নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীতে এবছর বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে। কৃষকের মুখে হাঁসি ফুটেছে। অনুকূল পরিবেশ, সময় মতো সার ও কীটনাশক প্রয়োগ এবং নিবিড় পরিচর্যায় কৃষক আশানুরূপ ফলন পেয়েছে। শুধু ফলন নয়, ভালো দামে কৃষক ধান বিক্রি করতে পারছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, এবছর রাজশাহীতে ৭০ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। এবছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিকটন। ৯০ শতাংশ বোরো ধান মাড়ায় হয়ে পাওয়া গেছে ৩ লাখ ১০ হাজার মেট্রিকটন। বাড়ি ১০ শতাংশ বোরো কাটা পড়লে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। আর গত বছর আবাদ হয়েছে ৬৮ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। এবছর প্রতিবিঘায় বোরো ধানের উৎপাদন হয়েছে ২৪ থেকে ২৫ মণ। এছাড়া উপজেলার হাটগুলোতে বিভিন্ন জাতভেদে বিক্রি হচ্ছে প্রতিমণ ৯৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৪৫০ টাকা মণ দরে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাকৃতিক অনুকূল পরিবেশ, সময় মতো সার ও কীটনাশক প্রয়োগ এবং কৃষকের নিবিড় পরিচর্যায় মাঠে মাঠে বোরোর ফলন আশানুরূপ। সোনালি ধানের ৯০ শতাংশ কৃষকের ঘরে উঠেছে। ফলন ভালো হওয়ায় চলতি বছর লক্ষমাত্রা অতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে রয়েছে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা।
বোরো চাষি আজিজুল ইসলাম কালু জানান, এবছর বোরো ধানের মৌসুম গেল। গত বছরের তুলনায় এবছর বিঘায় এক থেকে দেড় মণ বেশি ধানের উৎপাদন হয়েছে। এবছর বৃষ্টিপাত কম হলেও আবহাওয়াগত দিক থেকে ভালো ছিল। তাই ভালো ফলন হয়েছে। তিনি কাটাখালীর হরিয়ান বাজারে প্রতিমণ ধান বিক্রি করেছেন ১ হাজার থেকে ১১শো টাকা মণ দরে।
অন্যদিকে, এবছর রাজশাহী জেলায় বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে। উপজেলাগুলো থেকে বোরো ধানের ফলনের সাথে দাম নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন প্রতিনিধিরা। মোহনপুরে ৮৫ শতাংশ বোরো ধান কাটা পড়েছে। চলছে মাড়াই। প্রতিবিঘা জমিতে ফলন হয়েছে ২৩ থেকে ২৪ মণ। চলতি মৌসুমে মোহনপুর উপজেলায় সাড়ে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে গভীর নলকূপগুলো সচল থাকায় নিয়োমিত সেচকাজ অব্যাহত ছিল। দীর্ঘদিন খরা হলেও বোরোখেতে রোগ ও পোকা মাকড়ের আক্রমণ কম ছিল। ছিল না প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি, কীটনাশক ও সার সংকট। যার কারণে কৃষকরা বোরো ধানে ফলন ভালো পেয়েছে। আগাম জাতের বোরোধান ঘরে উঠে গেছে। শুধুমাত্র আলু তুলে উচ্চফলনশীল জাতের বোরোধান এখনও মাঠে রয়েছে। যা ইদের আগেই কাটা শেষ হবে।
উপজেলার বিষহরা গ্রামের কৃষক সাহেব আলী জানান, জমির ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। মাড়াই কাজ করতে আরো কয়েকদিন দেরি হবে। তবে ধান ভালো হয়েছে। তাই ফলনও ভাল হবে। আশে-পাশের কৃষকের উচ্চ ফলনশীল ব্রি ৭৫ জাতের ধানের প্রতি বিঘায় ফলন হয়েছে ২৮ থেকে ৩০ মণ।
কেশরহাটের ধান ব্যবসায়ী একরামুল হোসেন জানান, বাজারে ধানের আমদানি বেশি। এজন্য হাইব্রিড জাতের ধানের দাম কিছুটা কম হলেও জিরা শাইল ধানের দাম বেশি।
চারঘাট প্রতিনিধি, এবছর চারঘাটে বোরো ধানের ফলন ভালো হওয়ায় খুশি কৃষকরা। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস বলছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৩৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়। যার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২ হাজার ৪৭ মেট্রিক টন ও উৎপাদন ধরা হয়েছিল ২ হাজার ২৪৭ মেট্রিকটন। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে।
চারঘাট ইউনিয়নের কৃষক রেজাউল বলেন, এবার বিঘা প্রতি বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে এমন ফলন হয়নি। এছাড়া এবছর ধানের ভালো দাম পেয়ে কৃষকরা খুশি।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন হাসান বলেন, উপজেলায় ৩৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছিল। ফলনে লক্ষ্যমাত্রা ছড়িয়েছে।
তানোর প্রতিনিধি
তানোরের উপজেলার বড় ধানের হাট মুন্ডুমালা বাজারে নতুন (৭৬ ধান ) ধান বিক্রি হচ্ছে প্রতিমণ ৯৫০ টাকা, ২৮ ধান বিক্রি হচ্ছে প্রতিমণ ৯০০ টাকা, হাইব্রিড ধান ৮৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ বলেন, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে। ধানের ফলনও ভালোই। আলুর জমির নতুন ধান কাটা মুহূর্তে দাম কিছুটা কম হলেও তা বাড়বে। কৃষি বিভাগ কৃষকদের নানাভাবে সহযোগিতা করছে।
দুর্গাপুর প্রতিনিধি
দুর্গাপুর উপজেলার ৬৭ জাতের নতুন ধান বিক্রি হচ্ছে প্রতিমণ ১ হাজার টাকা, ২৮ ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১২০ টাকা, হাইব্রিড ধান ১ হাজার ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলনে খুশি হলেও বাজারমূল্যে খুশি হতে পারছেন দুর্গাপুরের কৃষকরা। তাদের দাবি সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় সেচ দিতে অনেক খরচ বেড়েছে। উচ্চমূল্যে সার কীটনাশকসহ প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণ ও শ্রমিক মূল্যবৃদ্ধিতে এ দামে ধান বিক্রি করে লোকসানের মুখ দেখছেন কৃষক।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে লক্ষমাত্রা ছিল ৪ হাজার ২৯৭ হেক্টর। তবে উৎপাদন হয়েছে ৪ হাজার ৯৯৭ হেক্টর জমিতে। তবে গত বছর লক্ষমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৮৩০ হেক্টর। ফলে এই মৌসমে বোরো লক্ষমাত্রার বেশি উৎপাদন হয়েছে।
দুর্গাপুর উপজেলা খাদ্য বিভাগ বলছে, চলতি মৌসুমে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৭১ মেট্রিকটন। আর গত বছরেরলক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৩৪ মেট্রিকটন। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক গত মৌসুমেও ধান সংগ্রহের চাহিদা থাকলেও খোলা বাজারের সাথে সরকারের নির্ধারিত মূল্য কমবেশি থাকায় কৃষক কোন ধান গোডাউনে দেননি।
দুর্গাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কুন্তলা ঘোষ বলেন, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে। ধানের ফলনও ভালোই।
বাঘা প্রতিনিধি
রাজশাহীর বাঘায় চলতি মৌসুমে বোরো ধান বিঘা প্রতি ২৪ মণ ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে ক্ষেতের ৮০ শতাংশ ধান সংগ্রহ সম্পন্ন হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলার ৯৭৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। বোরো ধান ১ হাজার ৩৫০ জন কৃষকের মধ্যে বিনামূল্যে উন্নত জাতের বীজ ধান ও বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক সার বিতরণ করা হয়। কোনো প্রাকৃতিক প্রতিকুলতা ছাড়াই ইতোমধ্যে ধান সংগ্রহ প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। উৎপাদিত ধানের মধ্যে প্রতি বিঘা ২৪ থেকে ২৫ মণ ফলন হয়েছে।
চন্ডিপুর গ্রামের কৃষক এনামুল হক বলেন, আমি তিন বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছি। আমার বিঘা প্রতি ফলন হয়েছে ২৪ মণ। আমাকে সরকারিভাবে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছিল।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লা সুলতান বলেন, বোরো ধান চাষের শুরুতে কৃষকদের মাঝে প্রণোদনা হিসেবে সার বীজ ও অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
বাগমারা প্রতিনিধি,
বাগমারা বোরো ধানের উৎপাদন ভাল হয়েছে। একই সাথে ভালো দাম পাচ্ছে কৃষকরা। উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, মৌসূমে উপজেলায় ১৭ হাজার ৯৬৮ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ হয়েছিল। গত ১৮ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে বোরোর চাষাবাদ হলেও চলতি মৌসুমে কমেছে প্রায় সাড়ে পাঁচশ হেক্টরে চাষাবাদ। তবে চলতি মৌসুমে মাঠ পর্যায়ে ৯৫ শতাংশ ধান কৃষকের ঘরে উঠেছে।
হামিরকুৎসা ইউনিয়নের আলোকনগর (নামোপাড়া) গ্রামের কৃষক সাজেদুর রহমান জানান, বর্গা নিয়ে এক বিঘা জমিতে খাটো-১০ জাতের ধান চাষ করে ২৪ থেকে ২৫ মণ ধান উৎপাদন হয়েছে। সেখান থেকে সেচ বাবদ চার ভাগের এক ভাগ ধাণ নলকুপ মালিককে দিতে হয়েছে। এছাড়াও জমি চাষ থেকে শুরু করে ধান কর্তন পর্যন্ত সার, ওষুধ প্রয়োগ ও শ্রমিক খরচ বাবদ বারো থেকে তেরো হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমান ধানের দর ১ হাজার ১৭০ থেকে ১২০০ টাকা প্রতিমণ।
কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান ও উজ্জ¦ল হোসেন জানান, তারা সুবর্ন লতা, ৮৯, ৭৫ ও খাটো ১০ জাতের ধানের চাষাবাদ করেন। উৎপাদন ভাল হলেও বাজারে দাম কম রয়েছে। তারা ধান কিনে দেশের বিভিন্ন অটো মিলে সরবরাহ করে থাকেন। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বিভিন্ন জাতের ধানের দাম মণ প্রতি দুই থেকে পঞ্চাশ টাকা কমেছে।
অপর আড়ৎদার সমশের আলী বলেন, খাটো ১০ ধান, সবুজ লতা, পচাত্তর, আঠাশ, জিরা, হিরা-২, সুবর্ণ লতাসহ বিভিন্ন জাতের ধান কেনা হচ্ছে। দুই সপ্তা আগে খাটো-১০ ধান বিক্রি হয়েছে প্রতিমণ ১ হাজার ২৩০ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১৭০ টাকা, হিরা-২ ধান প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১২০ টাকা, আঠাশ ধান ১ হাজার ২২০ থেকে কমে কেনাবেচা হচ্ছে ১ হাজার ১৮০ টাকা দরে, জিরা ১ হাজার ২৫০ টাকা মণ দরে কেনা বেচা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বোরো মৌসূমে বাগমারায় ধানের ফলন সন্তোষ জনক হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধান চাষীরা উৎপাদিত ধান সুন্দর ভাবে কর্তন করতে পেরেছে। বাজার ব্যবস্থা ভাল থাকলে তারা লাভবান হবে।
এ বিষয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোছা. উম্মে ছালমা বলেন, এবছর রাজশাহীতে ৭০ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। এবছর বাম্পার ফলন হয়েছে বোরো ধানে। ইতোমধ্যে ৯০ শতাংশ ধান কৃষকের ঘরে উঠে গেছে। বাকি ১০ শতাংশ ধান পাকা ও কাটার পর্যায়ে রয়েছে। এবছর ধানের দাম ভালো আছে। কৃষকরা ধানের দামে খুশি।