সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩ চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর ডাকা হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির সহিংস মুহূর্তে ঢাকা ও গাজীপুরের কয়েকটি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে শ্রমিক অসন্তোস দেয়া যায়। শ্রমিকদের ওই আন্দোলন বেশ সহিংস ছিল। অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, ইটপাটকেল নিক্ষেপÑএমনকী পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার ঘটনাও ঘটে। এতে শ্রমিকের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটেছে। সহিংসতা ঠেকাতে কর্তৃপক্ষকে শতাধিক ফ্যাক্টরি সাময়িক বন্ধ পর্যন্ত করতে হয়েছে। বর্তমানে পরিস্তিতি স্বাভাবিক হয়েছে। বন্ধ ফ্যাক্টরি চাল হয়েছে, শ্রমিক অসন্তোষ আপাত বন্ধ হয়েছে। এই শ্রমিক অসন্তোষ তখনই দেখা দিল- যে মুহূর্তে সরকারের প্রস্তাবনা অনুযায়ী শ্রমিকদের নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করা হলো।
বিরোধী রাজনৈতিক দলের হরতাল- অবরোধের সাথে পোশাক শ্রমিকদের সহিংসতা একেবারে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। নেপথ্যে কোনো পক্ষ কলকাঠি নেড়েছে বলেও মনে হয়। কেননা শ্রমিক অসন্তোষ ছিল খুবই আকস্মিক, মারমুখি ও সহিংস। শ্রমিকদের অসন্তোস দেখানোর অধিকার আছে। কিন্তু শ্রমিকদের সাম্প্রতিক আন্দোলনে কোনো প্রক্রিয়া মানা হয়নি। বরং ওই আন্দোলন হরতাল-অবরোধকারীদের সাথে সংহতিপূর্ণ মনে হয়েছে। সহিংসতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা বাঞ্ছনীয়।
তবে শ্রমিক আন্দোলন যে থেমে গেছে এমনটি বলার সুযোগ নেই। চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র অনুভুত হয়। যাতে পোশাক খাতকে বিপর্যস্ত করা যায়।
এ মাসের ১৬ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জানিয়েছেন, বিশ্বজুড়ে যারা শ্রমিক অধিকার হরণ করবে, শ্রমিকদের ভয়ভীতি দেখাবে এবং আক্রমণ করবে তাদের উপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞাসহ নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেবে যুক্তরাষ্ট্র। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতকে অতিমাত্রায় বাড়াবাড়ি করতে দেয়া গেছে। তাদের পক্ষ থেকে আগ বাড়িয়ে রাজনৈতিক বিরোধ মিমাংসায় সংলাপ আয়োজনের জন্য আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে চিঠি দেয়া হয়েছিল। সেই চিঠিতে প্রচ্ছন্নভাবে হুশিয়ারিও ছিল। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলে পর মার্কিন দূতাবাসের তৎপরতা এখন পর্যন্ত আর সামনে আসেনি।
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করার প্রত্যয় নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ১৬ নভেম্বর প্রথমবারের মতো একটি মেমোরেন্ডামে স্বাক্ষর করেছেন।
এ মেমোরেন্ডাম স্বাক্ষরের পরে সানফ্রান্সিসকোর একটি হোটেলে শ্রমিক নেতাদের সামনে এর বিস্তারিত তুলে ধরেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। তিনি বলেছেন, ‘শ্রম অধিকার আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা এবং বৈদেশিক নীতির চাবিকাঠি। এটা শুধুই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়। এটা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা ও বৈদেশিক নীতির বিষয়।’ সেখানে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ নির্দিষ্ট করে এসেছে। বাংলাদেশি গার্মেন্টস কর্মী কল্পনা আক্তারের প্রসঙ্গ টেনে বলা হয়েছে- মার্কিন দূতাবাস তার পক্ষে কাজ করেছে বলেই তিনি বেঁচে আছেন। এই বক্তব্যের আগ্রাসী দৃষ্টিভঙ্গি খুবই স্পষ্ট। এ ক্ষেত্রে দেশের পোশাক শিল্পে সংকট সৃষ্টির আগাম ঝুঁকিতে পড়ছে কী না সেটা এখনই ভাবতে হবে।