রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৮ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।
রাশেদুল হক ফিরোজ, বাগমারা:
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় চলতি বোরো মৌসূমে ধানের উৎপাদন ভাল হলেও বাজার দর কমের কারণে আর্থিক ভাবে তেমন লাভবান হচ্ছেন না কৃষকরা। এক্ষেত্রে স্থানীয় আড়তদাররাও বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করছেন বলে জানা গেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বোরো মৌসূমে উপজেলায় ১৭৯৬৮ হেক্টর জমিতে বোরোর চাষাবাদ হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে নিরানব্বই ভাগ ধান কর্তন হলেও অবশিষ্ট এক ভাগ ধান রয়েছে যা দুএক দিনেই উঠে যাবে বলে জানা গেছে। এ উপজেলায় গত মৌসূমে ১৮৫১০ হেক্টর জমিতে বোরোর চাষাবাদ করা হলেও চলতি মৌসূমে প্রায় সাড়ে পাঁচশ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ কমে গেছে।
কৃষকরা জানান, মাঠ থেকে ধান কাটা শেষ হয়েছে। এবার বোরো ধানের ফলনও হয়েছে বাম্পার। স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ সহযোগিতা, সময় মত বীজ বপন পরিচর্যা ও অনুকুল আবহাওয়া বজায় থাকায় এই ফলন সম্ভব হয়েছে বলে কৃষকদের অভিমত। বাম্পার ফলনে কৃষক খুশি হলেও দাম কমের কারনে তাদের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে।
হামিরকুৎসা ইউনিয়নের আলোকনগর (নামোপাড়া) গ্রামের কৃষক সাজেদুর রহমান জানান, বর্গা নিয়ে এক বিঘা জমিতে খাটো-১০ জাতের ধান চাষ করে ২৪/২৫ মণ ধান উৎপাদন হয়েছে। সেখান থেকে সেচ বাবদ চার ভাগের এক ভাগ ধাণ নলকুপ মালিককে দিতে হয়েছে। এছাড়াও জমি চাষ থেকে শুরু করে ধান কর্তন পর্যন্ত সার, ওষুধ প্রয়োগ ও শ্রমিক খরচ বাবদ বারো থেকে তেরো হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমান ধানের দর ১১৭০/৮০ টাকা। সেক্ষেত্রে আর্থিক ভাবে ক্ষতির মূখে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
এছাড়াও কালুপাড়া গ্রামের কৃষক মজনুর রহমান জানান, দেড় বিঘা জমিতে সুবর্ণ লতা জাতের ধানের চাষ করে বাজার দর ভাল না থাকায় লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না বলে জানান তিনি।
এছাড়াও কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান ও উজ্জল হোসেন জানান, তারা সুবর্ন লতা, ৮৯, ৭৫ ও খাটো ১০ জাতের ধানের চাষাবাদ করেন। উৎপাদন ভাল হলেও বাজার দর কম থাকায় লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না বলে জানান তারা।
এদিকে আলোকনগর গ্রামের আড়তদার বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সের স্বত্তাধিকারী মনিরুজ্জামান বাবুল বলেন, তারা ধান কিনে দেশের বিভিন্ন অটো মিলে সরবরাহ করে থাকেন। ধান কিনে ওই রেট অনুযায়ী সঙ্গে সঙ্গে মিল গুলোতে ধান পাঠাতে পারেন না। যে দামে ধান কিনছেন মিলে পাঠাতে হয়তো দু-চারদিন দেরী হচ্ছে কিন্ত পাঠানোর সময় দেখা যাচ্ছে ধানের বাজার-দর কমে গেছে সেক্ষেত্রে বেশী দামে কিনে কম দামেও বিক্রি করতে হচ্ছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বিভিন্ন জাতের ধানের দাম মণ প্রতি পঞ্চাশ টাকা থেকে একশ টাকা কমে গেছে। বর্তমানে দিন দিন দাম কমেই যাচ্ছে।
ওই আড়তের দায়িত্বপ্রাপ্ত সমশের আলী বলেন, তাদের আড়তে খাটো ১০, সবুজ লতা, পচাত্তর, আঠাশ, জিরা, হিরা-২, সুবর্ণ লতাসহ বিভিন্ন জাতের ধান কৃষকদের কাছ থেকে কেনা হচ্ছে। দুই সপ্তা আগে খাটো-১০ এর বাজার দর ১২৩০টাকা মন ছিল। বর্তমানে ১১৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। হিরা-২ ১১২০ টাকা মণ ছিল, এখন ১০৬০। আঠাশ ১২২০ থেকে কমে ১১৮০, জিরা ১২৫০ ছিল, এখন ১২৩০ টাকা মন দরে বিক্রি হচ্ছে।
কৃষকদের মতে, বোরো ধানের চাষাবাদে ও সেচে যান্ত্রিকীকরণ হলেও এর কাটাই মাড়াই কাজে যান্ত্রিকীরণ না হওয়ায় তাদের উৎপাদিত ধান বিক্রি করে তেমন কোন লাভ থাকছে না। এতে শ্রমিক সংকট, অধিক ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অনেক কৃষকই ধান উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। আবার অনেক লাভ বেশি হওয়ায় কৃষক ধানী জমি গুলো মাছ চাষীদের লীজ দিয়ে দিচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বোরো মৌসূমে বাগমারায় ধানের ফলন সন্তোষ জনক হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ধান চাষীরা উৎপাদিত ধান সুন্দর ভাবে কর্তন করতে পেরেছে। বাজার ব্যবস্থা ভাল থাকলে তারা লাভবান হতে পারবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।