শনিবার, ১০ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২৭ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে বোমা ফাটালেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। হাথুরুসিংহে নয়, তার সিদ্ধান্তেই শততম টেস্ট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে।
বুধবার পি সারা স্টেডিয়ামে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘মাহমুদউল্লাহকে বাদ দেওয়াতে হাথুরুর কোনও ভূমিকা নেই। প্রত্যেকটা সিদ্ধান্ত আমার। এখানে হাথুরুর কথা কেন আসে আমি তা বুঝি না। এই যে মাহমুদউল্লাহ টেস্টে খেলবে না এটাতো আমার সিদ্ধান্ত।’
ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদউল্লাহকে ফর্মহীনতার কারণেই বাদ দেওয়া হয়েছে বলে জানান পাপন। পাপন এটাও উল্লেখ করেন এই টেস্টে বাদ পড়া মানে তাকে তার স্থান ছেড়ে দেওয়া নয়। মাহমুদউল্লাহ, সাকিব, তামিম, মুশফিক বাংলাদেশ দলের অপরিহার্য খেলোয়াড়। তাদেরকে হঠাৎ করে তো আর বাদ দেওয়া যায় না।’
বুধবার পি সারা ওভালে বাংলাদেশের শততম ম্যাচ দেখতে মাঠে উপস্থিত ছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। সেখানেই মাহমুদউল্লাহর ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি জানান বোর্ড সভাপতি।
মাহমুদউল্লাহ বাদ পড়ায় দলের সিনিয়র খেলোয়ারদের মধ্যে কিছুটা হলেও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। যদিও প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলছেন না। মুশফিকও চুপ হয়ে আছেন। এক কথায় জানাচ্ছেন, ‘দলের ভালোর জন্যই সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ কিন্তু ক্ষোভটা ভেতরে ভেতরে থেকেই যাচ্ছে! মাহমুদউল্লাহও মন খারাপ করে হোটেল রুমে বসে আছেন। এই অবস্থায় দলে নেতিবাচক কোনও প্রভাব পড়লে মাহমুদউল্লাহকে দলে দরকার নেই বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান পাপন, ‘যে কেউ যে কোনো ম্যাচ থেকে বাদ পরতে পারে। এ বাদ পরা নিয়ে যদি তার খানিকের জন্য মন খারাপ হয়; হতেই পারে। কিন্তু এটা যদি দলে প্রভাব ফেলে। তার শুধু সিরিজেই না, বাংলাদেশ দলে থাকারই কোনও সুযোগ নেই। এমন কোনও খেলোয়াড় আমার দলে প্রয়োজন নেই।’
তিনি আরও যোগ করেছেন, ‘আমি মনে করি একজন সিনিয়র খেলোয়াড় হিসেবে তার জায়গায় যেই আসুক তাকে উৎসাহ দেওয়া দরকার ছিল। যেন নতুন ছেলেরা আরও ভালো খেলতে পারে। এখানে দেশেরও ব্যাপার জড়িত!’
পাপনের এমন বক্তব্যের পর এটাই স্পষ্ট মাহমুদউল্লাহকে যে কোনও কারণেই হোক সহ্য হচ্ছে না বোর্ড সভাপতির! সব মিলিয়ে টিম বাংলাদেশে অশান্তি বিরাজ করছে। সূত্র মতে জানা গেছে চলতি বছরে ‘বিশেষ’ একটি ক্লাবে নাম লেখানোতেই তার ওপর চটেছেন বোর্ড সভাপতি!
ঢাকায় স্থানীয় একটি সংবাদ মাধ্যমে মাশরাফি জানিয়েছিলেন সীমিত ওভারের ক্রিকেটে এখনো মাহমুদউল্লাহকে প্রয়োজন। তিনি নিজেই বলেছিলেন ওয়ানডেতে মাহমুদউল্লাহর প্রয়োজনীয়তার কথা। মাশরাফি মাহমুদউল্লাহর কথা উল্লেখ করে বোর্ড সভাপতিকে ফোন করেছিলেন। তার প্রেক্ষিতেই ওয়ানডে দলে স্থান মিলেছে মাহমুদউল্লাহর। কোচ ও ম্যানেজার দুইজনের কেউই মাহমুদউল্লাহকে ওয়ানডে দলে চাচ্ছিলেন না!
ঢাকার সংবাদ সম্মেলনে পাপন অবশ্য সরাসরিই বলেছিলেন মাহমুদউল্লাহ ওয়ানডে দলে থাকবেন। ওই দিনই সন্ধ্যায় ওয়ানডে দল ঘোষণা হলে দেখা যায় ১৬ সদস্যের স্কোয়াডে আছেন মাহমুদউল্লাহ! বুধবার নাজমুল হাসান পাপনের বক্তব্যের পর অবস্থা যা, তাতে করে মাহমুদউল্লাহর ওয়ানডে একাদশে থাকাটা বেশ কঠিনই হবে। যদিও বা থাকেন তাহলে এই পাহাড়সম চাপ সামনে নিয়ে পারফরম্যান্স করাটাও বেশ কঠিন আকার ধারণ করবে, ‘দল নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। সেখানে তাকে রেখে দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। আমরা চেয়েছি পরিবর্তন।’ বোর্ড সভাপতির এমন বক্তব্য নিশ্চয়ই মাহমুদউল্লাহর চাপটা আরও বাড়িয়ে দেবে।
কলম্বোর বাতাসে মাহমুদউল্লাহর বাদ পড়া নিয়ে হাথুরুসিংহে ও ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজনের নাম ভাসছে। কিন্তু বোর্ড সভাপতি এটা কিছুই মানতে চাইছেন না। তার সাফ কথা মাহমুদউল্লাহ বাদ পড়াতে কোচের কোনও ভূমিকা নেই, ‘আমার কাছে হাথুরু কখনো কিছু পাঠায় না। লিস্ট যা পাঠায় নির্বাচকরা পাঠায়। আমি জানি না আপনারা কেন এখানে বারবার হাথুরুকে আনেন। এর কোন কারণ খুঁজে পাই না।’
লিটন ইনজুরিতে না পড়লে একাদশে আরও বড় পরিবর্তন আসতো। বিষয়টি পরিঙ্কার হওয়া যায়নি। তবে লিটন ইনজুরিতে পড়ায় বড় কোন পরিবর্তন করতে হয়নি বলে জানালেন বোর্ড সভাপতি, ‘আমরা এখানে আরও অনেক বড় পরিবর্তন করতে চেয়েছিলাম। আপনারা যা জানতেন তার চেয়ে আরও বেশি পরিবর্তনও হতে পারতো। আমি যার জন্য এখানে এসেছি। লিটন দাস ইনজুরিতে পরে যাওয়ার কারণে পরিবর্তনটা লাগেনি। আমি চাইছি দলে বড় পরিবর্তন।’
ওয়ানডে দলে থাকার পরও মাহমুদউল্লাহ চলে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু বোর্ড থেকে অনুমতি না পাওয়াতে আর যেতে পারেনি, ‘ওকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তুমি থাকতে চাও? সে বলেছে আমি চলে যেতে চাই। আমার বাচ্চার সঙ্গে দুই দিন থাকতে চাই। আমরা কিন্তু কিছুই বলিনি ওকে…।’-বাংলা ট্রিবিউন