বাঘায় সাড়ে তিন মাসেও সম্মানির টাকা ফেরত দেয় নি ৫৭ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৭, ১২:০২ পূর্বাহ্ণ

আমানুল হক আমান, বাঘা



রাজশাহী বাঘায় সাড়ে তিন মাসেও ৫৭ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সম্মানি ভাতার টাকা ফেরত দেয়া হয় নি। ২০১৬ সালের ৩১ অক্টোবর ৫৭ জন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সম্মানি ভাতার টাকা ফেরতের নোটিশ প্রদান করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হামিদুল ইসলাম।
জানা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫৭ জন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা প্রাপ্তির তালিকাভুক্ত হয়। তারা অবৈধভাবে মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত হয় মর্মে অভিযোগ করা হয়। এই অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে ভুয়া প্রমাণিত হয়। ফলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাদের উত্তোলনকৃত টাকা ফেরতের নোটিশ প্রদান করেন।
উপজেলায় দুইটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নের ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৩৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়মিত সম্মানি ভাতার টাকা উত্তোলন করতেন। পরে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫৭ জন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা প্রাপ্তির তালিকাভুক্ত হয়। ২০১৪ সাল থেকে মোট ৪১৫ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়োমিত তাদের সম্মানি ভাতা উত্তোলন শুরু করেন। নতুন মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা প্রকাশের পর স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা রয়েজ উদ্দিন ৬০ জনের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে একটি অভিযোগ প্রেরণ করেন। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এই যাচাই-বাছাইয়ে লাল মুক্তিবার্তা, গেজেট, সনদ জাল, জন্ম তারিখ গড়মিলের কারণে ৫৭ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ভুয়া হিসেবে গণ্য হয়। বাকি তিনজনের কিছু কাগজপত্র না থাকায় তাদের অপেক্ষামান তালিকায়  রাখা হয়। এই ৫৭ জনকে ২০১৬ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে তাদের উত্তোলনকৃত টাকা সোনালী ব্যাংক হিসাব নম্বরে ফেরত দেয়ার জন্য নোটিশ প্রদান করেন। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কোন টাকা ফেরত দেয়া হয় নি বলে সোনালী ব্যাংক, বাঘা শাখার ব্যবস্থাপক নিশ্চিত করেন।
এদিকে তালিকা থেকে বাদ পড়া মুক্তিযোদ্ধার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিত উপজেলায় সাত সদস্য বিশিষ্ঠ কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি ২৮ জানুয়ারি যাচাই-বাছাইয়ের দিন ধার্য করা হয়। এই কমিটির মধ্যে তিনজন উপস্থিত না হওয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয়।
অপরদিকে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে জামুকার ডাইরেক্টর জেনারেলসহ সাতজনকে বিবাদী করে কমিটির কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে গত ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুল খালেক সরকার। এই যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রথমে তার নাম থাকলেও পরে বাদ দিয়ে বীরপ্রতীক আজাদ আলীর নাম সংযুক্ত করা হয়। ফলে আগের কমিটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন তিনি। রিট আবেদনের শুনানি শেষে গত ৩১ জানুয়ারি বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ তিন মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হামিদুল ইসলাম বলেন, ৫৭ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতা ফেরতের নোটিশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া উপজেলায় ৪৮০ জন আবেদন করেন। এই আবেদনকারীদের যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সাত সদস্যের তালিকা আসে। ফলে গত ২৮ জানুয়ারি সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য আবেদনকারী মুক্তিযোদ্ধারা নিজ নিজ তথ্য প্রদানের জন্য উপজেলা চত্বরে সমবেত হয়। কিন্তু সাত সদস্যের কমিটির মধ্যে তিনজন সদস্য উপস্থিত না হওয়ায় কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ