মাহাবুল ইসলাম:
রবি শস্য উত্তোলনে দেরি হওয়ায় এবার বোরো আবাদের সময়ে কিছুটা নয়ছয় হয়েছে। অধিকাংশ কৃষক এবার দেরিতে বোরো ধান লাগিয়েছিলেন। এরমধ্যে ছিলো তাপদাহের নেতিবাচক প্রভাব। সবমিলিয়ে ছিলো নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। তবে এই উদ্বেগের মধ্যে এবার জেলায় প্রত্যাশার চেয়ে বেশি জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এখন শস্যদানা ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষীরা।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর বলছে, এরইমধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ বোরো আবাদ কৃষকের ঘরে উঠেছে। কৃষি বিভাগ ভালো ফলনের কথা বললেও চাষী পর্যায়ে মিশ্র মত উঠে আসছে।
চাষীরা বলছেন, এবার রবি শস্য ঘরে তুলে বোরো প্রস্তুতি দেরিতে শুরু হয়েছে। প্রতিকূল আবহওয়ার কারণে এবার অনেকেরই বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমন নানা কারণে বোরো ধান রোপণ দেরিতে হয়েছে। আবার বৃষ্টি না হওয়ায় উৎপাদন খরচও বেড়েছে। এ বছর সার ও কীটনাশকের দামও অধিক। সবমিলিয়ে এবার লাভ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন চাষীরা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এক দশকে রাজশাহীর বোরো ধান উৎপাদন ধারাবাহিক বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার আবাদে এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে। চলতি মৌসুমে ৭০ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৭০ মেট্রিক টন চাল। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৮ হাজার ৬০০ হেক্টর জমি, যেখানে উৎপাদন হয়েছিল ৩ লাখ ৩২ হাজার ৪৩৯ মেট্রিক টন চাল। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে ১ হাজার ৫৬০ মেট্রিক টন এবং উৎপাদনে বেড়েছে ১৩ হাজার ৬৩১ মেট্রিক টন। তবে এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৭০ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে।
বোরো চাষে সেচের খরচ অনেক বেশি। বৃষ্টি হলে সেচের খরচ কিছুটা কমে। এ বছর বোরো বীজতলা তৈরির প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু সমস্যা হয়েছে। অগ্রিম বীজতলা যারা করেছিলেন, তাদের মধ্যে অনেকের ধানের চারার মান খারাপ হয়েছে। এছাড়া, এ বছর সার ও কীটনাশকের দাম অধিক। তবুও, ভালো উৎপাদনে চাষিরা আশাবাদী। গোদাগাড়ী উপজেলার বোরো চাষী শফিকুর রহমান জানান, তিনি এ বছর আড়াই বিঘা জমিতে বোরো চাষ করছেন। তার জমি উঁচু হওয়ায় সেচের খরচ বেশি পড়েছে। অন্যান্য খরচও এবার বেশি। আর অসময়ের বৃষ্টিতে পুরো ধান পড়ে গিয়েছিলো। এতে ফলন হানিও হয়েছে। আবার ধানের কালারটাও কাক্সিক্ষত হয় নি।
পবা উপজেলার চাষী আনসার আলী বলেন, তার উঁচু জমি হওয়ায় দু’তিন দিন পরপরই সেচ দিতে হয়েছে। এবার সেচ দিতে গিয়েই অস্বাভাবিক ব্যয় হয়েছে। এখনো ধান জমিতে কয়েক দিন থাকবে। ফলন কাক্সিক্ষত পর্যায়ে হবে না। আবার খুব খারাপ হবে এমনটাও না। তবে লাভের মুখ হয়তো দেখতে পাবো না।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা উম্মে ছালমা বলেন, এখন পর্যন্ত জেলায় প্রায় ৩০ শতাংশ বোরো ধান চাষীরা ঘরে তুলেছেন। এবার বোরো আবাদ ঘরে তুলতে একটু বেশি সময় লাগবে। আর প্রতিকূল আবহওয়ার কারণে ফলন বিপর্যয়ের তেমন কোনো খবর পায় নি। আশা করছি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উৎপাদন হবে।