বিএনপি নেতা চাঁদ গ্রেফতার, ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর, ফৌজদারি আইনে মামলা পরিচালনায় হাইকোর্টের নির্দেশ

আপডেট: মে ২৬, ২০২৩, ১:১১ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:


প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দেওয়ার মামলায় রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (২৫ মে) বিকালে রাজশাহী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪ এর বিচারক মাহবুব আলম তার রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ২১ মে রাতে পুঠিয়া থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার দেখানোসহ চাঁদকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুঠিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুজন আলী।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে তার আবেদনে বলেন, আবু সাঈদ চাঁদ একজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী নেতা। অতীতে হত্যা, অগ্নিসংযোগ, গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া এবং নাশকতাসহ অর্ধ শতাধিক মামলা রয়েছে তার নামে। গত ১৯ মে বিকালে একটি সমাবেশে যে প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি হত্যার হুমকি দিয়েছেন। এ ধরনের হুমকির ঘটনা বিএনপি নেতা চাঁদের ব্যক্তিগত নাকি, দলীয় সিদ্ধান্ত তা জানতে তাকে ব্যাপকমাত্রায় জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। এ কারণে তাকে রিমান্ডে নেওয়া দরকার। আদালতে পেশকৃত তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের কারণে চাঁদের পক্ষে এদিন জামিনের আবেদন করতে পারেননি তার আইনজীবীরা।

এদিকে শুনানিতে রিমান্ডের বিরোধিতা করে বক্তব্য তুলে ধরেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট পারভেজ তৌফিক জাহেদিসহ অর্ধশত আইনজীবী। বিএনপির আইনজীবীরা আদালতে বলেন, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বিএনপি নেতা চাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদিকে রিমান্ডের পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংশ্লিষ্ট আদালতের সহকারী পিপি অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন। জেলা পুলিশের কোর্ট পরিদর্শক রবিউল ইসলামও রিমান্ডের পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরেন আদালতে। দুই পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক বিএনপি নেতা চাঁদকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এদিকে রাজশাহী জেলা পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পুঠিয়া থানায় চাঁদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সন্ত্রাস দমন আইনের মামলাটি বৃহস্পতিবার দুপুরে পুঠিয়া থানা থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশে স্থানান্তর করা হয়েছে। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক আতিকুর রেজা সরকারকে মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়েছে। জেলা ডিবির অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল হাই বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আইনি প্রক্রিয়া ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী আসামি আবু সাঈদ চাঁদকে ডিবি হেফাজতে নিয়েছেন। তাকে পুঠিয়া থানায় পাঠানো হবে না।
আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৬ এর ২ ধারার মামলায় আসামি চাঁদকে বিকালে আদালতে তোলে পুলিশ। আদালতে তার ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। এ সময় চাঁদের আইনজীবীরা রিমান্ডের বিরোধিতা করেন। তবে শুনানি শেষে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার (২৫ মে) বেলা ১১টার দিকে প্রাইভেটকার যোগে পালানোর সময় নগরীর ভেড়িপাড়া এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে অভিযান পরিচালনাকালে পুলিশ চাঁদকে গ্রেফতার করে।

এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা চাঁদকে গ্রেফতারের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়। এরপর আরএমপি সদর দপ্তর থেকে সরাসরি তাকে আদালতে নেয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ডিআইজি আবদুল বাতেন জানান, বিভিন্ন অপরাধে চাঁদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই ২০ থেকে ২৫টি মামলা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকির ঘটনায় রাজশাহী জেলা ও মহানগরের থানাগুলোতে আরও ছয় থেকে সাতটি মামলা হয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন থানায় বেশ কিছু মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ডিআইজি আব্দুল বাতেন আরও জানান, সমাবেশে জনসাধারণের সামনে বিএনপি নেতা আবু সাইদ চাঁদ প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। এটি পরবর্তীতে গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পরে দেশজুড়ে আলোচিত হয়। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়। এসব মামলায় গ্রেফতার এড়াতে চাঁদ আত্মগোপনে ছিলেন। তবে আমাদের কাছে তথ্য ছিল, তিনি রাজশাহী নগরীতেই আছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাকে গ্রেফতারে রাজশাহী মহানগর ও জেলা পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছিলো। এরইমধ্যে চাঁদকে গ্রেফতার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেন, মহানগর পুলিশ কমিশনার আনিসুর রহমান, পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার বিজয় বসাকসহ ঊর্ধ্বতন অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আবু সাঈদ চাঁদ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং রাজশাহী জেলা কমিটির আহ্বায়ক। তিনি রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। একাধিকবার বিএনপির প্রার্থী হিসেবে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলেও নির্বাচিত হতে পারেন নি।
গত ১৯ মে বিকেলে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা ও মহানগর বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে চাঁদ বলেন, আর ২৭ দফা ১০ দফার মধ্যে আমরা নাই। এক দফা শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠাতে হবে। শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করার জন্য যা যা করার দরকার আমরা করব।

তার এই বক্তব্যের ভিডিও দুই দিন পর ছড়িয়ে পড়লে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। রাজশাহী জেলা ও মহানগরসহ দেশের বিভিন্ন থানায় তার নামে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে বেশ কিছু মামলা হয়।

এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দেওয়ার বিষয়টি প্রথম থেকেই হাইকোর্টের নজরে ছিলো। সর্বশেষ রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদকে গ্রেফতারের বিষয়টিও হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।

বৃহস্পতিবার (২৫ মে) বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লা ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চকে বিষয়টি জানানো হয়।

বিষয়টি আদালতকে জানান, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ইমরান আহম্মদ ভূঁইয়া। এ সময় আদালত বলেন, ফৌজদারি আইন যেভাবে চলে তার বিরুদ্ধে সেভাবেই মামলা চলবে।

এর আগে, গত ২২ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দেওয়া আবু সাঈদ চাঁদকে গ্রেফতার করা হয়েছে কিনা জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে পুলিশের সর্বশেষ পদক্ষেপও জানতে চেয়েছিলেন আদালত। বিষয়টি নজরে আনার পর বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লা ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ