বিজয় দিবসের কবিতা

আপডেট: ডিসেম্বর ১৫, ২০১৬, ১১:১৮ অপরাহ্ণ

প্রিয় রোকোনালী
মাকিদ হায়দার

সারাদিন ভয় ভয় করে
জানি কেউ কেউ এসে জানতে চায়
আমি ভালো আছি কিনা!
অথবা কখনো এসে বলে ফেলে
আজ সারাদিন কত বার ভাবলাম
আপনার কথা,

চোখ ফেরাতেই দেখি
কাঁধে রাইফেল নিয়ে আছেন দাঁড়িয়ে
এক চুক্তিযাদ্ধা।

মনে মনে কিছু বলবার আগেই সেই হারামি
জানালো আমাকে,
তোকে যেতে হবে আমাদের সাথে
যেখানে তুই, ও তোরা,
মেরেছিস মুক্তিযোদ্ধাদের।

যেতে যেতে দেখি এক নদী,
সেই নদীর কিনারে মানুষের লাশ পড়ে আছে
শেয়াল কুকুরের আশায়।

হারামিরা জানালো আমাকেÑ প্রিয় রোকোনালী,
তোর শেষ ইচ্ছে জানা আমাদের,

সেই দিন জানিয়েছিলেম, ওই সব চুক্তিযোদ্ধাদের,

এই দেশে যেন বেঁচে থাকে
জিন্দাবাদ, জিন্দাবাদ, এবং জিন্দাবাদ।

 

বাঙলাদেশ বুক পেতে বসে আছে
আরিফুল হক কুমার

আর্তনাদে বিদীর্ণ আকাশ চিরে
ঝরে পড়ছে শিশির!
আমি বুক পেতে বসে আছিÑ
এদেশ আজো প্রতিদিন ভোর হলে
খুঁজে রোজ সন্ততির মুখ!
প্রতিটি দিবস ও রাত্রির আখ্যানে
এক অশ্রুময় গল্পের প্রহর
আমাদের জাগিয়ে রাখে।

প্রতিদিন অগ্নি¯œান, প্রতিপলে স্বপ্নবুনন!
মৃত্যুর মুখে ছুঁড়ে দিয়ে
নবজন্মের ¯পর্ধীত উচ্ছ্বাস
অগণন শহিদের চোখ
দেখতে আসে বাঙলার মুখ।

সেই দৃষ্টিপথে মুখরিত
শিশুদের দুরন্ত উল্লাস,
প্রান্তর জুড়ে উচ্ছৃত শস্যভূমি,
জলের সংসারে অফুরন্ত মাছের সম্ভার,
গাভীর ওলান-ভরা দুধের নহর
আর রমণীর চোখের তারায়
প্রণয়-মদির রাত!
বুকের আঁচলে আঁকা
অলৌকিক এক নকশী স্বদেশ।

বাঙলাদেশ প্রতিদিন চোখভরা জল নিয়ে বসে থাকে
মুক্তির মন্দির সোপানতলে
যে অসংখ্য অরুণ প্রাণ
মৃত্যুকে পরিহাস করে এনে দিল নবজন্ম! মুক্ত স্বদেশ
আতপ্ত সেই সন্ততির মুখ মোছাবে শীতল আঁচলে।

 

হাটকথা
সিরাজুদ্দৌলাহ বাহার

পিঁপড়ের মত মানুষের আনাগোনা
বিস্তৃত জল-বালিপটেÑ
দিগন্তের দূর থেকে বরাবর পাড়ের নিকটে।

কড়াইয়ে তেলের মত টগবগ করে ফোটে
নদীবর্তী গঞ্জের হাটÑ
কত মুখ চেনা ও অচেনা
দরদাম, বেচাকেনাÑ
লোকসান, লাভ ও লোপাট!

ভেতর গলির মুখে সজ্জিত রঙিন রমণী
ইশার ও হাতছানিÑ
নিঃশব্দ বিকিকিনি
ওপরেতে ফিটফাট আর নিচেতে সদরঘাট!

টোটকা, তাবিজ, বড়ি, টিয়ে দিয়ে ভাগ্যগণনা
বাঁদর, সাপের খেলাÑ
হাততালি, কড়ি ফেলা
জাদু ও জুয়ার যত জারিজুরি, চাতুরী, ছলনা!
নানান মেশিনে চলা জীবনের নিত্য ভাঙাগড়া
জোড় দেয়া, গেঁথে তোলা, ছাটা, পেষাÑ চূর্ণ ও বিচূর্ণ করা!

আর সব ঘোড়াগুলো মাথা নিচু করে
অপেক্ষায় চেয়ে আছে, যাবে দূর চরের ভেতরেÑ
হাটবেলা হলে পরে শেষ,
মাল ও মানুষ তুলে, উল্টিয়ে পিছু ফেলে
বাদবাঁকী জঞ্জাল, বমি ও বিষ্ঠা আর ভুক্তাবশেষ!