বাঘায় ইদ মেলায় মন কেড়েছে সিদ্দিক কবিরাজের পানের খিলি

আপডেট: এপ্রিল ১৬, ২০২৪, ১০:৩৫ অপরাহ্ণ


আমানুল হক আমান, বাঘা:


একটি খিলি পান খাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট। আমাকে আগে দেন তাড়া আছে, আবার অনেকে ধর্য্য হারিয়ে চলেও যান। কেউ চাচ্ছেন নবাব পান, জমিদার পান, নাটোরের বনলতা পান, আয়ুবেদিক পান, বিয়াই-বিয়ান পান, শালি-দুলাভাই পান, হাসি-খুশি পান, নতুন বাবুর হাতের পান, ভালো বাসার পান, বন্ধু-বান্ধবীর পান, জনতার পান, খয়ের জর্দ্দা, আবার কেউবা মিষ্টি পান।

এমনটি দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায় রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী ইদ মেলায় বাঘা দরগা শরিফের গেটের সামনে সিদ্দিক কবিরাজের পানের দোকানে। একটি খিলি পান বিক্রির তালিকায় রয়েছে সর্বোচ্চ এক হাজার ৫৭৫ টাকায়। সর্ব নিম্ন ২৫ টাকা পর্যন্ত। তিনি ৩৭ বছর ধরে ব্যবসা করে আসলেও এই ঐতিহ্যবাহী ইদ মেলায় ২৫ বছর ধরে খিলি পানের ব্যবসা করে আসছেন।

সিদ্দিক কবিরাজ (৫৭) নাটোরের লালপুর উপজেলার জয়রামপুর-বেড়িলাবাড়ি গ্রামের মৃত গরিবউল্লার ছেলে। হরেক রকম জর্দ্দা ও মসলা দিয়ে তৈরি করে বিভিন্ন স্বাদের পান। বাহারি এই পান খেতে দুরদুরান্ত থেকে লোক আসে সিদ্দিক কবিরাজের দোকানে।

অভাব অনোটনসহ অর্থনৈতিক ব্যাপক অসচ্ছলতায় তাকে বাধ্য করেছে পান বিক্রি করতে। বড় ধরনের ব্যবসা করতে মোটা অংকের পুঁজির প্রয়োজন। তার সাধ থাকলেও সাধ্যের বাইরে ছিল সে স্বপ্ন। ১৯৮৭ সালে স্বল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করেন এই খিলি পান বিক্রি। দীর্ঘ ৩৭ বছর পানের দোকানদারী করে সিদ্দিক কবিরাজ এখন স্ববলম্বী হয়ে উঠেছেন। তিনি এই মেলায় ৬ দিনে প্রায় লক্ষাধিক টাকার খিলি পান বিক্রি করেছেন। তিনি এই মেলায় হাসি-খুশি পান যার ২০৫ টাকা মূল্যে ৪টি খিলি পান বিক্রি করেছেন। তার লাইসেন্সধারী পানের দোকান। তার দোকানের লাইসেন্স নম্বর ১৮৬৭। সিদ্দিক কবিরাজ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পানের খিলি ব্যবাসায়ী। তার দোকানের সাইন বোর্ডে লিখা আছে আপন জনের জন্য নিয়ে যাবেন, ভালো লাগলে দাম দিবেন, না লাগলে দিবেন না।

সিদ্দিক কবিরাজ এই মাসে প্রায় এক লক্ষ ২০ হাজার টাকার পান বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে তিনি এই মেলায় ৬ দিনে প্রায় লক্ষাধিক টাকার খিলি পান বিক্রি করেছেন। বিভিন্ন পণ্যের দামসহ যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় হয়। পাশাপাশি মেয়ে শিখা খাতুন স্থানীয় কলেজের শেষ বর্ষেও ছাত্রী ও ছেলে শান্ত হোসেন দশম শ্রেণিতে লেখাপড়া করাচ্ছেন তিনি। নিজে অর্থনৈতিক সংকটের কারনে খুব বেশি লেখা-পড়া করতে পারেনি। তবে টাকার অভাবে যাতে ছেলের পড়াশুনা বন্ধ না হয়ে যায়, সে ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন রয়েছে সিদ্দিক কবিরাজ। ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখচ্ছেন পান ব্যবসায়ী সিদ্দিক কবিরাজ।

সিদ্দিক কবিরাজের দোকানে পানের মূল্যের তালিকার মধ্যে নবাব পান ১৫৭৫ টাকা, জমিদার পান ১০৬৫ টাকা, নাটোরের বনলতা পান ৮৫৫ টাকা, আয়ুবেদিক পান ৭৪৫ টাকা, বিয়াই-বিয়ান পান ৬৩৫ টাকা, শালি-দুলাভাই পান ৪২৫ টাকা, হাসি-খুশি পান ২০৫ টাকা, নতুন বাবুর হাতের পান ২৬৫ টাকা, ভালো বাসার পান ১৫৫ টাকা, বন্ধু-বান্ধবীর পান ১৪৫ টাকা ও জনতার পান ২৫ টাকা।

মঙ্গলবার মেলা দেখতে এসে বাঘা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবদুল লতিফ মিঞা ২৫ টাকা মুল্যের একটি পান নেন। এ সময় এ প্রতিবেদককে বলেন, নাটোরের বনলতা পানের দোকানের আগে সদর ঘাটের দোকান নিয়ে আসতেন এ মেলায়। যুগের পরিবর্তনে সদর ঘাটের পান এখন বাঘার মেলায় পাওয়া না গেলেও দুই যুগ থেকে এ মেলায় সিদ্দিক কবিরাজের পান দৃষ্টি কেড়েছে আগত দর্শনার্থীদের।

তবে এর আগেও তার কাছে থেকে পান খেয়েছি। তার পান খেলে মনে হয় মুখ থেকে পান ফুরাচ্ছেনা। খেতে খুব সুমাধু। পরে তিনি প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের নিয়ে মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।
বাঘা প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি গোলাম তোফাজ্জল কবীর মিলন বলেন, দীর্ঘ দিন থেকে এই মেলায় পান বিক্রি করে আসছেন তিনি। তার পান খাওয়ার জন্য মানুষ লাইন নিয়ে থাকেন। বিক্রিও ভালো হয়।

সিদ্দিক কবিরাজ জানান, আমি দেশের বিভিন্ন জেলায় পান বিক্রি করে বেড়াই। স্থানীভাবে ব্যবসা করি না। ভ্রাম্যমান হিসেবে এ ব্যবসা করে চলছি। যেখানে বড়-বড় মেলা বা অনুষ্ঠান হয় সেখানে যায়। এভাবে দীর্ঘ ৩৭ বছর চলছে। আমার সাত ভাই বোনের মধ্যে আমি বড়। বাবা ১০ বছর আগে মারা গেছেন। বর্তমানে বৃদ্ধ মাসহ ৫ সদস্যের পরিবার পরিচালনা করতে কোন বেগ পেতে হয় না।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ