বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে : রাসিক মেয়র

আপডেট: জুলাই ৩০, ২০১৭, ২:৩০ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক


রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারীদের ১১ দফা দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। গতকাল শনিবার বিকেলে নগর ভবনের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে মেয়র এই ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে মেয়র বলেন, কর্মচারীদের ১১ দফা দাবি নিয়ে নগর ভবনে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতেই তিনি দাবি মেনে নিয়েছেন। এখন নগরীর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে আবার গতি ফিরবে বলেও আশা প্রকাশ করেন মেয়র।
মেয়র বুলবুল বলেন, বাইরের ইন্ধনে তাকে বেকায়দায় ফেলতে কর্মচারীরা আন্দোলন করছিলেন। তবে কে ইন্ধন দিচ্ছিলেন তা স্পষ্ট করে বলেননি মেয়র। তিনি বলেছেন, কে ইন্ধন দিচ্ছিলেন তা জনগণ বুঝতে পেরেছে, তিনিও পেরেছেন।
কর্মচারীদের শোকজ চাকরিচ্যুতদের চাকরি ফিরিয়ে দেয়ার দাবির ব্যাপারে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, কর্মচারীদের ১১ দফা দাবির সব মেনে নেয়া হয়েছে। তবে সিটি করপোরেশন চলে নির্বাচিত পরিষদ এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দিয়ে। তাই অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো এখানেও সরকারি নিয়ম-নীতি মেনেই কর্মচারীদের কাজ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে মেয়র জানিয়েছেন, কর্মচারীদের বেতন ১৫ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর সিটি করপোরেশনের এক হাজার ৩০০ পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে চিকিৎসা বাবদ প্রতিদিন ১০ টাকা করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া কর্মচারীদের অন্যান্য দাবিগুলোরও প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে।
তিনি জানান, আগে অস্থায়ী কর্মচারীদের বেতন-ভাতা খাতে সিটি করপোরেশনের এক কোটি ৮৩ লাখ টাকা খরচ হতো। এখন থেকে তা বেড়ে দাঁড়াবে দুই কোটি ৩৮ লাখ টাকায়। প্রতিমাসে বাড়তি ব্যায় হবে ৫৫ লাখ টাকা। গত বুধবারের মারামারির ঘটনায় অস্থায়ী কর্মচারীরা দুঃখ প্রকাশ করায় তাদের দাবি মানা হচ্ছে। তবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান মেয়র।
এর আগে ১১ দফা দাবি নিয়ে রাসিকের অস্থায়ী কর্মচারীরা গত ১২ জুন মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। ওই মানববন্ধনের পর গত ১৯ জুন নগর ভবনে তালা দিয়ে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করা হয়। পরে ৯ জুলাই থেকে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করা শুরু হয়। তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয় নগর ভবনের প্রধান ফটক, গ্যারেজ ও রাসিক নিয়ন্ত্রিত শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায়। এরপর ১২ জুলাই এ আন্দোলন স্থগিত করা হয়।
ওই দিন কর্মচারীরা নিজেদের দাবি আদায়ে মেয়র বুলবুলকে ৭ দিনের আলটিমেটাম দেন। কিন্তু এই সময়ের মধ্যেও তাদের দাবি মানা হয়নি। তবে ভেতরে ভেতরে বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছিল। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার নগর ভবনে মেয়র বুলবুল এ বিষয়টি নিয়ে স্থায়ী কর্মচারী ও কাউন্সিলরদের সঙ্গে মতবিনিময় করছিলেন।
ওই সভায় মেয়রের অনুসারী কাউন্সিলরদের সঙ্গে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন অস্থায়ী কর্মচারীরা। এতে দুই নারী কাউন্সিলরসহ দুই পক্ষের অন্তত ৬ জন আহত হন। পরবর্তীতে গতকাল শনিবার সকালে মেয়র আবার আন্দোলনরত কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। এরপরই বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে তাদের দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা এলো।
কর্মচারীদের দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো, বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, স্থায়ী কর্মচারীদের জ্যৈষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতি, স্থায়ী কর্মচারীদের গৃহ নির্মাণের ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা, মৃত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারিদের পোষ্যদের চাকরি প্রদান, শোকজ বা চাকরিচ্যুত না করা, চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের চাকরিতে নিয়োগ এবং মজুরিভিত্তিক কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ীকরণ।
সংবাদ সম্মেলনে রাসিকের প্যানেল মেয়র-১ আনোয়ারুল আজিম আজব, প্যানেল মেয়র-২ নুরুজ্জামান টিটু, নগর অবকাঠামো স্থায়ী কমিটির সভাপতি মনসুর রহমান, ১৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বেলাল আহমেদ, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহজাহান আলী প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ