ব্যবস্থাপত্র স্পষ্ট করতে আদালতের রুল ।। রোগির স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে

আপডেট: জানুয়ারি ১১, ২০১৭, ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রোগিদের বিড়ম্বনার অনেক কারণের মধ্যে একটি হলো চিকিৎসকদের দেয়া ব্যবস্থাপত্র। কেননা এটি চিকিৎসকেরা স্পষ্ট করে লিখেন না। ফলে রোগি যদি লেখাপড়া জানা মানুষও হন অনেক ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপত্রের মর্মার্থ উদ্ধারে ব্যর্থ হন। তদুপরি যারা ফার্মেসি পরিচালনা করেন তারা প্রশিক্ষিত হলেও ব্যবস্থাপত্রের পাঠোদ্ধার করতে না পেরে রোগিকে কিংবা রোগির বাহককে অন্য ওষুধ দেয়। আপাতভাবে বিষয়টি খুব সহজবোধ্য হলেও এর মধ্যে ভয়ঙ্কর আলামত রয়েছে। আর সেটি হলো ফার্মেসি ভুল ওষুধ সরবরাহ দিলে রোগির মৃত্যুর কারণও হতে পারে। এমন দুর্ঘটনা ও বিড়ম্বনার খবর মাঝেমধ্যেই সংবাদ মাধ্যমে আসে। আর অন্য যে কারণটি রয়েছে তা হলো- ব্যবস্থাপত্র স্পষ্টভাবে এবং যথাযথভাবে না দেয়ার  পেছনে বড় ধরনের অনৈতিক বাণিজ্যও রয়েছে।
সেই বিষয়টির ওপরেই দেশের উচ্চ আদালত একটি রুল জারি করেছেন। আদালত ‘স্পষ্ট অক্ষরে ‘পড়ার উপযোগী করে’ চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র লেখার নির্দেশনা দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ৩০ দিনের মধ্যে সার্কুলার জারির নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে রোগির ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের জেনেরিক নাম লিখতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি হয়েছে। স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সাত বিবাদীকে চার সপ্তাহের মধ্যে এর জবাব দিতে হবে। এক রিট আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার এই আদেশ দেয়। এতসংক্রান্ত প্রতিবেদন দৈনিক সোনার দেশসহ বিভিন্  সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, অনেক চিকিৎসক ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নেয়ার বিনিময়ে ব্যবস্থাপত্রে ওই নির্দিষ্ট কোম্পানির তৈরি ওষুধের নাম লেখেন। এতে করে রোগিরা কখনও বেশি দামে আবার কখনও মানসম্মত নয়- এমন ওষুধ কিনতে বাধ্য হন।
অত্যন্ত অনুতাপের বিষয় যে, এমন অনেক চিকিৎসক রয়েছেন যারা রোগিদের সাথে ভাল আচরণ করেন না, সময় দেন না। এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা নেই এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। রোগিদের সঠিকভাবে কেসস্টাডিও করা হয় না। অনেক সময় জটিল রোগিকে দুতিন মিনেটের মধ্যে একটা ব্যবস্থাপত্র তড়িঘড়ি করে লিখে হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়। তার সাথে দেয়া নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। অনেক সময় বাণিজ্যের কথা মাথায় রেখে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষাও রোগিদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়। চিকিৎসকদের এই মনোবৃত্তি না বদলালে চিকিৎসাসেবায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। স্পষ্ট করে ব্যবস্থাপত্র লিখেতেও সময় লাগে। কিন্তু চিকিৎসকের লক্ষ্য থাকে কতদ্রুত আরেকজন রোগিকে কল করা যায়। এখানে টাকা আয়ের উদগ্র বাসনাই বা প্রতিযোগিতাই কাজ করে, চিকিৎসাসেবা দেয়া নয়। ফলে রোগি সর্বক্ষেত্রেই এক ধরনের প্রতারণার শিকার হয়। নিশ্চিতভাবেই স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে এর একটি বিহিত হওয়া খুবই বাঞ্ছনীয়। উচ্চ আদালতের রায় খুবই প্রণিধানযোগ্য। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন সেটা নিশ্চিত করবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা। একইসাথে আমরা চাই, চিকিৎসকদের ফি নির্ধারিত হওয়ার সাথে সাথে একজন চিকিৎসক দিনে কতটা রোগি দেখতে পারবেন সেটারও একটা সীমারেখা থাকা উচিৎ। সঠিক চিকিৎসা পাওয়া রোগির অধিকার যেমন, তেমনি চিকিৎসকের জন্য সঠিক চিকিৎসা করাটাই তার অধিকার হওয়া উচিৎ। এর অন্যথা মানেই মানুষের ওপর নিপীড়ন করা।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ