বেসরকারি শিক্ষকদের মর্যাদা- জীবন ।। অবসরভাতা অগ্রাধিকার সহজলভ্য হোক

আপডেট: নভেম্বর ১৪, ২০১৬, ১২:০১ পূর্বাহ্ণ

বর্তমান মহাজোট সরকার শিক্ষাখাতকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। শিক্ষাকে জাতীয়করণের লক্ষ্য নিয়ে ২৯ হাজারের বেশি প্রাইমারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করা হয়েছে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (এমপিওভুক্ত) শিক্ষাকদদের বেতনের সরকারি অংশের পুরোটাই দেয়া হচ্ছে।  বর্তমানে এমপিওভুক্ত স্কুল ও কলেজ জাতীয়করণের কাজ পর্যায়ক্রমে হচ্ছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে বিরাজমান সমস্যা সমাধানেও ব্রতী হয়েছেÑ পরিকল্পনা ও কৌশল নির্ধারণ হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ পুনর্গঠনের আন্দোলনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও ডিজিটালাইজড করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে বলা যায় আওয়ালীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার শিক্ষা ক্ষেত্রে এক নতুন জাগরণের সৃষ্টি করেছে। কিন্তু শিক্ষা উন্নয়নের গতি ধীর পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যেমন বলা যায়, শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে, জাতীয়করণকৃত স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের মর্যাদা নির্ধারণে এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবসরভাতা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কালক্ষেপণ ও বিড়ম্বনার বিষয়টির কোনো সুরাহা হচ্ছে না। যেটা শিক্ষান মান ও শিক্ষায় গতিসঞ্চারের ক্ষেত্রে একটা বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা।
বিশেষ করে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষককে অবসরকালীন ভাতা পেতে অনেক সময় তাদের জীবনাবসান হচ্ছে, কিন্তু অবসরভাতা পাওয়া হয়ে উঠছে না। দৈনিক সোনার  দেশে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে- বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর সুবিধাভাতা নিষ্পত্তির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডকে এককালীন ৬শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু বোর্ডের দপ্তরে অবসরপ্রাপ্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রায় ৪০ হাজার আবেদন অনিষ্পত্তি অবস্থায় পরে আছে। যা নিষ্পত্তিতে প্রয়োজন প্রায় ১৮শ’ কোটি টাকা। অন্যদিকে বরাদ্দকৃত ৬শ’ কোটি টাকার ১শ’ কোটি টাকা তাৎক্ষণিক এবং অবশিষ্ট ৫শ’ কোটি টাকা সিডমানি হিসেবে লভ্যাংশ আকারে ব্যয় করার জন্য মন্ত্রণালয় বোর্ডকে নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু বোর্ড বেসরকারি অবসর সুবিধা নিষ্পত্তির জন্য এককালীন নয়, জাতীয় বাজেটে প্রতিবছর ৪শ’ কোটি টাকা করে বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে। বোর্ডের মতে প্রতি মাসে যে সংখ্যক অবসর আবেদন জমা পড়ে ,তা উল্লিখিত পরিমাণ অর্থ দিয়ে নিষ্পত্তি করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন মাসে ৭২ কোটি টাকা। আর এভাবে প্রতি মাসেই অনিষ্পত্তি সম্পন্ন অবসর আবেদন জমতে জমতে বোর্ডের কাছে এখন অনিষ্পত্তি অবস্থায় প্রায় ৪০ হাজার অবসর আবেদন জমা পড়ে আছে।
নিঃসন্দেহে এটি একটি অমানবিক চিত্র। এই চিত্রই বলে দেয় দেশে শিক্ষকদের মর্যাদা ও সম্মানের পরিধি কত ছোট এবং অপমানজনক। এই পরিস্থিতিতে মানসম্মত শিক্ষার কথাটা খুবই বেমানান শোনায়। যারা জীবনভর জ্ঞান বিতরণ করেন, জীবনের শেষ বেলায় প্রাপ্য অর্থটুকু যদি সম্মানের সাথে সহজলভ্যভাবে না পায় তা জাতির ভাবমূর্তির জন্য মোটেও শুভ নয়। বর্তমান সরকারের সদিচ্ছার অভাব হয়ত নেইÑ আবার এ সমস্যাটি যে নতুন তাও নয়। পঁচাত্তর পরবর্তী সরকার ব্যবস্থায় স্বাধীনতার শিক্ষা সূচনার ধারাকে এগিয়ে নেয়ার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত থাকলে আজকের সমস্যা হত না। বর্তমান সরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা নিয়েই এগুচ্ছে কিন্তু বেসরকারি শিক্ষকদের অবসরভাতা সহজলভ্য করার অগ্রাধিকার উদ্যোগ থাকা দরকার। অন্তত অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক যাতে তার মত করেই তার প্রাপ্য অর্থ ব্যবহার করতে পারেন। শিক্ষকের মর্যদা অর্থই জাতির মর্যাদা। সে মর্যাদা আমাদের রাষ্ট্র পর্যায় থেকে শুরু করে ব্যক্তি পর্যায়ে নিশ্চিত করার সংস্কৃতি গড়ে তোলার সময় এসেছে। কেননা এই কাজটি বর্তমান সরকারের পক্ষেই সম্পন্ন করা সম্ভব বলে মনে করি।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ