শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
উদ্বেগজনক এক তথ্য পরিবেশন করেছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট। ওই সংস্থা দুটি তাদের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলছে, ২০৩০ সাল নাগাদ ধূমপানের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ৮০ লাখ লোক মৃত্যুবরণ করবে এবং এক বছরে ধূমপানজনিত কারণে বিশ্ব অর্থনীতির খরচ এক লাখ কোটি ডলারেরও বেশি। মঙ্গলবার প্রকাশিত ৬৮৮ পৃষ্ঠার ওই গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। ওই দুই সংস্থার ৭০ জনেরও বেশি বিশেষজ্ঞ গবেষণা প্রতিবেদনটি পর্যালোচন করেছেন। বুধবার দৈনিক সোনার দেশে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পকাশিত হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ধূমপানের পেছনে প্রতি বছর মোট যে পরিমাণ খরচ হয় তা তামাকজনিত করের আয়কে বহুগুণ ছড়িয়ে গেছে। ডব্লিউএইচও এর হিসাবে ২০১৩-২০১৪ সালে বিশ্বব্যাপী তামাকজনিত কর থেকে প্রায় ২৬৯ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছিল।
তামাকের ব্যবহার ও তদজনিত মৃত্যু হ্রাস করার উপায় সরকারগুলোর হাতে থাকলেও অধিকাংশ সরকার এসব উপায় কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে ব্যর্থ হচ্ছে, ফলে ধূমপানজনিত কারণে ব্যয় বাড়তেই থাকবে বলে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশে ধূমপান নিরোধ আইন থাকলেও সেটি মোটেও কার্যকর নয়। জনবহুল স্থানে ধূমপানের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। আইনের প্রয়োগের শিথিলতার কারণে যারা একসময় বুঝেসুজে উন্মুক্ত স্থানে ধূমপান করতো, তারাও এখন প্রকাশ্যেই তা করছেন। তবে ধূমপানের বিরুদ্ধে প্রচার-প্রচারণার কিছু কর্মসূচি আছে, সেটাও যথেষ্ট নয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনের সরকারগুলোর মধ্যে যে আশঙ্কার কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা বাংলাদেশের জন্য যথার্থই বলা যায়। তামাকের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করলে তা অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু ওই প্রতিবেদন বলছে তাদের এ ধরনের মনোভাবের পক্ষে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ধূমপান এমনই এক অভ্যাস যা শুধু অভ্যাসকারীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না। ক্ষতি তার পরিবেশ ও প্রতিবেশেরও হয়। এটা গেল একটা দিক। এটা সবাই স্বীকার করে যে, ধূমপান আসক্তির মধ্য দিয়েই শুরু মাদক সেবনের অন্যান্য অনুসঙ্গগুলো। এর মারাত্মক প্রভাব পড়ে সমাজের ওপর। অসামজিক প্রবণতা বৃদ্ধি পায় এবং আসক্তরা স্বাভাবিক সক্ষমতা হারায়। এর চেয়ে বড় জাতীয় ক্ষতি আর কী হতে পারে? তামাক থেকে অর্জিত রাজস্ব দিয়ে এই ক্ষতি কোনোভাবেই পূরণ করা সম্ভব নয়।
বাংলাদেশে বর্তমানে তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা তিন কোটির বেশি। প্রতিবছর তামাক ব্যবহারজনিত ৮টি প্রধান রোগে ১২ লাখ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এই রোগিদের মাত্র ২৫ শতাংশ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে ধরে হিসাব করলে বছরে দেশের অর্থনীতিতে ৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। অন্যদিকে তামাক খাতে বছরে সরকারের আয় হয় ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
দেশে তামাকবিরোধী আইন আছে। আইনটির যখার্থ প্রয়োগ নিশ্চিত করাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সরকারের সদিচ্ছাই পারে আইনকে কার্যকরভাবে প্রয়োগ করে ধূমপানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে। একই সাথে ধূমপানবিরোধী সমাজ সচেতনতা সৃষ্টিতে সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। সুস্থ-সবল প্রজন্মের জন্য এটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ।