শনিবার, ১ এপ্রিল, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
বায়ুদূষণের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করতে যাচ্ছে সরকার। এছাড়াও বায়ুমানের তারতম্য নির্ধারণে গঠন করা হবে একটি কারিগরি কমিটি। ২ ফেব্রুয়ারি বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির প্রথম সভা মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
রাস্তায় পানি ছিটানোসহ রাস্তার ধুলাবালি পরিষ্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পৌরবর্জ্য পোড়ানোর বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশন নিয়মিত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। খোলা ট্রাকে যাতে মাটি, বালি, ময়লা পরিবহন করতে না পারে সে বিষয়ে বিআরটিএ ও পুলিশ বিভাগ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
সভায় বায়ু দূষণকারী পোড়ানো ইটের বিকল্প ব্লক ইটকে সহজলভ্য ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য করণীয় নির্ধারণ বিষয়ে একটি সুপারিশমালা প্রণয়ন ও দাখিল করতে বলা হয়।
এই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো- যখন বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় আবারও শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকা। ৩০ জানুয়ারি বেলা ১১টার দিকে আইকিউ এয়ারের শীর্ষে ছিল শহরটি। স্কোর ছিল ২৮০। এসময় ঢাকার বাতাসের মান ছিল ‘ঝুঁকিপূর্ণ’। বায়ুদূষণে দূষিত শহরের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভিয়েতনামের হ্যানয়। একই সময়ে শহরটির একিউআই স্কোর ১৮৬।
বায়ু দৃষণ বিশ্বব্যাপি একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জন শ্বাসের মাধ্যমে দূষিত বায়ু গ্রহণ করছে। বায়ু দূষণের কারণে সৃষ্ট বিভিন্ন রোগে বছরে ৭০ লাখ মানুষ মারা যায় বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। যাদের বেশিরভাগই নি¤œ ও মধ্যম আয়ের দেশের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত কয়েক বছরের সমীক্ষা অনুযায়ী বায়ুদূষণের ফলে কমছে মানুষের আয়ু। হাঁপানি, ক্যানসার, হৃদরোগ, ফুসফুসের অসুখসহ অনেক রোগের কারণ বায়ুদূষণ। এ রোগ বৃদ্ধির জন্যও বায়ুদূষণ দায়ী। বায়ুদূষণের দৈনিক অর্থনৈতিক ক্ষতি প্রায় ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা মোট বিশ্ব উৎপাদনের ৩ থেকে ৪ শতাংশ।
বায়ুদূষণের বিরুদ্ধে সরকার অভিযান জোরদার করতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা খুবই আশাব্যঞ্জক কিন্তু এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের উদ্যোগ আদৌও এগোবে কি? কেননা সিদ্ধান্ত হয়, উদ্যোগ নেয়া হয় কিন্তু উদ্যোগ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না। মহামান্য হাইকোর্টের দেয়া ৯ দফা নির্দেশনায় সড়ক পরিবহন আইনের বিধান অনুযায়ী পরিবহনের ‘ইকোনমিক লাইফ’ নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে। যেসব পরিবহনের ইকোনমিক লাইফের মেয়াদ শেষ হয়েছে, সেসব পরিবহন চলাচলে নিষিদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু হাইকোর্টের এই নির্দেশনার বাস্তব প্রয়োগ দেখা যায় না।
রাজধানী ঢাকা বারবার বায়ু দূষণে এগিয়ে থাকছে কেন? উদ্যোগ নেয়া হলেও তা যে বাস্তবায়িত হয় না এটা তারই সাক্ষ্য দেয়। বায়ুদূষণ কমানোর ক্ষেত্রে রাজশাহী শহর সারা বিশ্বের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাজশাহী আদর্শ শহর। রাজশাহীকে আদর্শ ধরে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা কিংবা দেশের অন্য শহরগুলোয় বায়ুদূষণ কমাতে স্থানসমূহের বাস্তবিক পরিস্থিতি বিবেচনায় উদ্যোগ নিলে সুফল পাওয়া যাবে। এর জন্য সদিচ্ছাটা থাকতে হবে। লোভের আকাক্সক্ষা সব সময় জিতে গেলে দূষণমুক্ত বায়ুর আকাক্সক্ষা হেরে যাবে এটাই স্বাভাবিক। শহরগুলোকে সত্যিকার অর্থেই বাসযোগ্য করতে হলে লোভ ও দুর্নীতির বাইরে এসে সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে হবে।