বাচাল, বিতর্কিত মন্ত্রীরা বাদ পড়ায় স্বস্তি

আপডেট: জানুয়ারি ১৪, ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

নতুন মন্ত্রিপরিষদ নিয়ে আশাবাদ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর টানা চতুর্থবারের মত সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। ১১ জানুয়ারি টানা চতুর্থবারের মত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। সেই সাথে আগামী পাঁচ বছরের দায়িত্ব নিয়েছেন আওয়ামীলীগ সরকারের নতুন মন্ত্রিসভার ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রী।

এবারের মন্ত্রিসভায় বেশ চমক আছে। নবীন ও প্রবীণদের নিয়ে এই মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছে। একাদশ মন্ত্রিপরিষদের হেভিওয়েট মন্ত্রির বেশ কয়েকজন এবার বাদ পড়েছেন। তবে মন্ত্রিসভায় কারা এলেন তার চেয়েও দেশের মানুষের আগ্রহ ছিল কারা বাদ পড়লেন। বিশেষ করে অযোগ্য, অথর্ব, বিতর্কিত মন্ত্রীদের বাদ পড়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে উল্লাস লক্ষ্য করা গেছে। ওই মন্ত্রীরা বেফাস কথা বলে দল ও জাতীয় স্বার্থকে যেমন প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন, তেমনি কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেশের মানুকে নিয়ে মস্করা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য জ্ঞান করেছেন। ওই মন্ত্রীদের কর্মকাণ্ড ও বাচনভঙ্গিতে দেশের মানুষকে ছোট করে দেখার প্রবণতাও লক্ষ্য করা গেছে। দেশের মানুষ ওই মন্ত্রীদের নিয়ে ত্যক্ত-বিরক্ত ছিল। চলতি মেয়াদে তারা মন্ত্রিপরিষদ থেকে বাদ পড়ায় সাধারণ মানুষ খুশি।

একাদশ সংসদের মন্ত্রিসভা থেকে যে ৩০ জন মন্ত্রী বাদ পড়েছেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত ছিলেন বিদায়ী বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সাবেক অর্থমন্ত্রী আ. হ. ম মোস্তফা কামাল, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ.কে আবদুল মোমেন, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। এদের বেফাস ও দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দল ও সরকারকে বেকায়দায় ফেলেছে। তাদের লাগামহীন বক্তব্য দেশের মানুষকে ক্ষুব্ধ করেছে। মূল্যস্ফিতির লাগাম ধরে রাখতে ব্যর্থ হলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী দেশের মানুষের দারিদ্র নিয়ে তামাসা পর্যন্ত করেছেন। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে অযোগ্যতা ঢাকতে মন্ত্রী সিন্ডিকেটের ওপর দোষ চাপিয়েছেন।

অর্থপাচার, ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম এবং বিশৃঙ্খলার অবস্থা জাতীয় আলোচনার তুঙ্গে ছিল। খেলাপি ঋণ সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে সাবেক অর্থমন্ত্রীর আমলে। অথচ তিনি কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে পারেন নি। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে নিয়ে অভিযোগের শেষ ছিল না। ডেঙ্গুর প্রকোপের সময়ে মালয়েশিয়ায় গিয়ে মানিকগঞ্জ আছেন বলে অসত্য তথ্য প্রদান করে বিতর্কিত হন। করোনার সময় সীমাহীন ব্যর্থতা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তার মন্ত্রী থাকাকালে। এবার মন্ত্রিত্ব থেকে যারা বাদ পড়েছেন তাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ উঠেছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগ রাজনীতির জন্য বিশেষ কিছু অভিজ্ঞতারও জন্ম দিয়েছে। মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে প্রার্থী নির্বাচনে যে বড় ধরনের ভুল হয় তা বিপুল সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থীর জয় সে সত্যকেই সামনে এনেছে। প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে এবং মন্ত্রিপরিষদে যোগ্যদের খুঁজে নিতে যাতে ভুল না হয়Ñ সে ব্যাপারে সতর্ক হতেই হবে।

নতুন মন্ত্রিপরিষদ আশা জাগাচ্ছে। নবীন প্রবীণ মিলে গঠিত মন্ত্রিসভা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রজ্ঞা ও দুরদর্শিতারই পরিচায়ক। মন্ত্রিদের অনেকেই আছেন যারা সৎ ও মেধাবী, কেউ কেউ পরিক্ষীত। মন্ত্রিপরিষদে রাজনীতিকদের প্রাধান্যও আছে। তদুপরি কোনো মন্ত্রীর বিরেুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি অভিযোগ উঠলে তা খতিয়ে দেখার ব্যবস্থা থাকতে হবে। দেশের মানুষের চিন্তার সাথে সরকারের চিন্তার মিল সম্পৃক্ততা উন্নয়নের জন্য বড় গরজ হওয়া বাঞ্ছনীয়।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ