বিভাগের পাঁচ প্রতিষ্ঠানে বৈকালিক সেবা চালু, প্রচারণাহীন নতুন সেবায় প্রতিষ্ঠানগুলোই বুঝে উঠতে পারে নি

আপডেট: এপ্রিল ১, ২০২৩, ১২:০৩ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:


‘গত ২৮ মার্চ জুম মিটিং, ২৯ মার্চ প্রস্তুতির ঘোষণা এবং ৩০ মার্চ উদ্বোধন’- এমন প্রস্তুতি নিয়েই রাজশাহী বিভাগের ৫ টি সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রসহ সারাদেশে চালু হয়েছে বৈকালিক স্বাস্থ্য সেবা। অথচ সরকারি হাসপাতাল বলতেই সাধারণ মানুষ বোঝেন নামমাত্র মূল্যে স্বাস্থ্য সেবা। আর এই সরকারি হাসপাতালেই বিকেল ৩ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত নির্দিষ্ট ফি এর বিনিময়ে সেবা মিলবে। যেখানে সেবা মূল্য বেসরকারি হাসপাতালের সেবা মূল্যের থেকে কিছুটা কম। তবে এটি অধিকাংশেরই অজানা। কেননা প্রান্তিক পর্যায়ে তেমন কোন প্রচারণা চালানো হয় নি। এমন কি উদ্বোধন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানরাও এটিকে আকষ্মিক হিসেবেই মনে করছেন। এতে রোগী ও ডাক্তারদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার শঙ্কাও প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত ৩০ মার্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের বৈকালিক চেম্বার কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। প্রাথমিক পর্যায়ে ১২টি জেলার এবং ৩৯টি উপজেলায় পাইলট প্রকল্পের আওতায় ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস শুরু হয়েছে। কিন্তু প্রচারণা ও প্রস্তুতি না থাকায় প্রথম দিনে তেমন রোগীও আসে নি। আর প্যাথলজিক্যাল টেস্টে প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা না বাড়িয়ে এমন সিদ্ধান্ত কতটা কার্যকর হবে তা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া এই সেবা নিয়ে জনমনেও ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে।

রাজশাহী বিভাগের তিন জেলায় ৫ টি প্রতিষ্ঠানে বৈকালিক সেবা চালু হয়েছে। হাসপাতালগুলো হলো- নওগাঁ জেলা সদর হাসপাতাল এবং সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং বড়াইগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও রাজশাহীর পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রথম দিনে নওগাঁ জেলা সদর হাসপাতাল মাত্র ১ জন এবং পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মাত্র ৬ জন রোগী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চিত্রও প্রায় একই।

সংশ্লিষ্টরা বলছে, আকষ্মিক উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো কোন প্রস্তুতিই নিতে পারেন নি। রোগীরাও এ বিষয়ে জানে না। আর সরকারি হাসপাতাল মানেই সাধারণ মানুষ নামমাত্র মূল্যে সেবাকেই মনে করে। আর গ্রামের মানুষরা তেমন শিক্ষিতও না। এতে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হতে পারে।

নওগাঁ জেলা সদর হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. জাহিদ নজরুল জানান, হঠাৎ করেই উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারণ করাই তারা তেমন প্রস্তুতি নিতে পারেন নি। তবে প্রথম দিন ডাক্তার ছিলেন। কিন্তু রোগী ছিলো না। আর ডাক্তারের বসা নিয়ে তেমন সমস্যা হবে না। ডাক্তার পর্যাপ্ত আছে। কিন্ত প্যাথলজি টেস্টের বিষয়টা নিয়ে কিছু বিড়ম্বনা সৃষ্টি হবে।

পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও উদ্বোধনের পর আগত অতিথিরা ফটো সেশনের জন্য কোন রোগী পান নি। তবে পরে কয়েকজন রোগী আসে।
এবিষয়ে পবা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাবেয়া বসরী জানান, এটা তো পরিক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে। আর প্রচারণা তেমন ছিলো না, একারণে রোগীও ছিলো হাতেগোনা। এদিন ৬ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছে।

এদিকে, নীতিমালায় পর্যায়ক্রমে দেশের সকল হাসপাতালে এই সেবা চালু হওয়ার কথা বলা হলেও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে এখনও কিছু জানানো হয় নি।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহম্মদ জানান, এ বিষয়ে তিনি নিউজ দেখেছেন। কিন্তু এখনো তাদেরকে কিছু জানানো হয় নি।

এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) হাবিবুল আহসান তালুকদার জানান, এটা পরিক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে। এটা ঠিক যে প্রস্তুতি নিতে প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি সময় পান নি। তবে যেহেতু এটা শুরু হয়েছে, মিডিয়াতেও আসছে। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ