বিশ্ব গণমাধ্যমের চোখে জাতির পিতা

আপডেট: আগস্ট ১৪, ২০২৩, ১২:০২ পূর্বাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক:


বিশ্ব গণমাধ্যমের চোখে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এক ঐতিহাসিক ক্ষণজন্মা মহান পুরুষ। তাই তাঁকে স্বাধীনতার প্রতীক বা রাজনীতির ছন্দকার খেতাব ছাড়াও নানাভাবে অ্যাখ্যায়িত করেছেন অনেকে। বিদেশি ভক্ত, কট্টর সমালোচক, এমনকি শত্রুরাও উচ্চকিত প্রশংসা করেছেন বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্ববোধ ও নেতৃত্বের। তাই ১৯৭৫ সালের

১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার খবর শুনে স্তম্ভিত হয়ে পড়ে বিশ্বসম্প্রদায়।
স্তম্ভিত বিশ্বনেতারা বঙ্গবন্ধু হত্যায় তাদের প্রতিক্রিয়ায় দীর্ঘশ্বাসের পাশাপাশি হৃদয় নিঙড়ানো মন্তব্য করেছেন।

নোবেল বিজয়ী উইলিবান্ট বলেছিলেন- ‘মুজিব হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যারা মুজিবকে হত্যা করেছে তারা যেকোনো জঘন্য কাজ করতে পারে।’
ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন- ‘শেখ মুজিব নিহত হবার খবরে আমি মর্মাহত। তিনি একজন মহান নেতা ছিলেন। তার অনন্য সাধারণ সাহসিকতা এশিয়া ও আফ্রিকার জনগণের জন্য প্রেরণাদায়ক ছিল।’

বৃটিশ এমপি জেমসলামন্ড বলেছিলেন,- ‘বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশই শুধু এতিম হয়নি, বিশ্ববাসী হারিয়েছে একজন মহান সন্তানকে।’
ব্রিটিশ লর্ড ফেন্যার ব্রোকওয়ে বলেছিলেন- ‘শেখ মুজিব জর্জ ওয়াশিংটন, গান্ধী এবং দ্য ভ্যালেরার থেকেও মহান নেতা ছিলেন।’

জাপানি নাগরিক মুক্তি ফুকিউরা বাঙালি দেখলে বলতেন- ‘তুমি বাংলার লোক? আমি কিন্তু তোমাদের জয় বাংলা দেখেছি। শেখ মুজিব দেখেছি। জানো এশিয়ায় তোমাদের শেখ মুজিবের মতো সিংহ হৃদয়বান নেতার জন্ম হবে না বহুকাল।’

বিপ্লবী ফিদেল ক্যাস্ত্রো বলেছিলেন- ‘আমি হিমালয় দেখিনি, বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি। শেখ মুজিবের মৃত্যুতে বিশ্বের শোষিত মানুষ হারাল তাদের একজন মহান নেতাকে, আমি হারালাম একজন অকৃত্রিম বিশাল হৃদয়ের বন্ধুকে।’

ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন বলছিলেন- ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হচ্ছেন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রথম শহীদ। তাই তিনি অমর।’
ফিলিস্তিনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও নোবেল শান্তি পুরষ্কার বিজয়ী ইয়াসির আরাফাত বলেছিলেন- ‘আপসহীন সংগ্রামী নেতৃত্ব আর কুসুম কোমল হৃদয় ছিল মুজিব চরিত্রের বৈশিষ্ট্য।’
জাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট কেনেথা কাউন্ডা বলেছিলেন- ‘শেখ মুজিবুর রহমান ভিয়েতনামী জনগণকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।’

বঙ্গবন্ধুর হত্যার খবর পাওয়ার পর পশ্চিম জার্মানি পত্রিকায় বলা হয়েছিল, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে চতুর্দশ লুইয়ের সঙ্গে তুলনা করা যায়। জনগণ তার কাছে এতো জনপ্রিয় ছিল যে লুইয়ের মতো তিনি এ দাবি করতে পারেন যে, আমিই রাষ্ট্র।’

১৫ আগস্ট ওই ঘটনার পর বিবিসি প্রকাশ করে, ‘শেখ মুজিব নিহত হলেন তার নিজেরই সেনাবাহিনীর হাতে। অথচ তাকে হত্যা করতে পাকিস্তানিরা সংকোচবোধ করেছে।’
ভারতীয় বেতার ‘আকাশ বাণী’ ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট তাদের সংবাদ পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে বলে, ‘যিশু মারা গেছেন। এখন লক্ষ লক্ষ লোক ক্রস ধারণ করে তাকে স্মরণ করছেন। মূলত একদিন মুজিবই হবেন যিশুর মতো।’

একই দিন লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় বলা হয়, ‘বাংলাদেশের লাখ লাখ লোক শেখ মুজিবের জঘন্য হত্যাকাণ্ডকে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করবে।’
নিউজ উইকে বঙ্গবন্ধুকে ‘পয়েট অব পলিটিক্স’ বলে আখ্যা দেয়া হয়।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর শোকে পাথর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশে আসার জন্য জার্মানির একটি এয়ারপোর্টে তাঁর পাসপোর্টটি ইমিগ্রেশন অফিসারকে দেখালে সেই অফিসার পাসপোর্টটি দেখেই শেখ হাসিনাকে বললেন ‘ছি! তোমরা বাংলাদেশিরা খুব জঘন্য একটি জাতি, যেই মানুষটি তোমাদেরকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন তাঁকেই তোমরা হত্যা করে ফেললে?’

বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর তৎকালীন আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন- ‘আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের মত তেজী এবং গতিশীল নেতা আগামী বিশ বছরের মধ্যে এশিয়া মহাদেশে আর পাওয়া যাবে না।’
উল্লেখ্য, হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে সে সময় তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছিলেন।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস্ উল্লেখ করে, ‘মুজিব না থাকলে বাংলাদেশ কখনই জন্ম নিত না।’