বরেন্দ্র অঞ্চলে আমন কাটা-মাড়াই শুরু লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বাড়তি উৎপাদনের সম্ভাবনা

আপডেট: অক্টোবর ২০, ২০১৬, ১১:৪৩ অপরাহ্ণ


একে তোতা, গোদাগাড়ী
বরেন্দ্র অঞ্চলে শুরু হয়েছে রোপা-আমন ধান কাটা-মাড়াই। আবহাওয়া অনুকূলে, রোগ বালাই ও পোকা-মাকড় দমন করায় ভালো ফলন হচ্ছে। বিঘায় ১৭ থেকে ২০ মণ পর্যন্ত উৎপাদন হচ্ছে।
গোদাগাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসমে উপজেলায় ২৫ হাজার  ৩৯৫ হেক্টর জমিতে রোপা-আমন চাষ হয়েছে। দেশি জাত স্বর্ণা, ভারতীয় জিরাশাইল ছাড়াও বাংলাদেশ ধান গবেষণার (ব্রি) উদ্ভাবিত খরা সহনশীল ও উচ্চফলনশীল ব্রি-২৮, ব্রি-৩৯, ব্রি-৪৯, ব্রি-৫১, ব্রি-৫২, ব্রি-৫৬, ব্রি-৫৭, ব্রি-৬২ ধান বেশি চাষ করেছে।
ধান চাষ নিয়ে কৃষকরা জানান, এইসব জাতের ধান চাষে সেচ ও রাসায়নিক সার কম প্রয়োজন হয়। রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণও কম হওয়ায় সহজেই দমন করা যায়। এতে করে গত কয়েক বছর ধরে ধানের ফলন ভালো হচ্ছে। উপজেলার ইশ্বরীপুরের কৃষক আহাদ আলী ১০ বিঘা জমিতে উচ্চফলনশীল জাতের রোপা-আমন ধানের চাষ করেছে। এক বিঘা জমিতে ধান চাষে তার খরচ হয়েছে ৪ হাজার টাকা। দুই বিঘার জমির ধান কাটা-মাড়াই শেষ হয়েছে। এক বিঘায় উৎপাদন হয়েছে ১৯ মণ ধান।
ইশ্বরীপুরের আরেক কৃষক কংরেশ টুডু বলেন, জমিতে আমনের চারা রোপণ করার পর থেকে কৃষি সম্প্রসারণ মাঠ পর্যায়ের  কর্মকর্তারা রোগ বালাই ও পোকামাকড় বিশেষ করে বাদামী ফড়িং পোকা সম্পর্কে সচেতন করে কৃষকদের। আমনের জমিতে রোগ বালাই পোকা মাকড় দেখামাত্রই কীটনাশক স্প্রে করে দমণ করা হয়েছে। এজন্য আমনের ফলন পুরোপুরি ভাবে পাওয়া যাচ্ছে। কৃষক কংরেশ ৫ বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষ করেছেন। তার ১ বিঘা জমিতে চাষকৃত ব্রি-৪৯ ধানের উৎপাদন হয়েছে ২০ মণ।
গোদাগাড়ী ও তানোর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, প্রতি বছর বাদামী ফড়িং পোকা আক্রমণে ধানের অনেক ক্ষতি হয়। কিন্তু চলতি মৌসুমে বাদামী ফড়িং পোকা ও বিভিন্ন রোগ বালাই দমন পদ্ধতি জানানো ও এ সম্পর্কে কৃষকদের মাঝে সচেতনতা গড়ে তোলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। ব্লকে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সার্বক্ষণিকভাবে মাঠে থেকে কৃষকদের পরামর্শ ও কারিগরী সহযোগিতা দিয়েছেন। এছাড়াও উপজেরা কৃষি কর্মকর্তা প্রতিদিন এলাকা অনুযায়ী কৃষক সমাবেশ করেছেন।
এ বিষয়ে গোদাগাড়ী কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তৌফিকুর রহমান বলেন, এ বছর আমন চারা জমিতে রোপণ করার পর থেকে আবহাওয়া ছিল উপযোগী। সময়মতো সেচ ও সার জমিতে প্রয়োগ করা ছাড়াও রোগ বালাই ও বাদামী ফড়িংসহ  পোকামাকড় সম্পূর্ণ দমন করা গেছে। এতে করে এ অঞ্চলে বিগত বছরগুলোর চেয়ে রোপা-আমনের ফলন বেশি হবে। চলতি আমন মৌসুমে গোদাগাড়ী উপজেলায় ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৮ হাজার ৩১২ মেট্রিক টন। ফলন ভালো হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়ে আরো ১৫ হাজার মেট্রিক টন বেশি ধান উৎপাদন হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এদিকে গোদাগাড়ী, তানোর ছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, গোমস্তাপুর, ভোলাহাট, নওগাঁর মহাদেবপুর, নিয়ামতপুর, সাপাহার, পোরশাসহ গোটা বরেন্দ্র অঞ্চলের রোপা-আমনের ভালো ফলন পেয়ে লাভবান হবে বলে কৃষকরা জানান।