সোমবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
ঐক্যবদ্ধে ফাটল দূর করতে হবে
অনেকেই বলে থাকেন, ‘জিতলেও বাংলাদেশ, হারলেও বাংলাদেশ’। কিন্তু সত্যিই কি তাই? কেন হারলেও বাংলাদেশ? আমরা কি দল হারার জন্য সাপোর্ট করি? দর্শকরা পকেটের টাকা খরচ করে ব্যানার-ফেস্টুন বানিয়ে গ্যালারিতে বসে খেলা দেখে, খেলার সময় সবার ধর্ম এক হয়ে যায় ‘বাংলাদেশের জয়’, নেচে-গেয়ে উৎসাহ দেয় ক্রিকেটারদের। তাহলে খেলোয়াড়রা খারাপ খেললে কেন তাদের সমালোচনা করা যাবে না। সমালোচনা অবশ্যই হবে-নাহলে সেটা যে বাস্তবতা বর্জিত হয়ে যাবে।
বিশ্বকাপে সেমিফাইনালের কোনও সম্ভাবনা নেই বাংলাদেশের। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জিততে শ্রীলঙ্কা বিরুদ্ধে ম্যাচের গুরুত্ব ছিল ভীষণ। শ্রীলঙ্কাকে ৩ উইকেটে হারিয়ে তাদের টপকে পয়েন্ট টেবিলের সাতে উঠেছে সাকিব বাহিনী। বাংলাদেশ ২৮০ রানের লক্ষ্য ৭ উইকেট হারিয়ে ৪১.১ ওভারেই টপকে গেছে। তাতে ওয়ানডেতে লঙ্কানদের বিপক্ষে সফল রান তাড়ায় ম্যাচ জেতার নজির গড়েছে বাংলাদেশ। বিশ্ব কাপের এই ম্যাচের পারফরম্যান্স নিয়ে আমাদের ঢেকুর তুললে হবে না। বিশ্ব কাপের আগে বাংলাদেশ দলকে নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমিদের প্রত্যাশা ছিল ব্যাপক। কিন্তু সেই প্রত্যাশা অনুযায়ী সাকিবরা তা মাঠে দেখাতে পারেনি।
অবশ্য এর কারণ হিসাবে দলনেতা সাকিব আল হাসান একবার বলেছিলেন, দলে টিমওয়ার্কের অভাব রয়েছে। শুধুই কি তাই! এর বাইরেও তো অনেক কিছুই রয়েছে। তাই সব মিলিয়ে বিষয়টা এমন দাঁড়িয়েছে যে, অনেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের শেষের শুরুটা দেখতে শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু কেন এই অবক্ষয় টাইগারদের? কেন বিসিবিতে এত অব্যবস্থাপনা ও স্বেচ্ছাচারিতা? বাংলাদেশ ক্রিকেটের হঠাৎ এই ছন্দপতনের অনেকগুলো কারণই আছে। প্রথম দায়টা টিম ম্যানেজমেন্টের। তারা সঠিক দল নির্বাচন করতে পারেছে না। আর যদি নাই পারবেন তাহলে অযথা পদে বসে থেকে কি লাভ? তারওপর দল নির্বাচনের প্রধান দায়িত্ব শুধুমাত্র নির্বাচকদের কিন্তু সেখানে পদাধিকার বলে হস্তক্ষেপ করেন বোর্ড সভাপতি।
আর সেটা খুবই নগ্নভাবে করেন বিসিবি বস। বিসিবির হাবভাব এমন যেন দেশে কোনো সাবেক ক্রিকেটার নেই। তারপর টেকনিক্যাল ডিরেক্টরের উপদ্রব! কোচ এবং অধিনায়কের মতামত। এটাতো গেলো দল নির্বাচিনের বিষয়, এরপর হচ্ছে মাঠ ও উইকেট বা পিচ! বাংলাদেশে ক্রিকেটের উপযুক্ত মাঠ কি একটাই? শুধুই শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম? কেনোয়বা সব ম্যাচ, সব সিরিজ ঢাকাতেই হতে হবে? হ্যাঁ অনেকে বলবেন প্রথম টেস্ট তো চট্টগ্রামে হয়েছে। সেটা তো সব সিরিজেই একটা টেস্ট অথবা ওয়ানডে চট্টগ্রামেই হয়।
বাকি স্টেডিয়ামগুলো বেকার পড়ে থাকে। আর এই অতি ব্যবহারেই মিরপুরের উইকেটের এই অবস্থা। তাই খেলাগুলো দেশের অন্য স্টেডিয়ামে নিয়ে যাওয়া উচিত। আর এসব অব্যবস্থাপনাই কাল হয়েছে টাইগার ক্রিকেটের। বিষয়টা এমন যখন যার যা ইচ্ছা তাই হচ্ছে। দেখার কেউ নেই, বলার কেউ নেই। কার্যত অভিভাবক বিসিবি থেকেও যেন অভিভাবকহীন টাইগার ক্রিকেট। তাই ক্রিকেটপ্রেমিদের প্রশ্ন, এতো অব্যবস্থাপনা ও স্বেচ্ছাচারিতার দায়ভার কে নেবে, মেরুদন্ডহীন নির্বাচক প্যানেল নাকি অথর্ব টিম ম্যানেজমেন্ট? নাকি তারা শুধু সাফল্যেরই ভাগীদার হবে?