শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ২৯ শ্রাবণ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
বাগমারা প্রতিনিধি:
জাতীয় দিবস ছাড়া সরকারি সরকারি দপ্তরে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের কোনো নিয়ম নেই বলে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে বিপাকে পড়েছেন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার গোলাম রাব্বানী। স্থানীয় রাজনীতিক নেতারা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার এই ঘোষণাকে জাতীয় পতাকার অবমানকর বলে আখ্যায়িত করে তাঁর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তাঁর ঘোষণায় অটল থেকে এই ধরনের দাবিকে আবেগ বলে উল্লেখ করেছেন। এর আগেও উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করাতে উপজেলা প্রশাসন থেকে সর্তক করা হয়েছিল।
গত সোমবার (২৭জুন) অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় পতাকা উত্তোলন দিয়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার ফতোয়ার ঘটনা ঘটে। ওই দিন সকালে পরিষদের সভাকক্ষে উপজেলা চেয়ারম্যান অনিল কুমার সরকারের সভাপতিত্বে সভা শুরু হয়। সভায় নরদাশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারওয়ার উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রেগুলোতে অফিস চলাকালীন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় না বলে অভিযোগ করেন। তিনি তাঁর ইউনিয়নের একটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কথা সভায় উল্লেখ করে এর প্রতিকার চান।
এসময় সেখানে উপস্থিত থাকা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ওই জনপ্রতিনিধির অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরকারি দপ্তরে জাতীয় পতাকা টাঙানোর কোনো বিধান নেই বলে জানান। পতাকা টাঙাতে বাধ্য নয় বলে জানিয়ে বক্তব্য দেন তিনি। এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সভায় উপস্থিত সভার সদস্যরা দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেন এবং বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানান। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সভার সদস্যদের তোপের মুখে নিজের বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেন।
এদিকে এই ঘটনাটি গোপন রাখা হয়। এরপরেও অনেক উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে দাপ্তরিক কার্যক্রম চলাকালীন পতাকা উত্তোলন করা হয়নি। বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর ক্ষমতাসীন দলের নেতা ছাড়াও বিভিন্ন দলের কর্মীরা এর প্রতিবাদ জানান। তাঁরা ফেসবুকের নিজস্ব অ্যাকাউন্ট থেকে এর প্রতিকার চেয়ে স্ট্যাটাস দেন।
ভবানীগঞ্জ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি নাদিরুজ্জামান বলেন, জাতীয় পতাকা বিষয়ে তিনি ফতোয়া (বক্তব্য) দিয়ে পরোক্ষভাবে অবমাননা করেছেন। এর প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি কর্মসূচি দেওয়ার কথা ভাবছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
এই বিষয়ে নরদাশ ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার বলেন, তিনি কয়েকটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে পতাকা না টাঙানোর বিষয়টি নজরে আসার পর উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় তুলে ধরে সেখানেও ব্যর্থ হয়েছেন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জাতীয় পতাকা টাঙানোর বিষয়টি তাচ্ছিল্য ভাবে উপস্থাপন করেছেন। যা জাতীয় পতাকা অবমাননার সামিল।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অনিল কুমার সরকার জানান, তিনিও স্বাস্থ্যকর্মকর্তার এমন জবাবে বিস্মিত। তবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সভায় নিজের বক্তব্য প্রত্যাহার করে ভুল স্বীকার করেছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা গোলাম রাব্বানী বুধবার বিকেলে মুঠোফোনে সাংবাদিকদের বলেন, সভায় তাঁর দেওয়া বক্তব্যে তিনি এখনো অটল রয়েছেন। জাতীয় দিবস ছাড়া সরকারি দপ্তরে পতাকা উত্তোলনের কোনো বিধান নেই বলে তিনি জানিয়েছেন। সভায় এ সংক্রান্ত নিজের বক্তব্য প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে স্বীকার করেন। ফেসবুকে লেখালেখি ও স্থানীয়ভাবে প্রতিবাদের বিষয়ে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি এটাকে আবেগ বলে উল্লেখ করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক সুফিয়ান জানান, স্বাস্থ্যকর্মকর্তা সভায় বক্তব্য প্রত্যাহার করেছেন। তবে সরকারি দপ্তরের কার্যক্রম চলাকালীন জাতীয় পতাকা টাঙানোর বিধান রয়েছে বলে জানান। স্বাস্থ্যকর্মকর্তা বক্তব্য থেকে ফিরে আসেননি বলে জানালে তিনি বলেন, সভার রেজুলেশন করে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হবে।