রবিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ, ৫ বৈশাখ, ১৪২৮ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক
স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বেসরকারি খাতের উন্নয়নে আর্থিক, নীতি নির্ধারণ ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গঠনে সরকারের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি খাতকে দেশের অর্থনীতির অন্যতম ‘চালিকাশক্তি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। হোটেল রেডিসনে ‘অর্থনীতির নতুন ভাবনা: ২০৩০ ও পরবর্তী বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ সম্মেলন শুরু হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, “এ দেশ আমাদের দেশ। ব্যক্তি এবং গোষ্ঠি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে সবাইকে একসাথে কাজ করে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।” ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সে বিশ্বাস আমার আছে। আমরা পারব। আসুন, আমরা দেশের মানুষের জন্য কাজ করি।”
২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের বিশ্বের ২৯তম এবং ২০৫০ সালের মধ্যে ২৩তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হওয়ার যে সম্ভাবনার কথা যুক্তরাজ্যভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারস তাদের ২০১৫ সালের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, তা প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
“এ লক্ষ্য অর্জনে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিল্পায়ন, বাণিজ্যের প্রসার, রেমিটেন্স বৃদ্ধি, যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা-স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। অংশগ্রহণমূলক উন্নয়নের ধারায় ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বে একটি দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করবে।” দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
২০৪১ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতি এশিয়ার আঞ্চলিক অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, “স্থানীয় সাপ্লাই চেইন এবং গ্লোবাল ভ্যালু চেইন আঞ্চলিক, উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ ও সংযোগ সৃষ্টিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
“আমি বিশ্বাস করি, আমাদের অনুসৃত উন্মুক্ত অর্থনীতি উপ-আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে উইন-উইন অবস্থান তৈরি করে সাফল্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।”
২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ দুই দশমিক পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি এবং মাথাপিছু আয় প্রায় ১২ হাজার ছয়শ ডলারে উন্নীত হবে বলেও নিজের বিশ্বাসের কথা বলেন শেখ হাসিনা।
“একই সঙ্গে আমাদের রপ্তানি আয় সাড়ে ৩০০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করবে এবং দেশিয় বিনিয়োগের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ বর্তমান দুই দশমিক পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ১৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে।” ২০২১ সালের মধ্যে দেশের সব মানুষকে বিদ্যুৎসেবা দেয়া সম্ভব হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
গভীর সমুদ্রবন্দর, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, মেট্রোরেল, আন্তঃদেশীয় রেল প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনাল, কর্ণফুলি নদীর তলদেশে টানেল ও পদ্মাসেতু নির্মাণ এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হলে দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে বলে জানান তিনি।
ডিসিসিআই সভাপতি হোসেন খালেদের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগ করপোরেশনের প্রেসিডেন্ট লিম সিয়ং গুয়ান।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ।
দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবাদান রাখায় ডিসিসিআই ফাউন্ডেশন এবং আনোয়ার গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের হাতে সম্মাননা তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
১৯৭২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে স্বাক্ষাতের স্মারক প্রধানমন্ত্রীকে দেন আনোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে লেখা বই তার হাতে তুলে দেন হোসেন খালিদ।- বিডিনিউজ