বর্ষার বাহন ডিঙি নৌকা।। চলনবিলে জমে উঠেছে নৌকা তৈরি-বিক্রি

আপডেট: জুলাই ২৮, ২০১৭, ১২:৪৪ পূর্বাহ্ণ

গুরুদাসপুর প্রতিনিধি


বর্ষা মৌসুমে গ্রামের মেঠো পথ, খাল-বিলগুলো পানির নিচে হওয়ায় চলাচলের ক্ষেত্রে প্রধান বাহন হয়ে উঠেছে ডিঙি নৌকা। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় চলনবিলে জমে উঠেছে নৌকা তৈরি-বিক্রি -সোনার দেশ

বর্ষা মৌসুম। চলনবিলে থৈ থৈ পানি। গ্রামের মেঠো পথ, খাল-বিলগুলো পানির নিচে। চলাচলের ক্ষেত্রে প্রধান বাহন ডিঙি নৌকা হওয়ায় বাড়ছে চাহিদা। সেই চাহিদা মেটাতে নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত মিস্ত্রিরা। চলনবিলের চাঁচকৈড়ে বসেছে ডিঙি নৌকা তৈরি-বিক্রির বিশাল হাট।
আশপাশের প্রায় দশটি উপজেলা থেকে ক্রেতা এসেছেন এ হাটে নৌকা কিনতে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে নৌকার হাট। এখানকার তৈরি নৌকা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।
সরেজমিনে গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড় হাট ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসেছে নৌকা বিক্রির হাট। পাশাপাশি প্রায় ২০টি কারখানায় চলছে নৌকা তৈরির কাজ। কাঠহাট মোড় হতে চৈতালী হাট মোড় হয়ে শিক্ষাসংঘ পর্যন্ত এলাকায় পাকা সড়কের দুই পাশে নৌকাগুলো সারি সারি করে রাখা হয়েছে বিক্রির জন্য। ক্রেতারা ইচ্ছামতো দেখে শুনে নৌকা কিনছেন।
চলনবিলের সিংড়া থেকে আসা ক্রেতা সানজু ও শাহজাহান জানান, গত বছরের চেয়ে এবার চলনবিলে পানি বেশী। নিচু এলাকার সড়কগুলো পানিতে ডুবে গেছে। এ গ্রাম থেকে সে গ্রামে যেতে এসব ডিঙি নৌকার প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে মাছ ধরার কাজে বেশি দরকারি এসব ডিঙি নৌকা।
সিরাজগঞ্জের তাড়াশের সাচানদিঘী গ্রাম থেকে এসেছেন মোশারফ হোসেন ও নাদো-সৈয়দপুরের আবদুুল মমিন ও রাসেল জানালেন, বর্ষায় চারদিক ডুবে যাওয়ায় এসব ডিঙি নৌকায় মাছ ধরা হয়। তাই তারা চাঁচকৈড় হাটে এসেছেন ডিঙি নৌকা কিনতে। তাড়াশ উপজেলার মান্নাননগর, বিনোদপুর গ্রামের রহিম ব্যাপারি ও কলিম খাঁ জানালেন- বর্ষাকালে তাদের হাতে কাজ থাকে না। তাই ডিঙি নৌকা কিনে মাছ ধরে বাড়তি আয় করতেই এসব নৌকা কেনা।
নৌকা ক্রেতারা জানালেন, নৌকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় প্রতিটি কাঠের তৈরি ডিঙি নৌকা এক হাজার ৩শ টাকা থেকে শুরু করে এক হাজার ৭শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। প্লেনশিটের তৈরি নৌকা আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৫শ হতে ৩ হাজার ৫শ টাকায়।
স্থানীয় নৌকা ব্যবসায়ী আবদুুর রাজ্জাক, আলাল উদ্দিন ও নুরে আলম জানালেন, চলনবিলে বন্যা না থাকায় গত কয়েক বছর নৌকা ব্যবসা মন্দা গেছে। এবার বিলে পানি থাকায় নৌকার চাহিদা বাড়ছে। দিনরাত কাজ করেও নৌকা তৈরির কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। নৌকার দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তারা জানান- কাঠমিস্ত্রিদের মজুরী ও কাঠের দাম বেড়ে যাওয়ায় নৌকার দাম বেড়েছে।
একটি কারখানার মিস্ত্রি ফজলু মিয়া জানান, প্রতিটি ডিঙি নৌকার জন্য ২শ টাকা মজুরি পান। দিনে দুইটি করে ডিঙি নৌকা তৈরি করতে পারেন তারা। তারা জানালেন, চলনবিলের প্রাণকেন্দ্রে গুরুদাসপুরে চাঁচকৈড় হাটের অবস্থান হওয়ায় চলনবিল কেন্দ্রিক উপজেলাগুলো থেকে এই হাটে আসে নৌকা কিনতে। সপ্তার শনি ও মঙ্গলবার এখানে হাট বসে।
গুরুদাসপুর স’মিল মালিক সমিতির সভাপতি মাহাতাব সরকার ও সাধারণ সম্পাদক কামাল সরকার বলেন, গত কয়েক বছরে নৌকা ব্যবসা ভালো না হলেও এ বছর বিক্রি ভালো হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে নৌকার কদরও বাড়ছে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ