বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি :
রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বী হওয়ার লক্ষে কৃষি ও ক্ষুদ্র শিল্প খাতে পুরুষের পাশাপাশি গ্রামীণ নারীরা অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছে। সীমান্তবর্তী উপজেলা হওয়ায় অত্র অঞ্চলে শিল্প প্রতিষ্ঠান তেমন একটা গড়ে উঠেনি। তবে হাতে গোনা যে দু’একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেখানে রাত-দিন সমানে কাজ করে যাচ্ছে নারীরা। এর ফলে তারা আর্থিকভাবে সাবলম্বী হচ্ছেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, এ অঞ্চলের দরিদ্র শ্রেণির নারী এবং উপজাতীয় মেয়েরা কৃষি প্রকল্প যেমন-ধান, পাট, গম, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, মসুর, সরিষা, হলুদ, বরই ইত্যাদি ফসল উৎপাদনে পেটে-পিঠে সন্তান বহন করে সাফল্যের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে গৃহস্থ ঘরের বধুরা খেতে-খামারে কাজ না করলেও ঘরে বসে ওই সমস্ত ফসলের সকল কাজই তারা করছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সৃষ্টির আদিকাল থেকে আজ পর্যন্ত সন্তান জন্ম দেয়া, গৃহশয্যা, ফসল উৎপাদন-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীরাই ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে। প্রাচীনকালে নারীরাই কেবল কৃষি কাজ করতো। এখন তা বিভক্ত হয়ে গেছে নারী-পুরুষে। এদিক থেকে বাঘার নারীরা ভিন্ন কিছু নয়।
আদি সমাজের মেয়েদের মতো এ অঞ্চলের দরিদ্র ও উপজাতীয় মেয়েরা প্রচুর পরিশ্রম করে খাদ্য উৎপাদ ও তা রক্ষার নিমিত্তে মাঠে, ঘাটে কল কারখানায় কাজ করে চলেছে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির লোকেরা সন্তান-কাঁধে ঝুলিয়ে অনেক শক্ত কাজ করছে। কৃষি ক্ষেত্রে এসব এলাকার গৃহস্থ ঘরের মেয়েরা যে বসে আছে তাউ নয়, তারা ঘরে বসে ফসল মাড়ায়, সুখানো, নিড়ানো প্রভৃতি কাজে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।
বাঘার আমোদপুর গ্রামের নারী শ্রমিক হাসিনা খাতুন ও সুরুলি বেগম বললেন, আমাদের জমি-জমা না থাকায় নিজেদের কর্মসংস্থানের কোন ব্যবস্থা নাই। এ কারণে বাধ্য হয়ে অন্যের কৃষি কাজ করে সংসার চালায়। অপর এক নারী রোকেয়া বেগম বললেন, আমাদের ২ বিঘা নিজের জমিতে ফসল উৎপাদন করতে কৃষি শ্রমিকের পারিশ্রমিক দেয়ার মতো সামর্থ না থাকায় আমার হাজব্যান্ডের কাজে সাহায্য করি।
বাঘার সুশীল সমাজের লোকজন জানান, এ অঞ্চলের নারীরা শুধু কৃষিতেই নয়, ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র কুঠির শিল্পেও তাদের প্রচুর অবদান রয়েছে। যেমন, সেরিকালচার প্রকল্পে পলুপোকা উৎপাদন ও সংরক্ষণ, এছাড়াও মৃত ও হস্থ শিল্পে গ্রামীণ নারীদের একক ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়।
বর্তমানে অত্র অঞ্চলের নারীদের গড়া হস্তশিল্পের নানা পন্য যেমন, নকশী কাঁথা, সূচী কর্ম, সেলাই ফোড়া, শাড়ি-পাঞ্জাবি সহ বিবিধ শিল্পের কাজ রাজধানী ঢাকা শহরের সুনাম খ্যাত আড়ং সহ দেশের বিভিন্ন মার্কেটে বিক্রী হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারীদের সাবলম্বী করে গড়ে তোলার লক্ষে বাঘার নারায়ণপুর গ্রামে অবস্থিত “আশার আলো’’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নারী উদ্যোক্তা ফাতেমা মাসুদ লতা প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে স্বর্ণ পদক পেয়েছেন। তার অধীনে কাজ করছেন শতাধিক নারী। লতার মতে, বর্তমান সরকার নারীদের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করছে। আমি একজন উপলক্ষ মাত্র।
এ দিকে উপজেলার মীরগঞ্জে ব্রিটিশ আমলে গড়ে ওঠা সেরিকালচারে (রেশম শিল্প) নারী পুরুষ সমানে উৎপাদনমুখি কাজ করে চলেছে। এখানে কোন পোষাক তৈরি না হলেও তাদের উৎপাদিত পলু পোকার সৃষ্ঠ গুটি চলে যাচ্ছে বিভাগীয় শহর রাজশাহীর সিল্ক কারখানায়। তৈরি হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী সিল্ক শাড়ি সহ নানা রকমের পোষাক। আর এসব ক্ষেত্রে অত্র অঞ্চলের গ্রামীণ নারীদের ভূমিকাই অগ্রগণ্য।
এক কথায় আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তনের লক্ষে অত্র অঞ্চলের দরিদ্র শ্রেণির নারীরা পুরুষের পাশাপাশি কাজের সন্ধানে ছুটে চলেছে কৃষি থেকে শিল্প,বাসা-বাড়ি এমনটি কল কারখানা পর্যন্ত। তারা কাজের ক্ষেত্রে কোন কিছুকেই তোয়াক্কা করছে না। বেরিয়ে আসছে খোলা আকাশের নিচে। এর ফলে স্বাবলম্বী হচ্ছে তাদের পরিবার।