নিজস্ব প্রতিবেদক ও রাবি প্রতিনিধি:
বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন। প্রস্তাবিত বাজেটকে যৌক্তিক, বাস্তবসম্মত ও সংকট উত্তরণে কৌশলগত কল্যাণময় বলছেন রাজশাহীর শিক্ষক, রাজনৈতিক-ব্যবসায়ী-সামাজিক সংগঠনের নেতা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
‘টেকসই উন্নয়নের পরিক্রমায় স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা ’ শীর্ষক এ বাজেট প্রকৃত পক্ষেই স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রায় ব্যতিক্রমি বাজেট বলে মনে করছেন তারা। এই বাজেট নিয়ে নাগরিক প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হলো-
রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, আমাদের অর্থনীতি বর্তমানে কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। যেমন: মুদ্রাস্ফীতি, রিজার্ভ কমে যাওয়া, টাকা মানের অবমূল্যায়ন প্রভৃতি। এই পটভূমিতে সরকার এবার কিছুটা আঁটসাঁট বাজেট দিয়েছে। এবার সরকার সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা এবং অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে মনোযোগ দিয়েছে। অগ্রাধিকার পাওয়ার মত খাতগুলোতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এটা দেশের জন্য ভালো হবে। আর মূল্যস্ফীতি কমানের টার্গেট করা হয়েছে। কিন্তু কিভাবে কমানো হবে, সে বিষয়ে সঠিক পথনির্দেশনার অভাব আছে।
একই বিভাগের আরেক অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, বাজেটের ভালো দিক হলো- সিগারেট, এসিসহ কিছু পণ্যের কর বাড়ানো হয়েছে। এটা ঠিকই আছে। আবার কিছু চিকিৎসা যন্ত্রপাতির দাম কমানো হয়েছে। এটাও ভালো। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের প্রধান দুইটি সমস্যা হলো মূল্যস্ফীতি ও বৈষম্য। এই বিষয় দুইটি বিষয় বাজেটে আরও গুরুত্ব পেতে পারতো।
নগরীর উপশহর এলাকার বাসিন্দা গৃহিণী মোসা. তাহরিমা খাতুন বলেন, অস্থীতিশীল নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার ব্যবস্থার মধ্যে এবারের বাজেট নিয়ে সাধারণ মানুষ হিসেবে আমিও উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিলাম। কারণ বাজেটের নীতি নির্ধারণী বিষয়ের উপর বাজারের পণ্য মূল্যের বিষয়টি সরাসরি সম্পৃক্ত। তবে বাজেট নিয়ে মোটামুটি স্বস্তিজনক মনে করছি। কারণ বাজেটে এবার সুনির্দিষ্টভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানোর বিষয়টি এসেছে। তবে শুধু কমানোর ইঙ্গিত দিলেই চলবে না, সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণেও সরকার কার্যকরি উদ্যোগ দিবেন বলে প্রত্যাশা রাখি।
উন্নয়নকর্মী মো. ফয়েজুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে আপতত দৃষ্টিতে এই বাজেটকে ইতিবাচক হিসেবেই মনে হচ্ছে, যদি তা কার্যকরভাবে বাস্তাবয়ন হয়। এবারের বাজেট সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন হলে বর্তমানে যে সংকট আছে, তা উত্তোরণের পথ পাওয়া যাবে বলে মনে করছি। বাজেটে সুনির্দিষ্টভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল-ডাল-মসলার মতো পণ্যে দাম কমানোর বিষয়টি আছে। যা কল্যানমুখী বাজেটের অন্যতম একটি। সুতরাং আমার কাছে মনে হয়েছে, এ বাজেটকে কল্যাণমুখী করার আন্তরিক প্রচেষ্টা আছে। একই সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার করার কৌশলগত নীতিও এ বাজেটে আছে।
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, সার্বিকভাবে এবারের বাজেট ভালো বলেই মনে হয়েছে। তবে রাজশাহীতে ভারী শিল্প নেই, এই অঞ্চলটি মূলত কৃষিভিত্তিক। দেশের ১৮টি জেলায় মাছ সরবরাহ হয় রাজশাহী থেকে। প্রতিদিন ৬-৭ কোটি টাকার মাছ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে এই অঞ্চলের পান ও সবজি দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। ফলে রাজশাহীতে কেন কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র দীর্ঘ দিনের দাবি। এছাড়া রাজশাহী অঞ্চলের আমের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। কিন্তু দেশে একটিও আন্তর্জাতিক মানের আমের জুস উৎপাদন হয় না। বাজেট আলোচনায় এসব বিষয় আমলে নিয়ে সুনির্দিষ্ট পৃথক বরাদ্দ থাকবে এমন প্রত্যাশা থাকবে।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামালা বলেন, জনগণের ভালো-মন্দ সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই সরকার বাজেট করেছে। এবারের বাজেটকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে এ বাজেট গুরুত্ব ভূমিকা রাখাবে বলেই বিশ্বাস করি।