বাঘায় পদ্মার চরে কুল চাষে নতুন বিপ্লব

আপডেট: জানুয়ারি ৯, ২০১৭, ১২:০২ পূর্বাহ্ণ

বাঘা প্রতিনিধি



বাঘা উপজেলার পদ্মার চরের মধ্যে নবগঠিত চকরাজাপুর ইউনিয়ন। এই চরে কুল চাষ এনে দিয়েছে নতুন বিপ্লব। রোদ আর বালুর কারণে বছরের পর বছর পদ্মার চরে ৫ হাজার ২৮৬ হেক্টর জমি অনাবাদি ছিল। বর্তমানে এই জমিতে পেঁয়াজ, রসুন, মসুর, গম, সরিষা, আখ, ধান, হলদু, আদা ও শাকসব্জির পাশাপাশি চাষ হচ্ছে কুল।
জানা যায়, পদ্মার চরে কুল চাষে আতœনিয়োগ করেছে এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকরা। পতিত জমিতে কুল চাষ করে একদিকে চাষিরা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হচ্ছেন, অন্যদিকে পুষ্টির ঘাটতি পূরণসহ জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে। কম খরচে বেশী লাভের আশায় চকরাজাপুর ইউনিয়ন এলাকার চাষিরা আপেল, বাউ ও থাই জাতের কুল চাষ করে নতুন বিপ্লব ঘটিয়েছে।
পদ্মার চরের কুল চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বালিযুক্ত পদ্মার চরে এক সময় অন্য ফসল করতে হিমশিম খেতে হয়েছে। বর্তমানে এই পদ্মার চরে কুল চাষ করে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে শফিকুল ইসলাম, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক, জামাল উদ্দীন, সোনা মিঞা, ইউসুফ আলীর মতো অনেকে। পদ্মার চরে এখন সোনার ফসল ফলানো যায়, তা প্রমান করছেন এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকরা।
শফিকুল ইসলাম ছানা বলেন, আমি পদ্মার চরে ১০৪ বিঘা জমিতে কুল চাষ করেছি। বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। তবে বিঘা প্রতি গড় উৎপাদন আশা করছি ১৩০ মণ। চলতি মৌসুমে প্রায় এক কোটি টাকার কুল বিক্রির আশা করছি।
বাঘা পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক বলেন, গত মৌসুমে প্রথম দিকে আপেল কুলের বাজার ছিল প্রতিমণ এক হাজার ৫০০ টাকা। মাঝামাঝি সময়ে তা কমে এক হাজার ২০০ টাকায়। তবে বাউ ও থাই কুলের বাজার ভালো ছিল। আমি ৩০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে কুল চাষ করেছি।
গড়গড়ি গ্রামের জামাল উদ্দীন ৪০ বিঘা জমিতে কুল চাষ করেছেন বলেন জানান। এই মৌসুমে গাছে ভালো কুল আছে। ভালো দাম আশা করছেন তিনি।
বাউসা গ্রামের মুনজু সরকার সমতল জমিতে ২০ বিঘা জমিতে কুল চাষ করেছেন। তিনি এমএ পাশ করে কৃষিকে পেশা হিসেবে নিয়ে লাভবান হচ্ছেন বলেন জানান।
আরেক কুল চাষি সোনা মিঞা বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় সফল হয়েছি। তবে সরকারি পৃষ্ঠ পোষকতা পেলে এখানকার কুল বিদেশে রফতানি করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
উপজেলার বাউসা সরকার পাড়া গ্রামের মিঠন আলী বলেন, আমি ধান, পেঁপে, কলা ও গরুর খামারের পাশাপাশি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে গত মৌসুমে মাত্র ১৬ শতাংশ জমিতে আপেল কুল চাষ করেছি। এই মৌসুমে প্রায় অর্ধ লক্ষ হাজার টাকার কুল বিক্রির আশা করছি। তবে আমার কুল বাগান দেখে এলাকার অনেকে কুল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবিনা বেগম বলেন, উপজেলায় দুই শতাধিক হেক্টর জমিতে কুল চাষ হয়েছে। এরমধ্যে পদ্মার চরে বেশি চাষ হয়েছে। তবে বিভিন্ন ফসলের পাশাপাশি আর্থিকভাবে কুল চাষেও আগ্রহী হচ্ছে চাষিরা। কুল চাষের গবেষণা চালিয়ে উন্নত জাত সৃষ্টি করে আবাদ করলে আমের মতো বিদেশে রফতানি করে অর্থনৈতিকভাবে চাষিদের স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ