বিমান রহস্য

আপডেট: জানুয়ারি ১৭, ২০১৭, ১২:০২ পূর্বাহ্ণ

সোনার দেশ ডেস্ক



পৃথিবীতে এমন অনেক ঘটনা আছে যার ব্যাখ্যা বর্তমান বিজ্ঞানের কাছে নেই। মানুষের চোখের সামনে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনাকে যেমন উড়িয়ে দেয়া যায় না, তেমনই আবার মেনে নেয়াও কঠিন। যেমন ধরা যাক বিমানের কথা। বিমান চালাতে গিয়ে অনেক বৈমানিক নানা ব্যাখ্যাতীত ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন। যার ব্যাখ্যা এখনও দিতে পারেনি আজকের বিজ্ঞান। আবিস্কারের পর থেকে এপর্যন্ত হারিয়ে যাওয়া বিমানের তালিকাও নেহাত কম নয়। আবার ক্ষনিকের জন্য বিমান হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাও আছে একাধিক। এমনই কিছু ঘটনা নিয়ে এবারের আয়োজন।
নিখোঁজ বিমান গঐ৩৭০ : এমন প্রসঙ্গ উঠলে প্রথমেই মালয়েশিয়ার ফ্লাইট এমএইচ৩৭০ বিমানের কথা মনে আসবে। ২০১৪ সালের ৮ মার্চ কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে ২৩৯ আরোহী নিয়ে স্রেফ গায়েব হয়ে যায় এটি। ১৫টি দেশের ১২ জন কর্মী এবং ২২৭ জন যাত্রী বিমানটিতে ছিলেন। এদের মধ্যে চীনের নাগরিক ছিলেন সবচেয়ে বেশি। সাধারণত এমনটি হলে দুর্ঘটনা হিসেবেই ধরে নেয় সকলে। ছিনতাই বা এধরনের ঘটনা না হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গন্তব্যের মাঝে ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে এর কোনটিই হল না। সময় পেরিয়ে যাচ্ছিলো। স্বজনদের প্রশ্নবানে জর্জরিত মালয়েশিয়া সরকার বড় আকারের তল্লাশি অভিযান শুরু করে। মালয়েশিয়ার অনুরোধে এবং স্বপ্রণোদিত হয়ে ১২টিরও বেশি দেশ একযোগে মালাক্কা প্রণালী ও দক্ষিণ চিন সাগরে মোট ২৭ হাজার বর্ঘ নটিক্যাল মাইল এলাকা জুড়ে সন্ধান চালায়। এতেও যখন হদিস মিলছিল না, তখন বিমানটির সন্ধানে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় তল্লাশি অভিযানে অংশ নেয় বাংলাদেশসহ অন্তত ২৮টি রাষ্ট্র। বাড়ানো হয় তল্লাশির পরিধি। তবে জল ও স্থল তন্নতন্ন করে খুঁজেও বিমানের কোন সন্ধান মেলেনি। তল্লাশি চলাকালে নানা ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেলেও পরে পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে এগুলো সেই নিখোঁজ বিমানের নয়।
এমেলিয়া এয়ারহার্ট নিখোঁজ রহস্য : এভিয়েশন ইতিহাসে খুবই আলোচিত এমেলিয়া এয়ারহার্টের নিখোঁজ রহস্য। বৈমানিক পেশায় নারীদের অগ্রপথিক এই সেলিব্রেটি লেখিকা ১৯৩৭ সালে প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নিখোঁজ হন। প্রথম নারী বৈমানিক হিসেবে বিষুব রেখা বরাবর বিমান চালিয়ে তিনি পৃথিবী ভ্রমনে বেরিয়েছিলেন। তার নেভিগেটর হিসেবে ছিলেন ফ্রেড ন্যুনান। প্রায় ২২ হাজার মাইল অতিক্রমের পর এমেলিয়ার অভিযানও ছিল প্রায় শেষের পথে। প্রশান্ত মহাসাগরের উপর বিমানটি নিখোঁজের পর খবরটি বিশ্বে বেশ আলোচিত হয়। গুরুত্বের সাথে তল্লাশিও চালানো হয়। তবে প্রমাণযোগ্য কোনো ধ্বংসাবশেষ সাগরে মেলেনি। তল্লাশি অভিযান বিফলের পর ১৯৩৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের মৃত ঘোষণা করা হয়।
ক্ষনিকের হারিয়ে যাওয়া বিমান : আজ থেকে ৪০ বছর আগের কথা। দিনটি ছিল রৌদ্রজ্জল। চমৎকার এই দিনে আমেরিকার মায়ামি বিমানবন্দর থেকে যাত্রি নিয়ে এক বৈমানিক আকাশে উড়াল দেয়। যাবে নিউজার্সিতে। বিমানবন্দরে অপারেটর রাডার পর্যবেক্ষণে ছিলেন। হঠাৎ তিনি খেয়াল করলেন সদ্য উড়াল দেয়া বিমানটি রাডার থেকে উধাও হয়ে গেছে। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় চারিদিকে হুড়োহুড়ি পড়ে গেল। জরুরি বার্তা যখন প্রেরণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সবাই ঠিক তখনই আবারও রাডারে ধরা দিল বিমানটি। সবাইকে হতবাক করে বিমানটি যথারীতি নিউজার্সিতে অবতরন করলো। বিমানটি হারিয়ে যাওয়ার সংবাদ তখন পেয়েছিলেন বিমানবন্দরের সবাই। অবতরনের পরপরই ছুটে গেলেন অনেকে। বিমানের চালককে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, ঐ ১০ মিনিট বিমানটি কোথায় ছিল? উত্তর দেবে কি, চালক তো অবাক। জানালেন, পথে কোন ধরনের সমস্যায় হয় নি। ঘড়িও দেখিয়ে বললেন, ঠিক সময়েই তিনি পৌঁছে গেছেন। ব্যাপারটি এখানেই মিটে যেত, কিন্তু তা হয়নি। বিমানবন্দরের লোকজন তাদের ঘড়ি দেখিয়ে বললেন, আসলে চালকের ঘড়ি ১০ মিনিট পেছনের সময় দেখাচ্ছে। চালক উত্তর দেবে কি, বিমানের প্রত্যেক যাত্রি মিলিয়ে দেখেন তাদের ঘড়িও একই সময় দেখাচ্ছে। অর্থাৎ প্রত্যেকের ঘড়ি ১০ মিনিট স্লো হয়ে গেছে। তাহলে কী হয়েছিলো তাদের ঐ মিনিটে? তারা কী স্থির সময়ে অন্য কোন ডাইমেনশনে প্রবেশ করে করেছিলেন? নাকি অন্য কোন কারণ আছে? এর ব্যাখ্যা আজও বের করা সম্ভব হয় নি।
সময়ের ধোঁকায় দুই বিমান : ১৯৬১ সালের ওহাইও বিমান রহস্য অনেককেই অবাক করেছে। যার ব্যাখ্যা আজও বের করা সম্ভব হয় নি। ওহাইও রাজ্যের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় এক বৈমানিকের হল রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা। তাকিয়ে দেখলেন তার ঠিক পাশ দিয়েই উড়ছে এক অদ্ভূত বিমান। এমন জিনিস চালানো তো দূরে থাক তিনি দেখেন নি পর্যন্ত। তবে তার সন্দেহ হল, সম্ভবত ৫০ বছর আগে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় এ ধরনের বিমান তৈরি হতো। বিমান চালক যখন এসব ভাবছেন, তখন পাশের বৈমানিকও কম বিস্ময়ে নেই! অবাক হয়ে ভাবছিলেন, জীবনে এমন বিমান দেখা তো দূরে থাক কথাও শোনেন নি। যাই হোক, প্রথম বৈমানিক ফিরে এসেই উর্ধ্বতন মহলকে বিষয়টি জানালেন। তবে কেউ তা বিশ্বাস করলো না। অবশ্য সবাই উড়িয়ে দিলেও নিজেকে মানাতে পারছিলেন না ঐ বৈমানিক। নিজেই অনুসন্ধানে নামলেন। অনেক খোঁজাখুজির পর অবশেষে সে রাজ্যেরই এক গ্রামে বিমানটি মিলল। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত ঐ বিমানটির মধ্য থেকে পাওয়া গেল এক লগ বুক। সেটি পড়ে আরও অবাক হলেও তিনি। সেখানে লেখা ছিল, “আশ্চর্য, ঝকঝকে রৌপ্য বর্ণের অদ্ভূত এক বিমান আকাশে দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু একে কে বানিয়েছে? এতো আধুনিক বিমান তো আমাদের সময়ে তৈরি হয় না। এটি যেন ৫০ বছর পরের সময়ে নির্মিত। এটি আমার বিমানের সাথে ধাক্কা লাগতে যাচ্ছিল। তবে আধুনিক বিমানটি তার উন্নত কৌশলের মাধ্যমে দুর্ঘটনা এড়ায়।” সেই লেখাটির সাল উল্লেখ ছিল ১৯১১..
সাম্প্রতিক ঘটনা : ২০১৬ সালের এপ্রিলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ঘটে যাওয়া অদ্ভূত ঘটনাটি যেন আড়ালেই থেকে যায়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, কলকাতার আকাশ থেকে ১০ মিনিটের জন্য হারিয়ে যায় একটি দু’টি নয় ৮৫টি বিমান। সংবাদ মাধ্যমে আসে, ৮ তারিখ সকাল সাড়ে ৭ টায় রাডারে থাকা সবগুলো বিমানের সাথে ১০ মিনিটের জন্য সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অর্থাৎ রাডার থেকে হঠাৎ সব বিমান যেন এক নিমিষেই হারিয়ে যায়। যদিও যন্ত্রটি কাজ করছিলো ভালোভাবেই। এমন অবস্থায় রাজ্যের বিমান কর্তৃপক্ষ জরুরী ভিত্তিতে দ্রুত ভিএইচএফ (ঠবৎু ঐরময ঋৎবয়ঁবহপু) লিঙ্ক চালু করে।
তবে সেটিও যোগাযোগে ব্যর্থ হয়, অর্থাৎ সংবাদপত্রের ভাষ্য সেটিও কাজ করছিল না। কলকাতার আকাশে থাকা হাজার হাজার যাত্রীর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বারানসি, পাটনা ও গয়ায় জরুরী বার্তা পাঠায় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল বা এটিসি। অবশ্য ঠিক ১০ মিনিটের মাথায় আবারও সব স্বাভাবিক হয়ে যায়। যেন বিমানগুলো হাওয়ায় মিলিয়েছিল, আবার ১০ মিনিট বাদে উদয় হয়েছে। কর্তৃপক্ষ তদন্তের নির্দেশ দিলেও এটিকে যান্ত্রিক ত্রুটি হিসেবেই প্রাথমিকভাবে জানানো হয়।