বাগাতিপাড়া প্রতিনিধি :
চারদিকে ফসলি জমি। মাঝখানে আট কক্ষের টিনের দোচালা ঘর। দরজা-জানালা ভাঙা। তিনটি কক্ষে ঝুলছে তালা। কয়েকটিতে ধানের খড় স্তূপ করে রাখা হয়েছে। ভাঙা বেঞ্চ ও টেবিলে ধুলার আস্তর। কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক নেই। এ চিত্র বাগাতিপাড়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসার। এমন পরিবেশ বজায় থাকলেও শিক্ষার্থী দেখিয়ে বছরের শুরুতেই বই বিতরণসহ উপবৃত্তির টাকা তোলেন সুপার আব্দুর রউফ।
২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাটিতে পাঁচ বছর ধরে কোনো শিক্ষার্থী ও শিক্ষক নেই। কাগজে-কলমে যাঁরা এখনও কর্মরত, তাঁদের কেউ-ই প্রতিষ্ঠানে আসেন না। এ সুযোগে অনিয়ম করে যাচ্ছেন সুপার আব্দুর রউফ। প্রতিবাদ করলেই চাকরিচ্যুত করা হয় শিক্ষকদের। এর মধ্যে দু’জনকে অপসারণ করা হয়েছে। তাঁদের একজন মাদ্রাসার অফিস সহকারী মোস্তাফিজুর রহমান মিঠু। তিনি ওই সুপারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, মাদ্রাসা সুপার শিক্ষার্থীর ভুয়া তালিকা করে উপবৃত্তির টাকা তুলে আত্মসাৎ করে আসছেন। এর জন্য একাধিক সিম কার্ড ব্যবহার করেন তিন। একইভাবে ভুয়া তালিকা করে তিনি নতুন বছরের বইও তুলেছেন। জালিয়াতির বিষয়টি জানাজানি হলে অভিভাবকদের অনেকেই তাঁর বিরুদ্ধে ইউএনওসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন। অভিভাবক মতিউর রহমান গত বছর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন।
সেখানে বলা হয়েছে, বাগাতিপাড়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসায় ২০২১ সালের দাখিল পরীক্ষায় ১৫ জনকে রেজিস্ট্রেশন করানো হয়। কিন্তু বাগাতিপাড়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসা কেউ পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। ২০২২ সালেও আটজনের নাম দেওয়া হয় পরীক্ষার্থী হিসেবে। তারাও পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন অভিভাবক বলেন, সুপার তালিকা করে বইসহ উপবৃত্তির টাকা তুলেছেন।
বিষয়টি জানার পরও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ‘এখনও প্রতিষ্ঠানে কোনো শিক্ষার্থী বা শিক্ষক নেই। সুপারও নিয়মিত সেখানে যান না। তিনি গালিমপুর কৃষ্ণপুর মসজিদে ইমামতি করেন। এ বিষয়ে সুপার আব্দুর রউফের সঙ্গে কথা বলতে তাঁর প্রতিষ্ঠানে গেলে কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘একটি পক্ষ মাদ্রাসাটি বন্ধের ষড়যন্ত্র করছে।
তাদের মধ্যে অফিস সহকারী মোস্তাফিজুর রহমান মিঠুও রয়েছে। অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করব।’ কিছুক্ষণ কথা বলার পর নামাজের অজুহাত দিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন সুপার আব্দুর রউফ। মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আহাদ আলী জানান, অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কিছু অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। পুরো প্রতিবেদন পাওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা সরকার জানান, কর্মস্থলে সম্প্রতি যোগদান করায় বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। তবে অভিযোগ পেলে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ নেবেন।