মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৮ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
বাগমারা (রাজশাহী) প্রতিনিধি
রাজশাহীর বাগমারায় দুই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষককে আটক রেখে মারধর ও লাঞ্ছিতের ঘটনায় বাগমারা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়েছে। দুই শিক্ষকের মধ্যে একজন হলেন উপজেলার হামিরকুৎসা ইউনিয়নের অর্জুনপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আক্কাছ আলী (সাধন) এবং নরদাশ ইউনিয়নের সৈয়দা ময়েজ উদ্দীন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনিছুর রহমান। প্রধান শিক্ষকের উপর ন্যাক্কার জনক হামলা ও আটক করে চাঁদা নেয়ার ঘটনায় শিক্ষক সহ সুশীল সমাজের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এমন ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবী করেছেন শিক্ষক নেতারা।
দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের উপর এমন হামলার তীব্র নিন্দা ও ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছেন বাগমারা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক কল্যাণ সমিতির সভাপতি আসাদুল ইসলাম সান্টু ও সাধারন সম্পাদক অধ্যক্ষ মজনু মোহাম্মাদ। তারা আরো বলেন, কোন অপরাধী যেন আইনের হাত থেকে ছাড় না পায়। অপরাধী যারাই হোক দ্রুত গ্রেপ্তার করা হোক। কোন সন্ত্রাসী বাহিনী যেন শিক্ষকের উপর হামলা করতে না পারে তার জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেন শিক্ষক কল্যাণ সমিতি।
উল্লেখ্য, গত ৩ জানুয়ারি রাতে অর্জুনপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আক্কাছ আলীকে (সাধন) অপহরণ করেন তাহেরপুর এলাকার শাহিনুর ইসলাম, আলমগীর হোসেনসহ ১০ তরুণ ও যুবক। তাঁকে তাঁরা অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁকে ঘরে আটক রেখে মারধর করেন অপহরণকারীরা। একপর্যায়ে তাঁর কাছে থাকা ১৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এছাড়াও বিকাশের মাধ্যমে পরিবারের কাছ থেকে আরও ১২ হাজার টাকা নেন অপহরণকারীরা।
অপহরণকারীদের দাবির পরিেেপ্রক্ষিতে তাঁদের দুই ভরি সোনা, ৬০০ টাকা মূল্যের দুটি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প এবং ফাঁকা চেকে সই নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। আক্কাছ আলী সাধন বাগমারা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক কল্যাণ সমিতির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আক্কাছ আলী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গত ৫ আগস্টের পর তিনি প্রকাশ্যে চলাফেরা করতেন না। অপহরণকারীরা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। মারধরের শিকার হওয়ার পর থেকে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।
অপরদিকে ৬ জানুয়ারি সকালে প্রতিষ্ঠান চলাকালীন সমেয় নরদাশের সৈয়দা ময়েজ উদ্দীন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনিছুর রহমানকে মারপিট করার লক্ষ্যে লাঠিসোটা নিয়ে অফিস কক্ষে হামলা করে। সে সময় অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা। পরে তাকে অফিস কক্ষে তালা দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। খবর পেছে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুল ইসলাম প্রায় ৩ ঘন্টা পর বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষ থেকে প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করে। ওই ঘটনার পর থেকে সন্ত্রাসীদের ভয়ে প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছেন না প্রধান শিক্ষক।
আনিছুর রহমান বাগমারা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করে আসছেন। ওই ঘটনায় আইন শৃংখলা বাহিনীর কাছে সরাসরি কোন অভিযোগ না দিলেও শিক্ষক সমিতিকে অবহিত করেন তিনি। তবে প্রধান শিক্ষক আক্কাছ আলী সাধনকে আটক রেখে মারধর করে চাঁদা আদায় ও ফাঁকা স্ট্যাম্পে সই নেওয়ার অভিযোগে দুই যুবককে আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে বাগমারা থানা পুলিশ।
এ ঘটনায় বাগমারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষককে আটকের পর মারধর করে মুক্তিপন আদায়, সোনা ও চেক নেয়ার ঘটনায় দুইজনকে আটক করা হয়েছে। সেই সাথে চেক উদ্ধারের পাশাপাশি অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।