সোমবার, ২০ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ৬ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
অবাক করার মতো তথ্য হলেও এটাই সত্য যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, গণপিটুনি, চোরা শিকারিসহ নানা কারণে সুন্দরবন বাঘ শূন্য হতে চলেছে। আর এ কারণে সংকটে পড়েছে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার। তাই সুন্দরবনে বাঘের আবাসস্থলকে নির্বিঘœ করা না গেলে সংরক্ষণ, প্রজনন প্রক্রিয়া ও প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়ে বিলুপ্তির আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
এদিকে সুন্দরবনে বাঘের অবাধ বিচরণ ও যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব বাধা চিহ্নিত করে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বনবিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা। এ অবস্থায় আজ শনিবার (২৯ জুলাই) পালিত হচ্ছে বিশ্ব বাঘ দিবস।
পৃথিবীতে বাঘ রয়েছে এমন ১৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। কিন্তু সুন্দরবনের বাঘ রক্ষায় যথাযথ পরিকল্পনা ও উদ্যোগ না থাকায় আশঙ্কাজনকভাবে কমছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা।
৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবনে ১৯৮২ সালে বাঘ ছিল ৪৫৩টি। ২০০৪ সালে শুমারি অনুযায়ী তা কমে দাঁড়ায় ৪৪০টিতে। আর সর্বশেষ ২০১৫ সালের জরিপে সুন্দরবনের ভারত অংশে বাড়লেও বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১০৬টিতে।
বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের প্রধান আবাসস্থল সুন্দরবন হলেও জলবায়ু পরিবর্তনে পানি-মাটিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, শিকারী ও দস্যুদের দৌড়ত, অবাধ চলাচলে বাধা সৃষ্টি ও খাদ্য সংকটসহ প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট বেশকিছু কারণে বাঘের বাসযোগ্য পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে। ফলে সুন্দরবনে বাঘের আবাসস্থল, জীবনাচারণ ও প্রজনন প্রক্রিয়ায় নিরাপত্তাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সুন্দরবনের বাঘ রক্ষায় যথাযথ পরিকল্পনা ও উদ্যোগ না থাকায় বেড়েছে বাঘের মৃত্যুর হার।
গত তিন দশকে সুন্দরবন ও সংলগ্ন এলাকায় চোরা শিকারী ও বনদস্যুদের হানা, গণপিটুনি আর প্রাকৃতিক দুর্যোগে ৬৭টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে।
জানতে চাইলে সুন্দরবনে বাঘ গবেষণাকারী সংস্থা ‘ওয়াইল্ড টিম’ এর রিজোনাল ম্যানেজার মো. মাহাবুবুল আলম পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘গত সাড়ে তিন দশকে সুন্দরবন ও এর আশপাশ এলাকায় চোরা শিকারী ও বনদস্যুদের হানা, গণপিটুনি আর প্রাকৃতিক দুর্যোগে ৬৭ বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে তারা সুন্দরবনে বাঘ রক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে বেশি করে কাজ করছেন।’
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট অ্যান্ড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক এ কে ফজলুল হক পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘বাঘ কমে যাওয়ার একমাত্র কারণ চোরা শিকারীর দৌড়ত। চোরা শিকারীরা বাঘ শিকার করছে একটা সহজ আয়ের উৎস হিসেবে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণের অভাব এবং খাদ্য সংকটও সুন্দরবনে বাঘ দিন দিন কমে যাওয়ার কারণ।’
বনবিভাগের খুলনা সার্কেলের বনসংরক্ষক আমির হোসাইন চৌধুরী পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘চোরা শিকারীদের দৌরাত্ম্যে সুন্দরবনের বাঘ কমে যাওয়ার একটা বড় ফ্যাক্টর। তবে এটা থামাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।’ বাঘ রক্ষায় সরকারও নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলেও জানান তিনি।
বাঘের বিচরণ রয়েছে বিশ্বের এমন ১৩টি দেশ- বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, চিন, ভূটান, নেপাল, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, লাউস, ভিয়েতনাম, ভারত ও রাশিয়ায় প্রতিবছর এ দিবসটি পালিত হয়।
১৯৮০ থেকে ২০১২ সালের জুলাই পর্যন্ত ৩২ বছরে সুন্দরবন ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ৬৭ বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে শিকারীদের হাতে মারা গেছে ৩৫ টি। এবং গ্রামবাসী পিটিয়ে মেরেছে ২৯টি।
গত ৩১ বছরের মধ্যে কেবল চলতি শতকের ১২ বছরেই প্রাণ হারিয়েছে ৩২টি বাঘ। এ শতকে সবদিক থেকেই যেখানে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে সেখানে এই সময়ে প্রতি বছর প্রায় তিনটি করে বাঘ প্রাণ হারাচ্ছে। বিপরীতে ব্যাহত হচ্ছে বাঘের স্বাভাবিক বংশবৃদ্ধি।