বাংলাদেশে ভারতের রফতানি আগস্টে কমেছে ২৮ শতাংশ

আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৪, ৭:৫৯ অপরাহ্ণ

সোনার দেশ ডেস্ক


বাংলাদেশে ভারতের রফতানিতে বড় ধরনের পতন হয়েছে। গত বছরের আগস্টের তুলনায় চলতি বছরের আগস্টে দেশটির রফতানি ২৮ শতাংশ কমেছে। সবচেয়ে বেশি কমেছে পোশাকের কাঁচামাল রফতানি। সব মিলিয়ে চলতি বছরে এই পণ্যের রফতানি প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এই খবর জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত সরকারি তথ্যমতে, প্রতিবাদ ও সহিংসতার কারণে বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের মুখোমুখি হয় প্রতিবেশী বাংলাদেশ। তাই বাংলাদেশে ভারতের রফতানি গত মাসে ২৮ শতাংশ কমে ৬৮১ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যেখানে ২০২৩ সালের একই মাসে দেশটির রফতানি ছিল ৯৪৩ মিলিয়ন ডলার।

এদিকে, রেটিং এজেন্সি ক্রিসিল বলেছে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি ভারতের বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারেনি। তবে সংস্থাটি সতর্ক করেছে, বাণিজ্যে দীর্ঘায়িত ব্যাঘাত ঘটলে বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা কিছু রফতানি ইউনিটের রাজস্ব ও বিনিয়োগ প্রভাবিত হতে পারে।

বাণিজ্যিক তথ্যমতে, বাংলাদেশে ভারতের পোশাকের কাঁচামালের রফতানি গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে। চলতি বছরের আগস্টে দেশটির রফতানি ১ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। ২০২৩ সালের আগস্টে রফতানি ছিল ১ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। আন্দোলনের পর বাংলাদেশে টেক্সটাইল ও পোশাক অর্ডার কমে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কাঁচামাল আমদানি কমেছে।
অর্ডার কমে যাওয়ায়, এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের ওপর নির্ভর করে গড়ে ওঠা কাঁচামাল এবং অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহকারী ভারতীয় টেক্সটাইল শিল্পের ওপর। যখন গার্মেন্টসের জন্য ভারতে নতুন নতুন অর্ডার আসছে শুরু হলো, তখনই বাংলাদেশে ভারতের পোশাকের কাঁচামাল রফতানি কমতে শুরু করেছে। এর প্রভাব শিল্প বা নির্দিষ্ট সেক্টরভিত্তিক ভিন্ন হবে জানায় রেটিং সংস্থাটি।

ক্রিসিলের গবেষণায় বলা হয়েছে, ‘ইন্ডিয়া ইনকর্পোরেটেডের ক্রেডিট মানের ওপর নিকটবর্তী প্রভাবের কোনও পূর্বাভাস পাচ্ছি না আমরা।’ এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের মুদ্রার মানের ওপরও নজর রাখা হবে। বাংলাদেশে সুতার তুলা, জ্বালানি, জুতা, কাপড়ের লাগেজ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মতো খাতগুলোতে কিছুটা প্রভাব পড়লেও তা মোকাবিলা করা যাবে। তবে জাহাজ ভাঙা শিল্প, পাট, তৈরি পোশাকের (আরএমজি) ক্ষেত্রে সুবিধা হবে বলে জানিয়েছে ক্রিসিল।

রেটিং এই সংস্থাটি বলছে, এগুলো ছাড়া অন্যান্য শিল্পের অধিকাংশ খাতেই তুলনামূলকভাবে খুব কমই প্রভাব পড়বে। কেননা, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের তুলনামূলকভাবে বাণিজ্যের পরিমাণ কম।

গত অর্থবছরে ভারতের বাণিজ্যের মোট রফতানির ২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং মোট আমদানির শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ হয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, রফতানি পণ্যে প্রধানত বস্ত্র ও সুতা, পেট্রোলিয়াম পণ্য, বিদ্যুৎ ইত্যাদি রয়েছে। আর আমদানিতে রয়েছে মূলত উদ্ভিজ্জ চর্বিযুক্ত তেল, সামুদ্রিক পণ্য ও পোশাক। সুতা ব্যবসায়ীদের বিক্রির ৮ থেকে ১০ শতাংশ হয় বাংলাদেশে। তাই এই সেক্টরের প্রধান রফতানিকারকদের রাজস্ব প্রভাবিত হতে পারে। ক্রিসিল জানায়, ‘এই পর্যালোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হবে অন্যান্য ভৌগোলিক অঞ্চলে বিক্রয়ের বাড়িয়ে এই ক্ষতি পূরণ করার ক্ষমতা।’

সংস্থাটি বলছে, তুলা শিল্পের প্রসার পরিমিত হওয়ায় এ ক্ষেত্রে তাদের মুনাফার লাভের সীমারেখায় উল্লেখযোগ্য প্রভাব নাও পড়তে পারে। বাংলাদেশে উৎপাদন কারখানা থাকার কারণে ভারতের জুতা, তৈরি পোশাক ও কাপড়ের লাগেজের কোম্পানিগুলোতে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে।

গবেষণাটিতে বলা হয়, ‘এই সংকটের শুরুর দিকে কার্যক্রম পরিচালনায় কারখানাগুলো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল।’
তবে বেশিরভাগ কারখানা সচল হয়েছে। যদিও তাদের পুরোপুরি উৎপাদনে যেতে এবং সাপ্লাই চেইন বজায় রাখার সক্ষমতার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, এই অর্থবছরে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ও অপর প্রকল্পগুলোতে জড়িত প্রকৌশল, ক্রয় ও নির্মাণ কোম্পানিগুলো বিলম্বিত বাস্তবায়নের মুখোমুখি হতে পারে। কারণ ইতোমধ্যে কর্মীদের উল্লেখ অংশকে ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে প্রায় এক মাস আগে।

ক্রিসিল বলেছে, শ্রমশক্তির একাংশে গতি আসতে পারে। পূর্বের প্রত্যাশার তুলনায় রাজস্ব আয় কম হতে পারে চলতি বছরে। পাশাপাশি, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোর বিল বকেয়া থাকতে পারে।
তথ্যসূত্র: বাংলাট্রিবিউন

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ