বৃহস্পতিবার, ১ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক:
গবেষণা কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিতের ঘটনায় শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এই ঘটনায় লাঞ্ছনার শিকার হওয়া বাংলাদেশের রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারেগপ্রই) উর্ধ্বতন গবেষণা কর্মকর্তা (চ.দা.) সাখাওয়াত হোসেন বাদি হয়ে ছয়জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। সোমবার (২৭ মার্চ) বিকেলে রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া থানায় এই মামলাটি দায়ের করেন তিনি। আসামিরা হলেন, শ্রমিক শামসুল, পলাশ, মালেক, হযরত আলী, কালু।
মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাওয়ার্দী হোসেন। তিনি বলেন, ছয়জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
জানা গেছে, বারেগপ্রই শ্রমিকদের চলতিসহ ৯ মাসে বেতন বকেয়া রয়েছে। এমন অবস্থায় বারেগপ্রই কর্তৃপক্ষ তিনমাসের বেতন দেওয়ার সিদ্ধন্ত নেয়। সেই মোতাবেক সোমবার সকালে বারেগপ্রই উর্ধ্বতন গবেষণা কর্মকর্তা সাখাওয়াত নিজ রুমে বিল তৈরির কাজ করছিলেন। কর্মকর্তা সাখাওয়াতের সাথে তার রুমে বেতনের বিষয়ে কথা বলতে ঢোকেন শ্রমিকরা। কথার এক পর্যায়ে সাখাওয়াত জানায়, আপনাদের তিন মাসের বেতন হবে। তখন শ্রমিকরা জানায়, নয় মাসের বেতন বাকি। আর তিন মাসের বিল কেনো? এসময় সাখাওয়াত শ্রমিকদের জানায়, আপনারা উর্ধ্বেতন কর্তৃপক্ষের কাছে যান। তার নির্দেশেই আমি কাজ করছি। এনিয়ে শ্রমিক ও কর্মকর্তার মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে শ্রমিকরা কর্মকর্তা সাখাওয়াতকে শারীরিভাবে লাঞ্ছিত করে। তার কিছুক্ষণ পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শ্রমিক বলেন, কখন বেতন বিল কর্মকর্তারা করেন না। কিন্তু তারা আমাদের বিল করেছে। আমরা পাব জুলাই মাস থেকে নয় মাসের বেতন। কিন্তু আমাদের দেবে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চে মাসের বেতন। কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন আমাদের বলেন তিন মাসের বেতন করতে বলেছে তাকে। আমরা কথা বলতে গেলে তিনি বলেন- তোমরা আমার রুম থেকে বের হয়ে যাও। শ্রমিকরা তিন মাসের বেতন মেনে নেয় নি। এনিয়ে তক্কাতক্কি হতে হতে এক শ্রমিক তাকে খারাপ ব্যবহার করে।
তিনি আরো বলেন, এতো দিন আমরা ছিলাম দক্ষ শ্রমিক। আমাদের বেতন দেওয়া হতো ৬০০ টাকা। কিন্তু এখন বলছে আমরা অদক্ষ শ্রমিক। আমাদের বেতন ধরা হচ্ছে ৫০০ টাকা। আমরা পরিচালকের সাথে দেখা করতে গেলে পায় না। আমাদের কষ্টের কথা কাকে বলবো, কার কাছে যাব।
এ বিষয়ে গবেষণা কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, তিন মাসের বেকেয়া বেতন দেওয়ার জন্য তাদের (শ্রমিক) বিল করছিলাম। তারা এসে আমাকে বলে তিন মাসের বিল কেনো? নয় মাসের বকেয়া বেতন চায়। একই সাথে ৬০০ টাকার জায়গায় ৫০০ টাকা কেনো। এসময় আমি তাদের (শ্রমিক) বলেছিলাম আপনারা বিষয়টি নিয়ে ডিজি স্যারের সাথে যোগাযোগ করেন। ডিজি স্যার মানবিক কারণে অন্য এক জায়গা থেকে টাকা এনে আপনাদের বেতনের ব্যবস্থা করেছেন। আমাকে যে নির্দেশ দিয়েছে আমি সেটাই পালন করছি। এক কথা, দু’কথা হতে হতে তারা আমার কলার ধরে নেয়।
বারেগপ্রই পরিচালক (গবেষণা ও প্রশিক্ষণ) মোহাম্মদ এমদাদুল বারী বলেন, গবেষণা কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেনের শার্টের কলার ছিড়ে দিয়েছে। তাকে লাঞ্ছিত করেছে। এই ঘটনায় সাখাওয়াত নিজেই বাদি হয়ে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।