বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
আমানুল হক আমান, বাঘা :
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার চরের মধ্যে চকরাজাপুর ইউনিয়ন। এই চরে বল সুন্দরী বরই চাষে এনে দিয়েছে নতুন বিপ্লব। রোদ আর বালুর কারনে বছরের পর বছর পদ্মার চরে ৫ হাজার ২৮৬ হেক্টর জমি অনাবাদি ছিল। বর্তমানে চরের জমিতে পেঁয়াজ, রসুন, মসুর, গম, সরিষা, আখ, ধান, হলদু, আদা ও শাকসব্জির পাশাপাশি চাষ হচ্ছে বল সুন্দরী।
জানা গেছে, পদ্মার চরে বরই চাষে আত্ননিয়োগ করেছে এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকরা। পতিত জমিতে কুল বরই চাষ করে একদিকে চাষিরা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হচ্ছেন, অন্যদিকে পুষ্টির ঘাটতি পূরণসহ জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে। কম খরচে বেশী লাভের আশায় চকরাজাপুর ইউনিয়নের ১৫টি চরে বল সুন্দরী, আপেল, বাউ ও থাই জাতের বরই চাষ করে নতুন বিপ্লব ঘটিয়েছে।
পদ্মার চরের বরই চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বালুযুক্ত পদ্মার চরে এক সময় অন্য ফসল করতে হিমশিম খেতে হয়েছে। বর্তমানে পদ্মার চরে বরই চাষ করে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে কলিগ্রামের বিদ্যুৎ আহম্মেদ, শফিকুল ইসলাম, আবদুর রাজ্জাক, জামাল উদ্দীন, সোনা মিঞা, ইউসুফ আলী, আশরাফুদৌলার মতো অনেকে।
পদ্মার চরে এখন সোনার ফসল ফলানো যায়, তা প্রমান করছেন এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকরা।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারী) পদ্মার চরে সরেজমিনে কুল বরই চাষের নতুন বিপ্লব চিত্র দেখা যায়। কুল চাষিরা কেউ বাজারজাত করার জন্য গাছ থেকে নামাচ্ছে, আবার কেউ পরিচর্চা করছে।
বরই চাষি বিদ্যুৎ আহম্মেদ বলেন, পদ্মার মধ্যে মানেকের চরে ৭ বিঘা জমিতে বল সুন্দরী বরই চাষ করেছেন। বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা। তবে বিঘা প্রতি গড় উৎপাদন আশা করছি ১৩০-১৫০ মণ। ৭ বিঘা জমিতে চলতি মৌসুমে প্রায় ৮ লাখ টাকার বরই বিক্রির আশা করছেন তিনি।
বল সুন্দরী বরই বাজারে প্রতিমণ ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনদিন আগে দুইমণ বরই ৭৫ টাকা প্রতিকেজি হিসেবে বিক্রি করা হয়েছে। এছাড়া বাউ ও থাই কুল বরই এর বাজারও ভালো আছে। দামও ভালো আশা করছেন তিনি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় সফল হয়েছি।
তবে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এখানকার বরই বিদেশে রফতানি করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, উপজেলায় ১৫০ হেক্টর জমিতে কুল চাষ হয়েছে। এরমধ্যে পদ্মার চরে চাষ হয়েছে ৭০ ভাগ। তবে বিভিন্ন ফসলের পাশাপাশি আর্থিকভাবে বরই চাষেও আগ্রহী হচ্ছে চাষিরা।
পাকুড়িয়ার সাদি এন্টারপ্রাইজের মালিক শফিকুল ইসলাম কন্টাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে আম চাষ করে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। ঢাকার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স আদাব ইন্টারন্যাশনাল ও বিএইচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে পেয়ারা, বরই ও পেঁপে পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।