্তার ঘটেছে এ আগাছার। বরেন্দ্র এলাকার কৃষিতে এ আগাছার মারাত্বক প্রভাব দেয়া যাচ্ছে। বেগুন, টমেটো, মরিচের মতো খেতে প্রভাব বিস্তার করে উৎপাদনে ও গুণগত মানে যেমন নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করছে তেমনি চাষীর স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিও তৈরি করছে।
আমাদের বরেন্দ্রের কৃষি এখনো শ্রমিক ও চাষী নির্ভর। তারা সরাসরি জমিতে শ্রম দেন। আগাছা নির্মূলে অনেক সময় হাতের ব্যবহার করেন। এক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতাও দেখা যায় না। অজ্ঞতাবশত পার্থেনিয়ামের সংম্পর্শে এসে ‘সেস্কুটার্পিন ল্যাকটোন’ জাতীয় বিষাক্ত পদার্থের মুখোমুখি হচ্ছেন। অজান্তেই নানা চর্মরোগসহ হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও জ্বর ও অ্যালার্জির যন্ত্রণায় ভুগছেন। পশু-ছাগল ঘাসের পরিবর্তে পার্থেনিয়াম খাচ্ছে। পাখি খাচেছ পার্থেনিয়ামের বীজ। যা প্রাণি স্বাস্থ্যকে চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। পাশর্^বর্তী দেশ ভারতেও পার্থনিয়াম নিয়ন্ত্রণে সরকার নানা পলিসি নিয়েছে।
কিন্তু এমন বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে এ অঞ্চলের অধিকাংশ কৃষি ও প্রাণী কর্মকর্তার এ বিষয়ে স্পষ্ট জ্ঞান না থাকা খুবই দুঃখজনক। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের মাঝেও এ সর্ম্পকে স্পষ্ট জ্ঞান নেই। যা পার্থেনিয়ামের আগ্রাসী রুপকে আরও বিস্তৃতি দিবে। যা দেশের কৃষি, জনস্বাস্থ্য, প্রাণী স্বাস্থ্য ও জলবায়ুকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। সুতরাং এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে ।