সোনার দেশ ডেস্ক
দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ ভাটা পড়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় পরের অর্থবছরে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ সংক্রান্ত যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে এই বিষয়টি উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে নেট বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে ১ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার, ২০২৩ অর্থবছর শেষে যা ছিল ১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ১৪২ মিলিয়ন ডলার।
মূলত বিদেশ থেকে যত বিনিয়োগ আসে এবং সেই সময়ে আগের বিনিয়োগের অর্থ পরিশোধ করার পর বিয়োজন করলে যা অবশিষ্ট থাকে সেটাই নিট বিনিয়োগ।বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি এসেছে বস্ত্র খাতে। পরের অবস্থানে ছিল ব্যাংকিং, ওষুধ ও জ্বালানি খাত।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরেই অর্থনীতিতে নানা রকমের সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তাতে অনেকগুলো কারণেই কমেছে বিদেশি বিনিয়োগ।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সিইও নাসের এজাজ বিজয় সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এ বছর নির্বাচন থাকার কারণে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে। কারণ নির্বাচনের আগে ও পড়ে দেশের রাজনৈতিক অবস্থার অবনতি ঘটে। এ বিষয়গুলো বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পর্যবেক্ষণ করে।”
২০২২ সালের মাঝামাঝি সময় থেকেই ডলার সংকট শুরু হওয়ার পর টাকার দরপতনও একটি কারণ বলে মূল্যায়ন করেন এই ব্যাংকার। বলেন, “বিদেশিরা বিনিয়োগ করে আবার সেটা ফেরত পাবে কিনা সেই বিষয়গুলোও বিবেচনায় রাখেন।”
গত এক বছরে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের নেতিবাচক চিত্রও বিনিয়োগে অনাস্থার একটি কারণ বলে মনে করেন তিনি।
“ইন্টারন্যাশনাল রেটিং এজেন্সিগুলো আমাদের দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের ঋণমান অবনমন করায় বিদেশি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আমাদের ক্রেডিট লাইন সীমা কমে গিয়েছে। এটাও অন্যতম কারণ”, বলেন তিনি।
চলতি বছর বাংলাদেশের ঋণমান সূচক কমিয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থা ফিচ। রেটিং নেতিবাচক করার কারণ হিসেবে বলা হয়, রিজার্ভ কমে যাওয়া এবং ডলারের সরবরাহ সংকট বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ পরিশোধের মত বাহ্যিক বিষয়গুলোকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।
গত এক বছরে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক রেটিং এজেন্সি মুডিস, এসঅ্যান্ডপি (স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস) ঋণমানের অবনমন করেছে।
চলতি বছর জুলাইতে বাংলাদেশের সার্বভৌম ক্রেডিট রেটিং বা ঋণমান সূচক অবনমন করে ‘বি প্লাস’ করেছে আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল।
সংস্থাটি ঋণমান কমার প্রধান কারণ হিসেবে বলছে, বাংলাদেশের বৈদেশিক অর্থায়নের চাহিদার চাইতে জোগান কম। বৈদেশিক লেনদেন স্থিতিশীল নয়। অর্থাৎ বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার জোগানের যা চাহিদা তা রেমিটেন্স ও রপ্তানির মাধ্যমে যা আয় হয় তার চাইতে অনেক বেশি। এতে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে। এটি চাপ তৈরি করেছে অর্থনীতিতে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি সামির সাত্তার মনে করেন, বিদেশি বিনিয়োগকারী যেমন কম বিনিয়োগ করছেন ঠিক সেইভাবে দেশের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরাও সতর্কতা অবলম্বন করছেন।
“সব কিছুরই খরচ বেড়েছে। আবার এই বিনিয়োগ পরিশোধ করতে হয় ডলারে। ডলার দর বাড়লে সেটা ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েন।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে ডলারের দাম ছিল ১০৮ টাকা ৪০ পয়সা, বর্তমান দর ১২১ টাকা। এক বছরে দাম বেড়েছে ১০ শতাংশের বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চলতি বছর ডলার দর নির্ধারণ করার জন্য ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ডলারের দর অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। তাই ডলার বাজার আগের মত অস্থিতিশীল নয়। ধীরে ধীরে এ বাজারকে স্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ