শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১১ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
আমানুল হক আমান, বাঘা
বাঘায় পাট আঁশ ছাড়াতে ব্যস্ত রয়েছেন চাষিরা-সোনার দেশ
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মাঠে মাঠে এখন পাট কাটা, জাগ দেয়া, আঁশ ছাড়ানো এবং শুকানো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। উপজেলার বিভিন্ন বাজারে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। বর্তমানে বিভিন্ন হাট-বাজারে মানভেদে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৩শ টাকা থেকে এক হাজার ৫শ টাকায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলায় দুই হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এবার ৫৫০ হেক্টর বেশি জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। গতবার চাষ হয়েছিল দুই হাজার ৩৮০ হেক্টর জমিতে। এবার পাট চাষের মোটামুটি অনুকূল আবহাওয়া ছিল। কিন্তু শুরুর দিকে কোনো কোনো স্থানে বেশি বৃষ্টিপাতে কিছু রোপন করা পাট নষ্ট হয়েছিল। বর্তমানে পাট কাটা, জাগ দেয়া, আঁশ ছাড়ানো এবং শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষিরা। উপজেলার বিভিন্ন বাজারে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে।
গত শুক্রবার (৪ আগস্ট) উপজেলার দিঘা হাটে পাট বিক্রি করতে আসা দিঘা গ্রামের মকুল হোসেন বলেন, এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে লাঙ্গল, বীজ, সেচ, কাটা, পরিস্কার করা, সারসহ যাবতীয় খরচ হয় সাড়ে সাত থেকে আট হাজার টাকা। এবার উৎপাদন হচ্ছে ১০ থেকে ১২ মণ। বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ১২ হাজার টাকা থেকে ১৩ হাজার টাকায়।
চকরাজাপুর চরের পাট চাষি আমিরুল ইসলাম বলেন, জমিতে পানি থাকায় পাটগাছ কাটা শ্রমিকদের অনেক বেশি মজুরি দিতে হচ্ছে। গতবার পাট চাষ করে লোকসান গুণতে হয়েছে। এবার লোকসান না হলেও, লাভ হবে না বলে তিনি জানান। বর্তমান বাজারে মানভেদে প্রতি মণ পাটের দাম এক হাজার ২শ থেকে এক হাজার ৫শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাটের ফড়িয়া ব্যবসায়ী দিঘা গ্রামের ইদ্রিস আলী বলেন, এই এলাকার চাষিরা খুব একটা যত্ন নিয়ে পাট ধোয়ার কাজ করে না। এতে করে অন্য জেলার পাটের মানের চেয়ে আমাদের পাটের মান ও রং ভালো হয় না।
পাট ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, নওগাঁয় প্রতিমণ পাটের দাম এক হাজার ৫শ থেকে দুই হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এই এলাকার পাটের মান ভালো না হওয়ার কারনে দাম তুলনামূলক কম পায় চাষিরা।
পাট সংরক্ষণকারী দিঘা গ্রামের ব্যবাসায়ী আজিজুল হোসেন বলেন, পাট কিনতে শুরু করেছি। পুরোপুরিভাবে এখনও বাজারে পাট আসতে শুরু করে নি। তবে পাটের দাহিদা আছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এবার অন্য এলাকার পাট কম চাষ হয়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে স্থানীয়ভাবে পাটকল। এছাড়াও বিভিন্ন মোকামে পাটের টান রয়েছে।
আড়ানী মনোমোহীনি উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক কামরুল হাসান জুয়েল বলেন, সরকারিভাবে খাদ্য বিভাগ ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান পাটের ব্যাগ ব্যবহার করে না। যদি সার কারখানা, চিনিকল, সিমেন্ট কারখানা, চাল ও আটাসহ বেশিরভাগ কারখানায় পাটের ব্যাগ ব্যবহার করা হলে পাটের দাম বাড়ত বলে মনে করেন তিনি। আবার বিভিন্ন পণ্যের মোড়কের জন্য দেশের বিপুল অর্থ বিদেশে যেত না। বেঁচে যেত দেশীয় পাট শিল্প।
শ্রমিক আবুল হোসেন বলেন, একশ পাটের আঁশ ছাড়ালে ২শ টাকা পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিদিন সাড়ে তিনশ থেকে সাড়ে চারশ (হাবল) পাটের আঁশ ছাড়ানো যায়।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবিনা বেগম বলেন, পাটের জমিতে কিছু পানি থাকলে আঁশের কোনো ক্ষতি হয় না। তবে অপরিপক্ক পাট কাটলে উৎপাদন ব্যাহত হবে। বর্তমান বাজারে আসা পাটগুলো হয়তো পরিপক্ক হওয়ার আগে কাটা হয়েছে ফলে ফলন কিছুটা কম হচ্ছে। এছাড়া পাট ব্যবসায়ীরা পুরোপুরি পাট কিনতে শুরু করলে দাম আরও বাড়বে।