বাঙালি জাতিসত্তার ধারক ও বাহক বঙ্গবন্ধু

আপডেট: আগস্ট ৫, ২০১৭, ১২:৪৮ পূর্বাহ্ণ

সোনার দেশ ডেস্ক


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন আপাদমস্তক একজন খাঁটি বাঙালি। সহজ সরল জীবনযাপনের মাধ্যমে তিনি নিজকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বাঙালিয়ানার প্রবাদপুরুষ হিসেবে। কথাবার্তা, চলনে-বলনে, পোশাকে তিনি ছিলেন একজন স্বার্থক বাঙালি। বঙ্গবন্ধুর চরিত্রেই ছিল অগাধ দেশপ্রেম, নিজের ভাষা-সংস্কৃতি ও মানুষের প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসা। তিনি সব সময় সাদামাটা পোশাক পরিধান করতেন। বাইরে পায়জামা ও পাঞ্জাবি পরলেও ঘরে তিনি তাঁতের লুঙ্গি ও হাতকাটা গেঞ্জি পরতেন। পছন্দ করতেন বাঙালির চিরায়ত খাদ্য ভাত ও মাছ। সকালের নাস্তায় রুটির পরিবর্তে পান্তাভাত খেতেই বেশি পছন্দ করতেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছিলেন যেসব কারণে- সেগুলো হলো : লক্ষ্যবিচ্যুত না হওয়া, লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য একাগ্রতা, সাহস, সহৃদয়তা, মানবিকতা, আত্মত্যাগ, সত্যনিষ্ঠা এবং সহিষ্ণুতা। তার চলাফেরা, পোশাক-পরিচ্ছদ, কথাবার্তা, চালচলন সবকিছুর মধ্যেই ছিল বিশাল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে বন্ধন অটুট রাখার ইচ্ছা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইতিহাসের সেই মহামানব- সময় যাকে সৃষ্টি করেনি, যিনি সময়কেই নিজের করতলে নিয়েছিলেন। যিনি কঠিন স্বরে নিজস্ব ভঙ্গিতে উচ্চারণ করেছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ পঙক্তি ‘আমাদের আর দাবায়ে রাখবার পারবা না।’ বঙ্গবন্ধু জাতির সামনে এই অমর বাক্যটি দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, বাঙালির জীবনে এ ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি ঘটবে না।
বাঙালির ক্ষমতা সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জানতেন বঙ্গবন্ধু। বাঙালিকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন তিনি। আর তাই সুযোগ পেলেই গর্বিত বাঙালির বিশ্ব জয় করার ক্ষমতা জানিয়ে দিতেন সবাইকে। জাতিসংঘ ভাষণও এর ব্যতিক্রম নয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরে তিনিই সেই মানুষ, যিনি বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক দরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বাঙালির এই অসাধারণ অর্জন বঙ্গবন্ধুর মেধা ও তার রাষ্ট্রীয় দর্শনের কারণেই সম্ভব হয়েছিল। ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভের পর ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাঙালির প্রাণের ভাষা বাংলায় ভাষণ দেন। সেই ভাষণেও বাঙালির গৌরবগাঁথা ইতিহাস তুলে ধরে বিশ্ববাসীকে আরো একবার জানান বঙ্গবন্ধু।
বক্তৃতায় খুব দৃঢ়ভাবেই বাঙালির ত্যাগ-তিতিক্ষা আর আত্মবিশ্বাসকে একসূত্রে গেঁথে আত্মপ্রত্যয়ী বাঙালি নেতা শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, আমরা দুঃখ ভোগ করিতে পারি। কিন্তু মরিব না। টিকিয়া থাকার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করিতে জনগণের দৃঢ়তাই চরম শক্তি। আমাদের লক্ষ্য স্বনির্ভর। আমাদের পথ হইতেছে জনগণের ঐক্যবদ্ধ ও যৌথ প্রচেষ্টা।’ বক্তৃতার শেষ অংশে খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গের অবতারণা করে তিনি বলেন, ‘আমাদের নিজেদের শক্তির ওপর আমাদের বিশ্বাস রাখিতে হইবে। আর লক্ষ্য পূরণ এবং সুন্দর ভাবীকালের জন্য আমাদের নিজেদের গড়িয়া তুলিবার জন্য জনগণের ঐক্যবদ্ধ ও সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমেই আমরা আগাইয়া যাইব।’ এমন সুন্দর স্বপ্নের কথা জানিয়ে বক্তৃতা শেষ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
ঘাতকের নির্মম বুলেটে সপরিবারে প্রাণ হারানোর ৪২ বছর পর বঙ্গবন্ধু ফিরে এসেছেন জাতির হৃদয়ে। আজ বাঙালির প্রতীক বঙ্গবন্ধু। ইতিহাসের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। ২০০৪ সালে বিবিসি জরিপেও মানুষের হৃদয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর নামই ওঠে এসেছে।