রবিবার, ২৬ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১২ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
মো. আবদুল কুদ্দুস
অনেক বছর আগেই আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘যুগবাণী’ প্রবন্ধ গ্রন্থের ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ শীর্ষক প্রবন্ধে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও এতে কর্মরত মানুষের চরিত্রের বর্ণনা দিয়েছেন। প্রয়োজনের তাগিদে আমি বাঙালি জাতির কাছে আবার তা তুলে ধরছি। যেহেতু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দুটোই আমাদের দেশের জাতীয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাই আমি এই প্রবন্ধ হতে কিছু কথা খ- খ- করে অনুলিখন করছি। ‘…জাতীয় জিনিস লইয়া জাতির প্রত্যেকেরই ভালো-মন্দ বিচার করিয়া দেখিবার অধিকার আছে। তাহা ছাড়া, ‘মুনিনাঞ্চ মতিভ্রম’, ভুল সকলেরই হয় ; নিজের ভুল নিজে দেখিতে পাওয়া যায় না। অতএব আমাদের জাতীয় বিদ্যালয়ের যে ভুল আমাদের চোখে পড়িবে, তাহা আমাদের শোধরাইয়া লইতে হইবে। প্রথম কোনো বড় কাজ করিতে গেলে অনেক রকম ভ্রম-প্রমাদ হওয়া স্বাভাবিক জানি, এবং তাহাকে ক্ষমা করিতেও পারা যায়-যদি জানি যে তাঁহারা জানিয়া ভুল করিতেছেন না। কিন্তু যদি দেখি যে এইসব হোমযজ্ঞের হোতারা জানিয়-শুনিয়া ভুল করিতেছেন বা জাতীয়-শিক্ষা-রূপ পবিত্র জিনিসের নামেও নিজ-নিজ স্বার্থসিদ্ধির পথ খুঁজিতেছেন, তাহা হইলে হাজার অপ্রিয় হইলেও আমাদিগকে তাহা লইয়া আলোচনা করিতে হইবে। পবিত্র কোনো জিনিসে কীট প্রবেশ করিতে দেখিয়া চুপ করিয়া থাকাও অপরাধ…।
মঙ্গল-উৎসবে মিথ্যার অমঙ্গল কিছুতেই প্রবেশ করিতে দিব না। আমরা অন্তর হইতে বলিতেছি, সত্যকে এড়াইয়া চলিও না, ইচ্ছা করিয়া বা স্বার্থান্ধ হইয়া এমন মহৎ অনাবিল অনবদ্য জিনিসকে পঙ্কিল-কলঙ্কিত করিও না,-যদি বুঝি তুমি বুঝিবার দোষে তাহা করিতেছ ; ভন্ডামি করিতেছ না, তবে তোমায় প্রাণ হইতে দেশবাসী ক্ষমা করিবে, ¯েœহের দাবি লইয়া তোমার ভুল শোধরাইয়া দিবে, এবং তোমার গায়ে কাঁটাটিও ফুটিতে দিবে না। যে সত্যিকারের ত্যাগী তাঁহার পায়ে কাঁটা ফুটিলে আমরা দাঁত দিয়ে তুলিয়া দিতে রাজি আছি। দোষ রাজতন্ত্রের নয়, দোষ আমাদেরই। আমরাই নিত্য-নিতুই মঙ্গলের নামে দেশের নামে নিজের স্বার্থ বাগাইয়া তো লইতেছি। এই ভন্ডামি আর মোনাফেকিই তো সর্বনাশের মূল। প্রথমে আমাদিগকে মানুষ হইতে হবে, স্বার্থের মায়া ত্যাগ করিয়া সত্যকে বড় করিয়া দেখিতে শিখিতে হইবে, তাহার পর যেন বড় কাজে হাত দিই…।
তাহা ছাড়া, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলাম কি? স্ট্যান্ডার্ডেরই বা কোনো একটা নিয়ম-কানুন বা প্রোগ্রাম আদি আছে কি? হইবে কখন? সকলেই তো দেখি বসিয়া বসিয়া মাছি মারিতেছেন…। তোমার মন্ত্রে যদি ভূত না ছাড়ে, তবে সে তোমার দোষ বা ক্ষমতার অভাব, তাহা মন্ত্রের দোষ নয়। নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা বলিয়া আক্ষেপ করা-ধৃষ্টতা আর বোকামী মাত্র। আমরা চাই, আমাদের শিক্ষা-পদ্ধতি এমন হউক, যাহা আমাদের জীবন-শক্তিকে ক্রমেই সজাগ, জীবন্ত করিয়া তুলিবে। যে-শিক্ষা ছেলেদের দেহ-মন দুইকেই পুষ্ট করে, তাহাই হইবে আমাদের শিক্ষা…।
মাত্র কয়েক মাস আগে (১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭) ঢাকা মহানগরীর সাতটি সুনামধন্য কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে বের করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছে। কলেজগুলো হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেছা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এসব কলেজে ¯œাতক ও ¯œাতকোত্তর পর্যায়ে ১ লাখ ৬৭ হাজার ২৩৬ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। এই খবর শুনে সেদিন ওই সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে আনন্দ মিষ্টি বিতরণও করেছিলো। অথচ ছয় মাস অতিবাহিত না হতেই এমাসের ২০ তারিখে এসব কলেজের শিক্ষার্থীদেরকে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণাসহ বিভিন্ন দাবি আদায়ের জন্য রাজপথে আন্দোলনে নামতে হয়েছে। শুধু তাই নয় সেদিন শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশের টিয়ারশেলে তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নিরস্ত্র নিরীহ সিদ্দিকুর রহমানের দুই চোখের আলো নিভে গেছে। আহত হয়েছে অনেক শিক্ষার্থী। বারোশো শিক্ষার্থীর নামে মামলা হয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের অদূরদর্শিতার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সাথে সাথে অনুরোধ জনাই, প্রিয় দেশবাসী দেশের প্রতিটি মানুষের কষ্ট-দুঃখ, পাওয়া না পাওয়ার বেদনা শুধু দেশরতœ শেখ হাসিনার দুটো চোখে নয়! কেননা অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া দেশের মানুষের সমস্যা দেখবার কেউ নেই। সার্বিক পরিস্থিতি এমন যে, গণমাধ্যম ও শেখ হাসিনাই দেশের মানুষের অভিভাবক। আর কারো কোনো দায়িত্ব নেই। এভাবে আর কতোদিন চলবে। দেশের প্রতিটি মানুষকে নিজেই নিজের দুটি চোখকে ষোল কোটি বাঙালির বত্রিশ কোটি চোখে রূপান্তর করে সেই অনুভূতিতে অপরের স্বার্থকে দেখতে হবে। যেকোনো সমস্যা সৃষ্টির আগেই সমাধানমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। আসুন সিদ্দিকুর রহমানের চিকিৎসার্থে সবাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই। বাংলাদেশ হোক সর্বস্তরের মানুষের জন্য শান্তির আবাসস্থল।
লেখক: শিক্ষক, বিজনেস স্টাডিজ বিভাগ ও সহকারী প্রক্টর, নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, রাজশাহী
ংযুধসড়ষঁরঃং@মসধরষ.পড়স