বৃহস্পতিবার, ৮ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক
ট্রেনের ধোঁয়া বায়ু দূষণ করে এটা সবাই জানে। কিন্তু তাই বলে ধোঁয়ামুক্ত ট্রেন আবিস্কার সম্ভব এটা কি কেউ জানতেন? হ্যাঁ, জার্মানি গত সেপ্টেম্বর মাসের ২০ তারিখে বার্লিনে রেলওয়ে নিয়ে এক ট্রেড-শোতে এমন এক ট্রেন প্রদর্শন করেছে যার জ্বালানি ডিজেল বা বিদ্যুৎ নয় বরং হাইড্রোজেন।
ফলে এই হাইড্রোজেন চালিত ট্রেনে ধোঁয়ার বদলে বের হবে ভাপ এবং ঘনীভূত পানি, যা পরিবেশবান্ধব। পরিবেশবান্ধব পরিবহন নিয়ে গবেষণার ফসল হিসেবে আবিস্কার হলো এই ট্রেন। যদিও এই ট্রেন সর্বপ্রথম যাত্রা করছে জার্মানিতে তবে এর নির্মাতা কিন্তু ফ্রান্সের এক প্রতিষ্ঠান। আলস্টম নামের এক প্রতিষ্ঠান এর নির্মাতা।
প্রাথমিকভাবে এই ট্রেন স্বল্প দূরত্বে চলবে। প্রথম দিকে এর রুট হবে ৬০ মাইলের নর্দান জার্মানিতে। পরে এর পরীক্ষামূলক চলাচল সফল হলে এর রুট বাড়ানো হবে। তাই জার্মানির বিভিন্ন অঞ্চল ভিত্তিক পরিবহন কর্তৃপক্ষ আরো অন্তত ৬০টি ট্রেনের জন্যে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে, তবে তা নির্ভর করবে প্রথম যাত্রা সফলভাবে পার করতে পারলে। আর সেজন্যে সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
মজার ব্যাপার হলো, এই পরিবেশবান্ধব ট্রেন কিন্তু চলবে কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের বর্জ্য থেকে। অর্থাৎ এই ট্রেনের প্রধান জ্বালানি হাইড্রোজেন সংগৃহীত হবে কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের বর্জ্য থেকে। ফলে এই ট্রেনের ফলে যে শুধু বায়ুই দূষণ মুক্ত হবে তা নয়। বরং কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের বর্জ্যকেও করা যাবে পুনরায় ব্যবহার বা রিসাইকেল। তবে হাইড্রোজেন চালিত ট্রেনের জন্যে আলাদা লাইনের প্রয়োজন হবে। এটা জার্মানির সাধারণ ট্রেন লাইন বা ইলেকট্রিক ট্রেন লাইনে চলতে পারবে না। তাছাড়া শুধু জার্মানিতেই ডিজেল চালিত ট্রেন আছে ৪০০০। এবার চিন্তা করুন এসব টেন কি পরিমানে বায়ু দূষণ করে? তাই জার্মান কর্তৃপক্ষ ডিজেল ট্রেনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে হাইড্রোজেন চালিত ট্রেন, যা ধোঁয়ার বদলে স্টিম বা ভাপ এবং ঘনীভূত পানি নির্গমন করবে।
আলস্টম কোম্পানির সিইও এবং চেয়ারম্যান হেনরি পপার্ট বলেন, ‘এটা পরিবেশের জন্যে দারুন উপযোগী এক ট্রেন। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমরা এটা নিয়ে গবেষণার মাত্র ২ বছরের ভেতর একে বাস্তবে রুপ দিতে সক্ষম হয়েছি।’
আরেকটি ব্যাপার হলো, এই ট্রেনের জন্যে আলাদা কোনো নকশা বা ডিজাইন কিংবা কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়নি। ইলেকট্রিক ট্রেন যে কাঁচামাল বা নকশায় তৈরি হয়, হাইড্রোজেন ট্রেনও একই পদ্ধতিতে তৈরি হয়েছে। পার্থক্য শুধু দুই ট্রেনের জ্বালানি ভিন্ন। একটি চলে বিদ্যুৎ এবং ডিজেলের সহায়তায় এবং নির্গমন করে ধোঁয়া। আর অন্যটি চলে কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের বর্জ্য থেকে পাওয়া হাইড্রোজেন থেকে এবং নির্গমন করে ভাপ এবং ঘনীভূত পানি।
এখন দেখা যাক, এটা কতটা সফল হয় এবং এর আর কোনো সমস্যা আছে কিনা। কেননা কোনো জিনিস প্রটোটাইপ বা খসড়া আকারে থাকলে এর সব কিছু ধরা পরে না। এটা যখন পরিপূর্ণ ব্যবহারে আসবে তখনই এর বিভিন্ন খুঁটিনাটি দিক ধরা পরে।
ও হ্যাঁ, এই ট্রেন স্বল্প দূরত্বে চললেও এর গতি কিন্তু কম নয়। এটি ঘণ্টায় ৮৭ মাইল বেগে চলতে পারে। এর দুটি ইউনিট এরই ভেতর পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হয়েছে। এখন শুধু বাকি জার্মানির ফেডারেল রেলওয়ের অনুমতি নেয়া। আলস্টম আশা করছে, আগামী বছরের শেষ নাগাদ সেটাও পাওয়া যাবে। রাইজিংবিডি