মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
আমানুল হক আমান, বাঘা
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী আড়ানী পালপাড়া গ্রামের মৃৎশিল্পীরা তাদের পূর্ব পূরুষের পেশা ছেড়ে দিতে বসেছে। অনেক পেশার মতো এ গ্রামের কুমাররাও এতোদিন টিকে ছিলেন নানা প্রতিকূলতার মধ্যে। কিন্তু এটেঁল মাটি না পাওয়ায় ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, এনজিও গুলোর কড়া সুদে ঋণ, এবং তাদের তৈরী জিনিসের চাহিদা কমে যাওয়ায় তারা পেশা বদল করছে।
উপজেলায় আড়ানী পৌরসভার পালপাড়া গ্রামে ১০ থেকে ১২টি পাল পরিবার রয়েছে। সবুজ শ্যামল ছায়াঘেরা গ্রামটির শোভা বর্ধন করে পালদের নিপুন হাতে মাটির কলস, চাড়ি, সারা, ঢুকসা, রুটি ভাজা খোলা, মুড়ি ভাজা ঝিকন, ঝাঝর, ধুপচি, ব্যাংক, ঘট, টব, হাঁড়ি পাতিলসহ মাটির তৈরী নানা বৈচিত্রের খেলনা সামগ্রী। তাদের তৈরী বাসনপত্র দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে ঠেলাগাড়ি ও ভারে করে। যান্ত্রিক সভ্যতা যুগে মাটির তৈরী সামগ্রীর পরিবর্তে প্লাস্টিক সামগ্রীর সহজলভ্যে দাম কম হওয়ায় তাদের তৈরী জিনিসের চাহিদা অনেক কমে গেছে।
মঙ্গল আড়ানী হাটে কথা হয় মনি পদ পালের সাথে। এ সময় তিনি বলেন, আমার বয়স প্রায় ৮০ বছর। আমার দুই ছেলে সাত মেয়ে। এই কাজ করে সবাইকে বিয়ে দিয়েছি। এখন শরীর চলেনা। তবুও পেশা হিসেবে এ কাজ করতে হচ্ছে। তিনি মাটির তৈরী নানা বৈচিত্রের জিনিস নিয়ে বসে আছেন। সারাদিন তার বিক্রি হয়েছে প্রায় এক হাজার টাকা। এই থেকে লাভ হবে দেড় থেকে ২০০ টাকা। সাত সদস্যের পরিবার। এভাবে চলছে দীর্ঘ ৮০ বছর। বাবার মৃত্যুও পর এই পেশার সাথে জড়িয়ে পড়ে। পেশা পরিবর্তন করার ইচ্ছা থাকলেও অর্থেও অভাবে পরিবর্তন করতে পারছেন না।
প্রশান্ত পাল বলেন, আগের মতো তাদের জিনিসের আর কদর নেই। এ পেশায় থেকে এখন স্বাবলম্বী হওয়া বড় কঠিন। সত্যেন পাল বলেন, এ শিল্পকে ধরে রাখার জন্য পুঁজি নেই। বাধ্য হয়ে পেশা ছেড়ে দিতে হবে। তারা পদ পাল পাল বলেন, এনজিও গুলোর কড়া সুদের কারনে ঋণ পাওয়া গেলেও লাভ টিকে না।
এছাড়া আড়ানীর ঐতিহ্যবাহী পালপাড়ায় পাল সম্প্রদায়ের মধ্যে মধুর সম্পর্ক লক্ষনীয়। পাল সম্প্রদায়টিতে আগের তুলনায় শিক্ষার হার একটু বেড়েছে। জিতেন পাল বলেন, এ পেশা ছেড়ে দিয়ে ছেলে-মেয়েদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলা অনেকে ভালো আছে।
এ বিষয়ে আড়ানী পৌর মেয়র মুক্তার আলী বলেন, পালদের এ কাজে বউ-ঝিসহ বাড়ির ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা সহযোগিতা করে। ফলে পালদের অনেক ছেলে-মেয়ে সুশিক্ষিত হওয়ার আগেই ঝরে পড়ে। এখন ধীরে ধীরে তারা শিক্ষার মর্যাদা বুঝতে পেরেছে। এ কারণে তাদের ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে শুরু করেছে।