বাংলা জনপদে সাম্প্রদায়িকতা

আপডেট: এপ্রিল ৫, ২০১৭, ১২:১৬ পূর্বাহ্ণ

শাহ মো. জিয়াউদ্দিন


প্রাচীনকালে বাংলা জনপদটির আয়তন উপমহাদেশে সবচেয়ে বড় ছিল। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য, ত্রিপুরা রাজ্যের অংশ বিশেষ, আসাম রাজ্যের অংশ বিশেষ, ঝাড়খ-ের অংশ বিশেষ, মিয়ানমামারের আরকান এবং স্বাধীন বাংলাদেশসহ বিস্তৃীর্ণ অঞ্চল বাংলা জনপদের অর্ন্তভুক্ত ছিল। প্রাচীনকালে এই জনপদটির দখলদারি কর্তৃত্ব নিয়ে রাজাদের মধ্যে নানা দ্বন্দ্ব-সংঘাত হয়। আর এ জনপদটি বেশির ভাগ সময়ই বিদেশিদের দ্বারা শাসিত হয়েছে। পলল বিধৌত উর্বর প্রাকৃতিক প্রাচুর্যতায় ভরপর জনপদটির কর্তৃত্ব পেতে বিদেশিরা বারবার এ অঞ্চলে কখনো শাসক হিসাবে বা কখনো বণিক হিসাবে এসেছে। তাছাড়া প্রাচীনকালে প্রতি বছরেই বিদেশি জলদস্যু আক্রমণে কবলিত হত এই জনপদের মানুষ। বাংলার প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে বিদেশি শাসকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত হয়েছে আর বাংলার সম্পদকে ভোগ করতে গিয়ে নানা সময় বাংলা জনপদটিকে ধর্ম বা সাম্প্রদায়িকতা দিয়ে মানুষের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করেছেন শাসক শ্রেষি। বাংলা জনপদের সাধারণ মানুষের কাছে ধর্ম বা সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে কোন সময় সুপ্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক নষ্ট হয়নি। যার কারণে শাসক শ্রেণি কর্তৃক সাম্প্রদায়িক বিভক্তিটা কোন সময়েই স্থায়িত্ব পায়নি। বাংলা জনপদে  ১৭৫৭ সালে বৃটিশ শাসন শুরু হয়। তখন বৃটিশরা কর আদায়ের লক্ষে সমগ্র উপমহাদেশকে বিভক্ত করে আর এই বিভক্তির আঁচ বাংলা জনপদে এসে পড়ে। ফলে দেখা যায় অনেক বাংলাভাষী অধ্যুষিত অঞ্চল অন্য প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত হয়। তবে মূল বাংলার জনপদটি কিছুটা অক্ষুণœœ থাকে। এক সময় বৃটিশরা মূল বাংলা অঞ্চলকে ভঙ্গের উদ্যোগ নিলে বাঙালিরা তা রদ করতে আন্দোলনে নামে। প্রাচীন বাংলা জনপদে হাজার হাজার বছর আগে কোন কোন ধর্ম মানুষ পালন করতো তার যথার্থ তথ্যাদি না পাওয়া গেলেও সনাতন ধর্ম হিসাবে যে ধর্মটি এখনও প্রচলিত তা প্রাচীনকালের এ অঞ্চলের মানুষের ধর্ম পালনের একটি ধারা হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে। বাংলা জনপদে বিভিন্ন ধর্ম প্রচারকের আগমন ঘটে। বিশেষ করে সপ্তম, অষ্টম, নবম শতাব্দিতে ইসলাম ধর্মের প্রচারকরা এদেশে আসতে শুরু করেন। সেই সময়ে এ অঞ্চলে ইসলাম ধর্মের বিস্তৃতি ঘটে। বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার এবং উৎপত্তি এই উপমহাদেশেই, মূলত বৌদ্ধ ধর্মটি সনাতন ধর্মের থেকেই আসা একটি নতুন আর্দশিক ধারা হিসাবে অনেকেই বিবেচনা করে থাকেন। বৃটিশ শাসনকালে এদেশে খৃষ্টান ধর্মের আর্বিভাব ঘটে। বাংলা জনপদে  রয়েছে বৌদ্ধ, হিন্দু খৃষ্টান, ইসলাম ধর্মপালনকারী মানুষ, তাছাড়া এখানকার  আদিবাসীদের মধ্যে রয়েছে অনেকগুলো ধর্ম। এই জনপদে প্রায় শতাধিক ধর্ম পালনকারী মানুষ প্রাচীনকাল থেকে একত্রে সৌহার্দ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করে আসছে। বাংলার বিভিন্ন ধর্মের মানুষ নির্বিবাদে তাদের নিজ নিজ ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানগুলি পালন করে থাকে। এই ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালনের ক্ষেত্রে নিজেদের মাঝে দ্বন্দ্ব বা সংঘাত বৃটিশ শাসনের পূর্বে কোন সময়ই ঘটেনি। আর ধর্মীয় রীতিনীতির প্রভাবে বাংলার মূল সংস্কৃতির যে বিষয়গুলি রয়েছে তা পালনের ক্ষেত্রে কোন সময় ধর্মীয় আচারের প্রশ্ন উঠেনি বাঙালি সমাজে। বাংলা জনপদের নিজস্ব কিছু উৎসব বা পার্বণ রয়েছে যা সকল ধর্মীয় প্রভাব থেকে মুক্ত। এই উৎসব-পার্বণগুলি একান্ত বাংলা জনপদ থেকে সৃষ্টি। বংশ পরম্পরায় বাঙালিরা প্রাচীনকাল থেকে নিজস্ব সংস্কৃতির ধারায় ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে তা পালন করে আসছে। নানা ধর্মের পালনকারী জনপদ বাংলা অঞ্চলটি হওয়ার পরও মূল বাঙালি সংস্কৃতির ধারাটি অসম্প্রদায়িকতার মধ্য দিয়ে এ জনপদের মানুষ লালন করে থাকে প্রতি বছর। দীর্ঘ দিন বাংলা পরাধীন থাকলেও ধর্মীয় বিষয়কে কেন্দ্র করে বাঙালি সংস্কৃতিতে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারেনি শাসক শ্রেণি। ১৭৫৭ সালে বৃটিশরা এই জনপদটি দখল করে তারপর থেকে সাধারণ বাঙালিদের মাঝে ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টি হতে থাকে। বৃটিশরা নিজেদের শাসন স্থায়ী করতে এদেশের  সাধারণ মানুষের মাঝে ধর্মীয় বিদ্বেষ সৃষ্টি করে। ফলে সমগ্র জনপদের মানুষের মাঝে সাম্প্রদায়িক  দ্বন্দ্বিক অবস্থার সৃষ্টি হয়। বৃটিশ শাসক শ্রেণি এই জনপদের মানুষের মাঝে ধর্ম, আচার অনুষ্ঠানসহ নানা বাঙালি কর্মকা-ের মাঝে ধর্ম বা জাত গোষ্ঠি দিয়ে একটি বিভাজন রেখা তৈরি করার চেষ্টা করেও পারেনি। তবে উপমহাদেশ বিভক্তির সময় সাম্প্রদায়িক পরিবেশ সৃষ্টি করে বৃটিশরা ভারত ছেড়েছিল। বৃটিশরা ১৭৯৬ সালে বৃটিশরা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে এদেশে তাদের একটি তল্পিবাহক গোষ্ঠির জন্ম দেয়। এই বৃটিশ তল্পিবাহকরা জমিদার হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। এই জমিদারা শাসক শ্রেণির অনুকম্পা পাওয়ায় নিজেদেরকে সমাজে কুলীন শ্রেণি হিসাবে  প্রতিষ্ঠা করে। আর তখন থেকেই বাংলা জনপদে শ্রেণি বৈষম্যটা প্রকট হতে থাকে। বৃটিশ শাসনের মাত্র সাত বছর পর ১৭৬৪ সালে বাঙালিরা প্রথম বিদ্রোহ করেছিল বৃটিশদের বিরুদ্ধে। বৃটিশ সেনাবাহিনীতে ইংরেজ এবং বাঙালি উভয়েই কাজ করতো। তখন বৃটিশ সৈন্যর বেতন ছিল পচিশ টাকা আর বাঙালি সৈন্যর ছিল পাঁচ টাকা মাত্র। এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে বাঙালি সৈন্যরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। সদ্য প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি শাসন ধরে রাখতে বৃটিশরা কঠোর হয়ে উঠে এবং কঠোর হস্তে এই বিদ্রোহ দমন করে।  এই বিদ্রোহে ২৪ জন বাঙালি সৈন্য প্রাণ হারায়। এই বিদ্রোহটা কোন ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িকতার বাতাবরণে হয়নি এটা হয়েছিল বাঙালি সৈন্যদের নায্য প্রাপ্তি ও অধিকার আদায়ের লক্ষে। ১৮৫৭  সালে উপমহাদেশে সিপাই বিদ্রোহ হয়। এই সিপাহী বিদ্রোহের সুতিকাগার কলকাতার ব্যারাকপুরে। মঙ্গল পা-ে নামক একজন বীর বাঙালি সেনা বৃটিশদের বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। মঙ্গল পা-েকে বৃটিশরা বন্দি করে এবং নির্মমভাবে হত্যা করে। আর মঙ্গল পা-ের আত্মাহুতির মধ্য দিয়ে সিপাহী বিদ্রোহের সূচনা করে। বন্দুকের কার্তুজের ব্যবহার নিয়ে সিপাহী বিদ্রোহ শুরু কথা শুনা যায়, তবে  সিপাহী বিদ্রোহের র্মূল উদ্যেশ্য ছিল বৃটিশ শাসকদের উপমহাদেশ থেকে বিতাড়িত করা। সিপাহী  বিদ্রোহের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, এদেশের হিন্দু পুরোহিত, সন্যাসী, ঠাকুর, মুসলিম মৌলবী-দরবেশ, ফকিরসহ সকল ধর্মের অনুসারীরা নানাভাবে বিদ্রোহের বিষ বাষ্প দেশময় ছড়িয়ে দেয়ার কাজটি করেছিল। তাই উপনিবেশিক শাসনের অবসানের আন্দোলনে বাংলা জনপদের মানুষ নিজস্ব সাংস্কৃতিক বলয়ে ঐক্যবদ্ধ ছিল। আর এই ঐক্যই পরাধীনতার শৃংখল ভাঙ্গার জন্য বিদেশি খেদাও আন্দোলনকে বেগবান করেছে। বৃটিশ শাসনের শেষ দিকে বাংলা জনপদ জ্বলে উঠে সাম্প্রদায়িকতার রোষানলে। ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ বিভক্ত দুই ভাগে ভারত এবং পাকিস্তান হিসাবে। বাংলাও বিভক্ত হয়, আর পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। আর তার নাম পরির্বতন হয়ে এক সময় পূর্ব পাকিস্তান হয়। দ্বি জাতি তত্ত্বের নামে এই সাম্প্রদায়িকতার বিভক্তি এদেশের মানুষের মুক্তির চেয়ে পরাধীনতার  নতুন শিকলে আবদ্ধ করে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় মুখ্য বিষয় ছিল ধর্ম । ধর্মীয় রাজনীতি যে সমাজে শান্তি শৃংখলা আনতে পারে না তার প্রমাণ মেলে মাত্র এক বছর পরই ১৯৪৮ সালে বাংলা ভাষার প্রশ্নে। জাতিসত্ত্বার পরিচয় হলো তার ভাষা এবং সংস্কৃতি এখানে ধর্মটা মূল বিবেচ্য বিষয় নয়। দেশ ভাগের পর এটা বুঝতে পেরেছিল এদেশের মানুষ। আর সেই সময়ের তরুণ রাজনীতিবিদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এদেশে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির সূচনা হয়।
অনেকেই মনে করেন ধর্ম নিরপেক্ষতা এদেশের গণতন্ত্রে চলবে না। কারণ এদেশের বেশির ভাগ মানুষ ইসলাম ধর্ম পালন করেন। তবে প্রকৃত গণতন্ত্রের ভাষায় ধর্মভিত্তিক কোন স্থান নেই গণতেন্ত্রর রাজনীতিতে। তাছাড়া  বিভিন্ন সময় সরকারের নানা পৃষ্ঠপোষকতায় ধর্ম এখন রাজনীতির অনুসঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। আসলে বাস্তবতা কি তাই? ১৯৪৭ সালে কথিত দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ ভাগের সময় ধর্মটি ছিল বড় হাতিয়ার। সারা পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানের বাংলাদেশ) মানুষকে ধর্মীয় প্রভাবে জড়িয়ে ফেলেছিল মুসলিম লীগ নামক রাজনৈতিক দলের নেতারা। ১৯৪০ সাল থেকে কথিত দ্বি জাতি তত্ত্বের ধর্মীয় প্রভাবে বাংলা জনপদে দাঙ্গা হাঙ্গামা হয়েছে বহুবার। সাধারণ মানুষের মনস্তাত্ত্বিকতায় ধর্মটা সুনিপুন ভাবে পাকিস্তানি শোষক শ্রেণি প্রবেশ করিয়ে দিয়েছিল। ধর্মীয় উন্মাদনা দিয়ে যে সমাজে শান্তি আসে না তা বাংলার মানুষের বুঝতে সময় লাগেনি। পাকিস্তানিদের ধর্মভিত্তিক  সাম্প্রদায়িকতার বলয় থেকে বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক নীতি স্বল্প সময়েই পূর্ব বাংলাকে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিণত করেছিল। শোষণমুক্ত সমাজ গড়া ও অসাম্প্রদায়িক নীতির অনুশীলনে বঙ্গবন্ধু সারা বাংলাদেশের মানুষের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়ে ছিলেন। তিনি মুসলিম আওয়ামী লীগ থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ করেন। এই কারণে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক তৎপরতায় কোন সমস্যাও হয়নি বরং এদেশে একমাত্র রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছিল। তৎকালীন সময়ে ধর্মান্ধ রাজনৈতিকরা অপপ্রচার চালিয়ে বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা কমাতে পারেনি। এই অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি চর্চা ফলে বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা সেই সময় দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছিল। বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করেছেন মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষে। এই অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিজের জীবনকে তিনি উৎসর্গ করেছিলেন। প্রকৃতার্থে বিদ্যমান সমাজের সমস্যা নিরসনে এবং মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ নিয়ে যদি রাজনীতি করা হয় তাহলে ধর্মকে ব্যবহার না করে জনসমর্থন পাওয়া যায়। বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং গণতন্ত্র শোষনমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে রাজনীতি করেছেন। তাঁর একনিষ্ঠতা, রাজনৈতিক আর্দশ, সততা এবং নির্লোভ রাজনৈতিক কর্মকা-ের মাধ্যমে  তিনি হয়ে উঠেছিলেন বাঙালির অধিকার আদায়ের প্রতীক। ফলে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে হাজার বছরের পরাধীন বাংলা স্বাধীন হয়। আর বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি এবং বাঙালি জাতির জনক।
আজকে যারা রাজনৈতিক অঙ্গনে রাজনীতি করছেন তাদের বঙ্গবন্ধুর আর্দশ থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত। রাজনীতি থেকে অর্থ উপার্জন করা যায় না। এটা কোন ব্যবসা না, এটা মূলত একটি জনসেবামূলক কাজ। বর্তমানে দেশের  রাজনীতি একটি ব্যবসায় পরিণত হয়েছে গেছে। সিপিবি নামক রাজনৈতিক দলটিতেও মাসিক অর্থ প্রাপ্তির বিনিময়ে নেতারা রাজনীতি করেন। মাসিক টাকা দেয়া বন্ধ করে দিলে কজন নিবেদিত প্রাণ নেতা আছেন যারা সিপিবির রাজনীতি করবেন, তা খুঁজে পাওয়া মুশকিল হবে। বর্তমানে তাদের কর্তৃক নানা অনাদর্শিক বিষয় নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুললে তার পার্টির সদস্যপদ খারিজ হয়ে যায়। এ হলো প্রগতিশীল শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার রাজনীতি। অন্যান্য রাজনৈতিক দলে মাসিক টাকা দেয়ার নিয়ম না থাকলেও নেতারা রাজনৈতিক প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে টাকা কামাই করেন। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দেশের ডান বামসহ সকল নেতাদের রাজনীতি হলো  অর্থোপার্জন বড় একটি ক্ষেত্র। রাজনীতি করে অর্থ উপার্জন করাটাই এখন মূখ্য আর জনসেবার বিষয়টি গৌণ। যেহেতু সমাজ বা জনগণের কোন কল্যাণ রাজনীতিবিদরা করেন না  তাই রাজনীতিবিদরা জনসমর্থন পেতে ধর্মকে কাজে লাগায়। এদেশের সিংহভাগ মানুষ ইসলাম ধর্ম অনুসারী, এই মানুষগুলো ধর্মভীরু তবে ধমান্ধ নয়। এই ধর্ম বিশ্বাসী মানুষগুলোর মনোজগতে স্থান করে নিতে নিজেদেরকে ধর্মপ্রাণ হিসাবে পরিচয় দেয়। রাজনীতিবিদরা এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে  জনসমর্থন লাভ করে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা চালায়। আর এই কারণে সাম্প্রদায়িকতা বাংলা জনপদে একটি স্থায়ী রূপ নিতে যাচ্ছে। বাংলা জনপদে সাম্প্রদায়িকতার মূল কারণ  রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার।
বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত করতে হলে রাজনীতির মাধ্যমে অর্থ আয়ের পথটি বন্ধ করতে হবে। রাজনীতি যদি জনসেবামূলক কাজ হিসাবে পরিগণিত না হয়, তাহলে এ দেশের প্রতিটি সেক্টরে নানা অনিয়ম বাসা বাধবে। আর অনিয়মের মধ্য দিয়েই সাম্প্রদায়িকতা বেড়ে উঠবে। আর সাম্প্রদায়িকতার মধ্যেই  জন্ম নেবে জঙ্গিবাদের।