নিজস্ব প্রতিবেদক:
অপেক্ষার প্রহর শেষে রাজশাহীতে বাগান থেকে আম পাড়া শুরু হয়েছে। বেধে দেওয়া সময় মেনে বুধবার (১৫ মে) থেকে বাগানের আম নামানো শুরু হয়েছে গুটি জাতের আম। এর মধ্যে দিয়ে বাজারে উঠেছে এই মৌসুমের ১ম বহুল প্রতীক্ষিত রাজশাহীর আম।
এরআগে রাজশাহীতে আম পাড়ার সময় বেঁধে দেয় জেলা প্রশাসন। রোববার (১২ মে) রাজশাহী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আম সংগ্রহ, পরিবহন, বিপণন এবং বাজারজাত মনিটরিং সংক্রান্ত সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সাংবাদিক ও কৃষি বিভাগসহ আম সংশ্লিষ্ট বিভাগের ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
অসময়ে আম সংগ্রহ বন্ধ রাখতে গত কয়েক বছর থেকে ধারাবাহিক ভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বুধবার ১৫ মে থেকে গুটি জাতের আম নামাতে পারছেন চাষিরা। এরপর গোপালভোগ বা রানিপসন্দ ২৫ মে, লক্ষ্মণভোগ বা লখনা ৩০ মে এবং একই তারিখে হিমসাগর বা ক্ষীরসাপাতি গাছ থেকে নামানো যাবে। এ ছাড়া ১০ জুন থেকে ল্যাংড়া ও ব্যানানা আম; ১৫ জুন আম্রপালি এবং একই তারিখে ফজলি, ৫ জুলাই বারি-৪ আম, ১০ জুলাই আশ্বিনা, ১৫ জুলাই গৌড়মতি ও ২০ আগস্ট থেকে ইলামতি আম নামানো যাবে। এ ছাড়া কাটিমন ও বারি-১১ আম সারা বছর সংগ্রহ করা যাবে।
রাজশাহী জেলা প্রশাসনের নির্দেশনানুযায়ী, এ বছরের ১৫ মে হতে আমের মৌসুম চলবে পুরও আগস্ট মাস পর্যন্ত। বুধবার হতে অনেকটা সীমিত আকারেই আম পাড়া শুরু হয়। সব গাছের গুটি আম এখনো ভালোভাবে পরিপক্ক হয়নি। তাই ব্যাপকভাবে একসঙ্গে সব বাগানে গুটি আম পাড়াও শুরু হয়নি বলে জানিয়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
তারা জানান, মহানগর ও জেলার বিভিন্ন এলাকার বাগানে অল্পসংখ্যক চাষি ও ব্যবসায়ী আম পাড়ছেন। কারণ এখনো অনেক বাগানের গুটি আম পরিপক্ক হতে শুরু করেনি। এই আম পরিপক্ক হতে আরও কিছু দিন সময় দরকার। তবে আগামী সপ্তাহে পুরোদমে গুটি আম গাছ হতে ভাঙগা শুরু হবে বলেও জানায়।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্যান) সাবিনা বেগম বলেন, রাজশাহীতে গুটি জাতের আম পাড়া শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন জাতের আম পাড়া হবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজশাহী জেলায় আমের সম্ভাব্য উৎপাদন ২ লাখ ৬০ হাজার ৩১৫ টন। এ বছর আমের আবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে। যার গড় ফলন ধরা হয়েছে ১৩ দশমিক ২৮ টন।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, বাজারে পরিপক্ক ও নিরাপদ আম নিশ্চিত করতে প্রতি বছরই তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এবারও কৃষক, কৃষি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সবার মতামতের ভিত্তিতেই ‘ম্যাংগো ক্যালেন্ডার’ নির্ধারণ করা হয়। এই সময়ের আগে যদি কোনও কৃষক বা ব্যবসায়ী পরিপক্ক আম নামান তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিষয়টি মনিটরিং করতে রাজশাহীর হাট-গুলোতে সার্বক্ষণিক পুলিশ থাকবে।
তিনি আরও বলেন, সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সহকারী কমিশনাররাও বিষয়টি দেখভাল করবেন। তবে নির্ধারিত সময়ের আগে যদি কোথাও আম পাকে তাহলে স্থানীয় প্রশাসনকে জানালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যে আম নাও পরিপক্ক হতে পারে। সেই জন্য আমচাষি ও বাগান মালিকদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। নিজ বাগানের আম পরিপক্ব হওয়া সাপেক্ষেই সেগুলো নামাতে পারবেন। সেই ক্ষেত্রে বেঁধে দেওয়া সময়ের অনেক পরে আম নামালেও কোনো সমস্যা নেই।