শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
রাশেদুল হক ফিরোজ, বাগমারা
রাজশাহীর বাগমারায় সরকারের নির্দেশিত ভূমি ব্যবস্থাপনার নীতিমালা লঙ্ঘন করে অবাধে চলছে পুরোদমে ফসলি জমিতে পুকুর খননের কাজ। আইন করেও পুকুর খনন বন্ধ করা সম্ভব না হওয়াই হারিয়ে যাচ্ছে আবাদি জমির পরিমাণ। পুকুর খনন বন্ধ না হওয়ায় এলাকার জমির মালিকরা চরম বিপাকে পড়েছেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, এলাকাবাসী বিভিন্ন সময়ে বাদী হয়ে পুকুর খননকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো ফল পাচ্ছে না। এর আগে উপজেলার প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করেও কোন লাভ হয় নি। এ খননে জমি মালিকরা চরম বিপাকে পড়েছেন। পাশর্^বতি জমিতে খনন কাজ করায় বাধ্য হয়েই অনেকের জমি দিতে হচ্ছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা খাল, দাঁড়া ও বিলে ফ্রি স্টাইলে যত্রতত্র পুকুর খনন করে মাছ চাষের ব্যবস্থা গড়ে তোলায় পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে পড়েছে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় এলাকার শত শত বিঘা ফসলি জমি পানি বদ্ধতায় পড়ে থাকছে। ব্যবসার নামে পানি প্রবাহের নালা ব্রিজ, কালভাট ও স্লোইজ গেট বন্ধ করেও খনন করে মাছ চাষ করায় অকেজো হয়ে পড়ে আছে সেগুলো। জলাবদ্ধতায় বর্ষায় ফসলি জমির আবাদ নষ্ট হলেও তাদের দুরাবস্থায় কেউ এগিয়ে আসছে না বলে কৃষকরা অভিযোগ করেছেন। প্রভাবশালীদের হাত থেকে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ও ফসলি জমিতে অপরিকল্পিত পুকুর খনন বন্ধের জন্য শতাধিক ভুক্তভোগী কৃষকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিত আবেদন করলেও বন্ধ হচ্ছে না পুকুর খনন।
জানা গেছে, উপজেলার গোয়ালকান্দি, আউচপাড়া, মাড়িয়া, গনিপুর, ঝিকড়াসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের বিলে প্রভাবশালীরা নিজেদের ক্ষমতাবলে পুকুর খনন করে চলেছে। বিশেষ করে বিলের পানি প্রবাহের গতি পথে পুকুর খননের কারণে পানি নিষ্কাশনের কোন বিকল্প পথ থাকছে না। তাই বর্ষাকালে এলাকার পানি নিষ্কাশনের পথটি বন্ধ হয়ে পড়ছে। বর্তমানে বিল খালে অপরিকল্পিত নতুন নতুন পুকুর খননের ধারাবাহিকতায় এলাকার কিছু প্রভাবশালী সুবিধাভোগীরা ফসলের এই নীচু জমিতে কিছু পরিমান মাটি খনন করে খননকৃত পুকুরের চারিধারে মাটির বাঁধ দিয়ে গভীর নলকূপ নিয়ে পানি জমা করে দেদারছে মাছ চাষ করছে। বিভিন্ন ইউনিয়নের মতো গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের যশের বিল এখন পুকুরের বিলে পরিণত হচ্ছে। এর আগে ওই বিলে বেশ কয়েকটি পুকুর খনন সম্পন্ন হলেও নতুনভাবে স্থানীয় প্রভাবশালী ফারুক আহমেদ, সাগর খা, বিরাজ, বজলুর রহমানহ কয়েকজন ওই বিলে নতুন করে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে খনন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনে গাফিলতির কারণে মহল বিশেষে উপজেলার সর্বত্র এই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে।
কৃষকরা জানান, গত আষাঢ় মাস অধিক বৃষ্টিতে নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর ভরে যায়। টানা বর্ষণে নদ-নদী, খাল-বিল পুকুর পরিপূর্ণ হয়ে পানি নামার অব্যবস্থাপনায় বৃষ্টিতে নিম্ন অঞ্চলের ধান ও পাট, পানবরজ, মরিচ, শাক-শবজির খেত তলিয়ে কৃষককের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
উপজেলার আউচপাড়া ইউনিয়নের কোন্দা গ্রামের আফসার আলী, সান্টু, আলমগীর হোসেন জানান, গ্রামের হাফিজ উদ্দীন বেশ কয়েকজনকে সাথে নিয়ে কোন্দা পদ্মবিলে ২০ বিঘা ফসলি জমির ওপরে একটি দিঘী খনন করছেন। এতে করে পানিপ্রবাহের পথ বন্ধ হয়ে পড়বে। দিঘী খননের কারণে আশেপাশের জমির মালিকগণ ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন বলেও জানায় তাঁরা। বর্তমানে ফসলি জমিতে পুকুর খননের ফলে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে উপজেলার শত শত বিঘা খেতের জমি অকেজ হয়ে পড়ে থাকছে।
অপরদিকে উপজেলার ঝিকড়া ও দ্বীপপুর ইউনিয়ের বেশ কয়েকজন জানান, সরকারি বাধা নিষেধ থাকলেও তার প্রয়োগ না হওয়ায় প্রভাবশালী মহল অবাধে তাদের এলাকায় ফসলি জমিতে পুকুর খনন করে চলেছে। এখনই ওই সমস্ত এলাকায় পুকুর খনন বন্ধ না হয়, তাহলে সাধারণ কৃষক জমিতে ফসল উৎপাদন করতে না পেরে সংসার পরিজন নিয়ে বেকায়দায় পড়বে।
এছাড়াও উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভার এক প্রভাবশালী পৌর কাউন্সিলর নুরপুর এলাকায় আম, কাঁঠালসহ বিভিন্ন প্রজাতীর বাগানের গাছ কেটে জবরদখল করে পুকুর খণন শুরু করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এলাকার লোকজন অবিলম্বে ওই সকল পুকুর খননকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন। এলাকার লোকজনের অভিযোগ শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য আশরাফুল ইসলাম তাহেরপুর এলাকার প্রভাবশালী এক কাউন্সিলরের সঙ্গে যোগাযোগ করে পৌরসভার নুরপুর এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির গাছের বাগান কেটে সেখানে জোরপূর্বক পুকুর খনন শুরু করেছেন। এলাকার লোকজন বাধা সৃষ্টি করলে প্রভাবশালীরা একত্রিত হয়ে এলাকার লোকজনকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দি্েচ্ছ বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিবুর রহমান জানান, ফসল উৎপাদনে রাজশাহী জেলার প্রথম স্থানে ছিল বাগমারা উপজেলা। অতিরিক্ত পুকুর খননের কারণে আবাদী জমি পরিমান অনেকটাই কমে গেছে। আর এলাকার পুকুর খননকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না। অবিলম্বে পুকুর খনন বন্ধে প্রশাসনকে পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানান তিনি।
যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাছরিন আক্তার বলেন, অল্প সময়ের মধ্যেই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। আবাদী জমিতে পুকুর খনন করে যারা জমি নষ্ট করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।