রবিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৮ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
আবুল বয়ান, ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি:
পত্নীতলা উপজেলার আমাইর ইউনিয়নের সিধাতৈল মৌজা, এটি নওগাঁ জেলার অন্তর্গত। এই মৌজার কিছু অংশের জমি চৈত্র মাসে ফেটে চৌচির হয়। যেকোনো ফসল চাষে কৃষকরাও বেসামাল হয়ে যান। কিন্তু সেখানে বৃক্ষ চারা রোপন করে অসাধ্য সাধন করেছেন ধামইরহাট বনবিট কর্মকর্তা আনিসুর রহমান। মিধাতৈল মৌজার চৌচির মাঠে ২০২১-২২ সনে বৃক্ষ চারা রোপণ করে নজির সৃষ্টি করেছেন এই কর্মকর্তা।
বর্তমানে এই বৃক্ষ চারার উচ্চতা ১৫ থেকে ২০ ফিট, কোনো কোনো জায়গায় আরো বেশি। কিছু কিছু চারা অবিশ্বাস্য রকম মোটা হয়ে নিচের অংশ গাছের মতোই লাগে। বরেন্দ্র অঞ্চলের পরিবেশ সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় ৩০ হেক্টরের ২০ হেক্টর জমিতে বনায়ন সৃজন ও ১০০ জন স্থানীয় উপকারভোগীর সঙ্গে বন বিভাগ চুক্তিবদ্ধ হয়। ১০ বছর মেয়াদি এই বনায়নের মেয়াদ শেষ হলে বিধি মোতাবেক গাছ কর্তন শেষে উপকারভোগীরা পাবেন তাদের লভ্যাংশের অর্থ। এই বনয়নের ফলে পতিত জমি সর্বসাধারণের দখল থেকে যেমন মুক্ত থাকবে, তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে।
অপরদিকে উপকারভোগীরা পাবেন এখান থেকে মোটা অংকের আর্থিক লভ্যাংশ। যা দিয়ে তারা তাদের জীবিকা নির্বাহ ও সংসারের বড় কোনো উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারবেন। একজন উপকারভোগী সদস্য সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, ‘যেখানে বনায়ন করা হয়েছে সেই জমিতে বর্ষাকালে ৮ থেকে ১০ ফুট পানি থাকে এবং খরা মৌসুমে বাগান এলাকায় মাটি ফেটে চৌচির হয়ে থাকে। গাছ রোপনের ফলে পরিবেশের উপকার হয়েছে, উপকারভোগীরা গাছ বিক্রি থেকে টাকা পেলে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়ন করতে পারবে এবং এই জায়গাটি পতিত পড়ে থাকলে বে-দখল হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। চৌচির এই জমিতে গাছ রোপনের ফলে সরকারের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন হচ্ছে।
বনবিট কর্মকর্তা আনিসুর রহমান একজন দক্ষ অফিসার, তাকে পুরস্কৃত করা উচিত।’ তবে রোপিত এই চারা গাছ পরিণত করতে বনবিট কর্মকর্তাকে ব্যাপক পরিশ্রম করতে হয়। একদিকে অতিরিক্ত পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি, আরেক দিকে প্রচ- খরায় গাছ মরার ঝুঁকি। স্থানীয়ভাবে পুরো খরা মৌসুম পানি সেচের ব্যবস্থা করে গাছের শারীরিক বৃদ্ধিতে নিজের শরীরের প্রচন্ড ঘাম ঝরিয়েছেন বন বিট কর্মকর্তা আনিসুর রহমান।
বনায়ন সৃজন সম্পর্কে রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান শাহ বলেন, ‘রাজশাহী বিভাগে বন বিভাগের সরকারি জায়গা অত্যন্ত কম, তাই আমরা সড়ক ও জনপথ, পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভিন্ন দপ্তরের জায়গাতে বিধি মোতাবেক বনায়ন করে উপকারভোগী সৃজন করে থাকি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় গাছ রোপনে একদিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হয় পাশাপাশি সামাজিক বনায়নে উপকারভোগী মনোনীত করার ফলে নির্দিষ্ট সময়ে গাছ কর্তনের লভ্যাংশ পাওয়ায় উপকার ভোগীদের আর্থ- সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক কাজে লাগে।’