বিদেশে অর্থ পাচার

আপডেট: জুন ৫, ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

এর প্রতিকার কি নেই?


বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচারের আলোচনা-সমালোচনা বলা যায় সারা বছর জুড়েই থাকে। এ নিয়ে রাজনীতিবিদ ও অর্থনীতির বিশেষজ্ঞগণ হরহামেশাই এ নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু শেষ বিবেচনায় এ নিয়ে তেমন প্রতিকার পাওয়া যায় নি। বরং পাচারের অর্থের পরিমাণটা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি উদ্বেগজনক তথ্য দিয়ে বলছে, বাংলাদেশ থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ পর্যন্ত পাচার হয়েছে ১১ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা। ৩ জুন রাজধানীর ইস্কাটনে সমিতির মিলনায়তনে বিকল্প বাজেট উপস্থাপনকালে এ তথ্য দেয়া হয়।

সংবাদ মাধ্যমের তথ্য মতে, টাকা পাচারের প্রধান দুটি উপায় হচ্ছেÑ আন্ডার ইনভয়েসিং এবং ওভার ইনভয়েসিং। আর ব্যবসার মাধ্যমে নামে বেনামে আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমে ডলার বিদেশে পাচার করা হয়। এই দুটি বাদে বাকি যে উপায়ে অর্থ পাচার হয় সেটার পরিমাণ খুব সামান্য। যেমন শিক্ষার খরচ মেটানোর জন্য ডলার পাঠিয়ে দেয়া।

অর্থ পাচারের ঘটনায় উচ্চ আদালতের ক্ষোভও প্রকাশ আছে। এ বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি ‘জি.বি হোসেন বনাম দুদক এবং অন্যান্য’ মামলার শুনানিকালে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ পাচার প্রসঙ্গে বলেন, এদেশ কী হরিলুটের জায়গা। যেখানে ছলেবলে কৌশলে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে টাকা বিদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এভাবে কি টাকা নিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে। আমরা কি এটা অ্যালাও (অনুমোদন) করতে পারি?

বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়টি আলোচনায় ব্যাপক সরগরম হয়ে থাকলেও কার্যত পাচারের বিরুদ্ধে কোনো উদ্যোগ লক্ষ করা যায় না। যদিও সংবাদ মাধ্যমে প্রায়ই পাচারের বিষয়টি দেশবাসীর সামনে আসে। কানাডায় পাচারের টাকায় আলিসান বাড়ি কেনার খবর বহুল আলোচিত। কিন্তু পাচার হওয়া অর্থ ফেরৎ আনার কোনো উদ্যোগ নেই। সরকার আন্তরিক হলে যে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা সম্ভব তার উদাহরণ আছে। ২০১৩ সালে সিঙ্গাপুর থেকে ২০ কোটি ৮৮ লাখ ৭০ হাজার টাকার সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা ফেরত আনা হয়েছিল। সেই টাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর। বহুজাতিক কোম্পানি সিমেন্স থেকে ঘুস হিসেবে এই টাকা নিয়েছিলেন তিনি। সেই ঘটনার পর আর কোনো টাকা দেশে ফেরত আসেনি।

অর্থ পাচার রোধে সদিচ্ছার অভাব লক্ষ্য করা যায়। পাচারকৃত অর্থ ফেরৎ আনার যেমন উদ্যোগ নেই তেমনই অর্থ পাচার ঠেকানোরও কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। পাচারের বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ ছাড়া অর্থ পাচার উৎসাহিতই হতে থাকবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ